উদ্বোধনের প্রায় আট বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও কোচবিহারের রসিকবিল পর্যটন কেন্দ্র চত্বরের সংগ্রহশালায় তালা ঝুলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে তৈরি ওই সংগ্রহশালায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সামগ্রী। তালিকায় পাটি, শোলা, কাঠের নানা হস্তশিল্পের পাশাপাশি রয়েছে একাধিক জনজাতির কৃষ্টির নিদর্শন। বিষয়টি নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, বাম আমলে সংগ্রহশালাটি তৈরি হয়। সে সময় ঘটা করে উদ্বোধন করা হলেও কিছু দিনের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। তৃণমূল জমানাতেও সংগ্রহশালাটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
ঘটনার দায় নিয়ে দুই শিবিরের চাপানউতোর চলছে। অথচ কবে সেটির তালা খুলবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কোনও মহল থেকেই কিছু বলা হচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে ক্ষোভ আরও বাড়ছে। তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের বক্সিরহাট ব্লক কার্যকরী সভাপতি স্বপন সাহা বলেন, “সংগ্রহশালাটি চালু রাখা নিয়ে বামেদের সঠিক পরিকল্পনা ছিল না। তাই সংগ্রহশালাটি উদ্বোধনের কিছু দিন পরেই বন্ধ হয়ে যায়। আমরা পঞ্চায়েত সমিতির দায়িত্ব নেওয়ার পর চালু করার চেষ্টা করছি। সেখানে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়েছে। সংস্কারের জন্য ১০ লক্ষ টাকার পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে। মাস তিনেকের মধ্যে সেটি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে।”
সিপিএমের বক্সিরহাট জোনাল সম্পাদক ধনঞ্জয় রাভা বলেন, “পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে সংগ্রহশালাটি চালু হয়েছিল। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতি আমাদের হাতছাড়া হয়। তার পর থেকে সেটি বন্ধ। এত দিন ধরে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির দায়িত্বে থাকলেও সংগ্রহশালাটির দরজা খোলেনি। ব্যর্থতা ঢাকতে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানান, বাম আমলে তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে রসিকবিল এলাকায় পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে সংগ্রহশালাটি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। সে সময়ের আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের বাম সাংসদ জোয়াকিম বাকলা ২০০৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন করেন। বাঁশের তৈরি কোচবিহার রাজবাড়ি, কাঠের গণেশ মূর্তি, শোলার মাশান মূর্তি, পাটির হাতিমূর্তি, মুগা রেশমের নানা শিল্পকর্ম দিয়ে শোকেস সাজান হয়। বন দফতরের নানা সামগ্রীও সেখানে রাখা হয়েছিল। এলাকার আদিবাসী জনজাতির বাসিন্দাদের থেকে সংগৃহীত হরিণের মত বন্যপ্রাণীর শিং ছিল অন্যতম আকর্ষণ।
নানা জনজাতির ব্যবহার্য উপকরণের ডালি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার বন্দোবস্তও ছিল। দেওয়াল জুড়ে এক দিকে বসানো হয়েছিল বিশেষ ধরনের কাচের কারুকাজ। যেখানে উত্তল, অবতল লেন্সের মাধ্যমে নানা চেহারায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখার টান এড়াতে পারতেন না পর্যটকেরা। দীর্ঘ দিন ধরে তালাবন্ধ ওই সংগ্রহশালা থেকে বন দফতর অনেক আগেই তাদের সামগ্রী সরিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তল-অবতল লেন্স ভেঙে প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। ধুলোর স্তূপে ঢাকা অন্যান্য সামগ্রীও জলুস হারিয়ে প্রায় নষ্টের মুখে। পর্যটকেরা তা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা জানান, সংগ্রহশালাটি তালা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকায় পর্যটকেরা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাতেও লাভ হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy