Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
কাঠগড়ায় সেই রক্ষণাবেক্ষণ, পরিদর্শনে ডিআরএম

এ বার টয় ট্রেন পৌঁছল রাত একটায়

কোনও দিন ইঞ্জিন বিগড়ে মাঝপথে থেমে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখনও রেকের ব্রেক খুলে দাঁডিয়ে পড়ছে। কখনও বা ইঞ্জিনের অভাবে প্রতিদিনের পরিবর্তে সপ্তাহে তিনদিন চালাতে হচ্ছে। তারপরেও টয় ট্রেন চলাচলে বিভ্রাট যেন কাটতেই চাইছে না।

দার্জিলিং স্টেশনে টয় ট্রেন। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।

দার্জিলিং স্টেশনে টয় ট্রেন। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০২:১৩
Share: Save:

কোনও দিন ইঞ্জিন বিগড়ে মাঝপথে থেমে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখনও রেকের ব্রেক খুলে দাঁডিয়ে পড়ছে। কখনও বা ইঞ্জিনের অভাবে প্রতিদিনের পরিবর্তে সপ্তাহে তিনদিন চালাতে হচ্ছে। তারপরেও টয় ট্রেন চলাচলে বিভ্রাট যেন কাটতেই চাইছে না।

গত বৃহস্পতিবার দার্জিলিং থেকে ফেরার টয়ট্রেন শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনে ঢুকেছে মাঝরাত পার করে। শুক্রবারও টয়ট্রেন দার্জিলিঙে পৌঁছেছে নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পরে। গত মঙ্গলবার কার্শিয়াং লাগোয়া এলাকায় টয়ট্রেনের চাকা লাইন থেকে খানিকটা সরে গিয়ে আটকে যায়। সামনে রেলসেতু থাকায় বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল ‘ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ টয় ট্রেন। তারপরের দিন প্যাসেঞ্জার স্পেশাল ট্রেন চলাচলও বন্ধ ছিল। এরপরে গত বৃহস্পতিবার দার্জিলিং থেকে টয়ট্রেন ছাড়তেই ফের বিপত্তি। মাঝপথে অন্তত তিন বার টয় ট্রেনের ইঞ্জিন বিগড়ে যায় বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির কাছে তিনধারিয়া পৌঁছে শেষবার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় ইঞ্জিন মেরামত সম্ভব হয়। ততক্ষণে অবশ্য যাত্রীদের অধিকাংশই গাড়ি ভাড়া করে শিলিগুড়ি ফিরতে বাধ্য হন। ইঞ্জিন মেরামত হওয়ার পরে শিলিগুড়ি জংশনে টয়ট্রেন পৌঁছয় রাত বারোটার পরে। শিলিগুড়ি জংশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পৌঁছতে রাত ১টা বেজে যায়। নজিরবিহীন এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে পর্যটকদের মধ্যে। বারবার বিভ্রাট এবং ত্রুটির অভিযোগে ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

টয়ট্রেনের চলাচল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ (ডিএইচআর)। বারবার এই বিপত্তির জেরে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের অধীনে থাকা ডিএইচআরের আধিকারিকদের কাছে টয়ট্রেনের রক্ষমাবেক্ষণ নিয়ে রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে বলে দফতর সূত্রে খবর। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার বিভাগের ডিআরএম উমাশঙ্কর সিংহ যাদব শুক্রবার নিজেই টয় ট্রেনের লাইন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি নিজে ট্রেনের কামরায় উঠে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। ডিআরএম বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিক্ষিপ্ত কারণে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সবরকম পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

তবে বিপত্তি শুধু গত কয়েকদিনের ঘটনা নয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহের সোমবার এবং শুক্রবারও নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়া টয়ট্রেন দার্জিলিঙে পৌঁছেছে নির্ধারিত সময়ের চার ঘণ্টা পরে। তার আগের সপ্তাহেই কার্শিয়াং থেকে ছাড়া টয় ট্রেন মহানদীতে স্টেশন লাগোয়া নির্জন এলাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল। বিকেল থেকে সন্ধে গড়িয়ে যাওয়ায় পর্যটকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও রেলের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ফিরতে হওয়ায় রেলকর্মীদের একাংশও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।

কেন এমন বিভ্রাট? ডিএইচ আর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের কাছে চারটি ডিজেল ইঞ্জিন রয়েছে। চলতি বছরের গোড়ার দিকে তার মধ্যে দু’টি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। তার জেরেই সপ্তাহে রোজ ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে ডিএইচআরের তরফে ঘোষণা করা হয়। তিন মাসের মধ্যে ইঞ্জিন মেরামতি করা সম্ভব হবে বলে দাবি করা হলেও, প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। টয় ট্রেনে ব্যবহার হওয়া বেশিরভাগ কামরাও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিটি কামরায় চাকায় ব্রেক ভালভ রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশিরভাগ রেকের ব্রেক ‘জ্যাম’ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সে কারণেই মাঝপথে ব্রেক আটকে ট্রেন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বলে কর্মীদের একাংশের দাবি। গত মঙ্গলবারও রেকের ত্রুটির কারণেই টয়ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বলে প্রাথমিকভাবে রেলের তরফে জানানো হয়েছে। বারবার অভিযোগ উঠলেও পরিস্থিতি যে বদলায়নি গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ট্রেনের স্টেশনে ফেরাই তার প্রমাণ বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

অথচ এত কাণ্ডের পরেও ট্রেনে যাত্রীর অভাব নেই। সংরক্ষিত টিকিট পেতে চাইলে মাসখানেক অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে বহু চেষ্টা-অপেক্ষার পরে টিকিট হাতে ট্রেন চাপলেও, যাত্রাপথেই ছড়িয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। ট্রেন কখন গন্তব্যে পৌঁছবে, আদৌও পৌঁছবে, নাকি মাঝপথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে থাকবে তা নিয়েই সংশয়। গত বৃহস্পতিবার ট্রেনে চেপে দুর্ভোগে পড়া দিল্লির বাসিন্দা অনন্ত চৌহান বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই টয়ট্রেনের গল্প শুনেছি। এরআগে দার্জিলিঙে এলেও টয়ট্রেনে চাপা হয়নি। এবার শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার টিকিট না পেলেও ফেরার টিকিট পেয়েছিলাম। বারবার ট্রেন থেমে যাওয়ায় বিরক্ত লাগছিল। তিনধারিয়ায় অন্ধকারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন থেমে থাকে। বাধ্য হয়ে মোটা টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে।’’ তাই পর্যটকদের দাবি, টয় ট্রেনে দুর্ভোগের আশঙ্কা দূর করতে ব্যবস্থা নিক কর্তৃপক্ষ। ফিরে আসুক পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে চলার রোমাঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

toy train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE