Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

লিচু গাছ থেকে আতঙ্ক, প্রচার মালদহ জুড়েই

মুকুল ভরা লিচু গাছ দেখে এখন আর ফলনের স্বপ্ন নয়, বরং আতঙ্ক তাড়া করে ওঁদের। ওঁরা মালদহের কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগরের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

মুকুল ভরা লিচু গাছ দেখে এখন আর ফলনের স্বপ্ন নয়, বরং আতঙ্ক তাড়া করে ওঁদের। ওঁরা মালদহের কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগরের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। বছর তিনেক আগে প্রথম লিচুর মরসুমেই শিশুদের মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছিল এই এলাকায়। গত মরসুমেও মারা যায় একাধিক শিশুর।

প্রথমে মৃত্যুর কারণ জানতে হিমসিম খেয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শুরু হয় তদন্ত। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, কাঁচা লিচুতে থাকা হাইপোগ্লোসেমিক এর জন্য দায়ী। এটি শরীরে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। আক্রান্ত শিশুরা খালি পেটে কাঁচা লিচু খেয়ে ফেলায় শরীরে শর্করার পরিমান কমে গিয়ে অচৈতন্য হয়ে বমি ও খিঁচুনি দিয়ে জ্বর হচ্ছিল। এবং চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যু হয় পরের পর শিশুর। তাই শিশুদের ভরা পেটে লিচু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

এ বারও শুরু হয়ে গিয়েছে লিচুর মরসুম। কিন্তু অতীতের থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনও এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য দফতর প্রচার শুরু করেনি বলে অভিযোগ। তাই ফের উদ্বেগ গ্রাস করেছে পরিবারগুলিকে। কালিয়াচকের জালালপুর গ্রামপঞ্চায়েতের খাড়িয়া ডোবা গ্রামের বাসিন্দা, কংগ্রেসের গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য নুরিনা বিবি বলেন, ‘‘তিন বছর আগে আমার ছোট্ট ছেলেটা চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গিয়েছিল। তাই লিচুর সময় আসলেই ভয় হয়। আমার অন্য ছেলেদেরকেও লিচু খেতে দিই না।’’

নুরিনা বিবির মতোই লিচুর মরসুম এলেই আতঙ্কে থাকেন নাসিমা বিবিও। তিনি বলেন, ‘‘তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে সামিউল মারা গিয়েছিল লিচুর সময়ে। তারপর থেকে দুই মেয়ের মুখে একটিও লিচু তুলতে দিইনি।’’ লিচুর মরসুমে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কি কোনও প্রচার চালানো হয়েছে গ্রামে? এই প্রশ্নের উত্তরে দু’জনেই আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেরা যখন মারা গিয়েছিল তখন অনেকে এসেছিলেন। তারপর আর কেউ আসেননি।’’

যদিও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার প্রচার চালানো হয়েছে। চলতি মরসুমেও তা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে আমরা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, আশা কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছি। লক্ষ লক্ষ লিফলেট ছাপানো হয়েছে। খুব দ্রুত আমরা প্রচার শুরু করব।’’

মালদহ জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। তারমধ্যে ৭০ শতাংশ লিচু চাষ হয় জেলার কালিয়াচক ১, ২ ও ৩ ব্লকে। ২০১৪ সালে কালিয়াচকের ৩টি ব্লকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল মোট ৬৭ জন শিশু। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৩২ জনের। ২০১৫ সালে ওই তিন ব্লকে আক্রান্ত হয়েছিল ২০ জন শিশু। তার মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর ২০১৬ সালে আক্রান্ত ৪১ জন শিশুর মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল চারজনের। খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ও বমির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল ওই শিশুরা। প্রত্যেকের বয়স ছিল তিন থেকে ছয়ের মধ্যে।

এ বার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালে ইমারজেন্সি টিম তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিতাভ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার, গ্লুকোজ মাপার যন্ত্র ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র রাখা হয়েছে। শিশুদের খালি পেটে ঘুমোতে না দিয়ে রাতে পেট ভরে ভাত, রুটি খাওয়ানোর ব্যাপারে প্রচার চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lychee Malda Health Department Awareness Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE