Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে বৈঠক ছাড়ল কংগ্রেস

‘এমসিসি’ সেলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সর্বদল বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা তৃণমূল এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করছেন বলে পর্যবেক্ষকদেরও অভিযোগ করলেন জেলা কংগ্রেস নেতারা। শুক্রবার বিকেলে শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন পুরভোটের রির্টানিং অফিসার তথা মহকুমা শাসক। বৈঠকে ছিলেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অফিসাররাও। বৈঠকের শুরু থেকেই এমসিসি সেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন কংগ্রেস প্রতিনিধিরা।

পতাকা ফেস্টুন খুলে ফেলছেন এমসিসি সেলের কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।

পতাকা ফেস্টুন খুলে ফেলছেন এমসিসি সেলের কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

‘এমসিসি’ সেলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সর্বদল বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা।

জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা তৃণমূল এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করছেন বলে পর্যবেক্ষকদেরও অভিযোগ করলেন জেলা কংগ্রেস নেতারা। শুক্রবার বিকেলে শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন পুরভোটের রির্টানিং অফিসার তথা মহকুমা শাসক। বৈঠকে ছিলেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অফিসাররাও। বৈঠকের শুরু থেকেই এমসিসি সেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন কংগ্রেস প্রতিনিধিরা।

প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণে দলের এক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলও হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার। কংগ্রেসের তোলা অভিযোগে বিরোধী অনান্য দলের প্রতিনিধিরাও সহমত হওয়ায় শুরুতেই বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপরেই অভিযোগ জানিয়ে শঙ্করবাবু এবং অনান্যরা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান।

ভোট প্রচারে কোনও দল নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করছে কিনা, তা দেখার দায়িত্বে থাকা এমসিসি (মডেল কোড অব কন্ডাক্ট) সেলের কাজকর্ম নিয়েই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠায় ভোটের পর্যবেক্ষকদের সামনে অস্বস্তিতে পড়ে যান প্রশাসনের আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবারই শিলিগুড়িতে এসে পৌঁছেছেন শিলিগুড়ি পুরভোটের সাধারণ পর্যবেক্ষক অবনীন্দ্র সিংহ এবং আরও দুই পর্যবেক্ষক অনিমেষ ভট্টাচার্য এবং গোমা লামু শেরিং। প্রশাসন সূত্রের খবর, সমস্ত কিছু শোনার পর সাধারণ পর্যবেক্ষক অবনীন্দ্র সিংহ এমসিসি সেলকে সক্রিয় ভাবে কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্করবাবু’র অভিযোগ, “শহরের বিভিন্ন বাতিস্তম্ভ, সরকারি ভবনে তৃণমূলের প্রচার হোর্ডিং দেখা যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের খরচে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাসিমুখে মন্ত্রীদের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এমসিসি দল বা প্রশাসনের সেদিকে নজর নেই। বিরোধীদের প্রচার সামগ্রী খোলায় ব্যস্ত এমসিসি সেল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর নির্দেশেই এ সব হচ্ছে।” বাম আমলেও একই কায়দায় ভোট হতো বলে অভিযোগ করে শঙ্করবাবু। তাঁর কটাক্ষ, “বাম আমলে আগে ভোটের আগের দিন বিধিভঙ্গ করা শাসক দলের পোস্টার ব্যানার খোলা হতো, এই সরকারও একই পথে হাঁটছে।”

একই ধরণের অভিযোগ তুললেও বিরোধী বাম এবং বিজেপি অবশ্য বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেনি। বামদের তরফে সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, “আমরাও অভিযোগ জানিয়েছি। প্রশাসনের আধিকারিকার সব শুনেছেন। দেখা যাক কী ব্যবস্থা হয়।” বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসু বলেন, “এমসিসি নিয়ে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যত পদক্ষেপ হচ্ছে, তার ছিটেফোাঁটাও বিধি ভেঙে লাগানো শাসক দলের পোস্টার ব্যানারের বিষয়ে চোখে পড়ছে না। আমরা নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ জানাব। পর্যবেক্ষকদের ই-মেল চেয়েছি। যাতে অভিযোগের প্রমাণ থেকে যায়।”

গত বৃহস্পতিবারই ট্রেজারি ভবন সামনে থাকা আরএসপি-র জেলা সম্মেলনের হোর্ডিং খুলে নিয়ে যায় এমসিসি সেল। ওই হোর্ডিং-এ কোনও ভোটের প্রচার ছিল না বলে জানিয়ে আরএসপি-র তরফে কংগ্রেসের মতই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলা হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, একের পর এক অভিযোগ ওঠার পর বৃহস্পতিবারই রির্টানিং অফিসার তথা মহকুমা শাসক দীপাপ প্রিয়া এমসিসি সেলকে আরও সক্রিয় হতে সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। সেই মতন এদিন শিলিগুড়ি এবং প্রধাননগর থানা এলাকায় দুপুর থেকে অভিযান শুরু হয়।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রথম দফায় ৪ থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে পরপর অভিযান চালিয়ে পোস্টার, ব্যানার এবং হোর্ডিং খুলে ফেলা হয়। এরমধ্যে বিজেপি, তৃণমূল প্রচার সামগ্রীই বেশি রয়েছে। এর সঙ্গে চম্পাসারি এলাকায় অভিযান শুরু হয়। সেখানেও সিপিএম এবং তৃণমূলের হোর্ডিং, ব্যানার খোলা হয়। তবে সকালের পর সেলের কর্মীরা অভিযানে নামলেও কমিশনারেট থেকে পুলিশ কর্মীদের দিতে দেরি করা হচ্ছে বলে ওই কর্মীরা সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের জানিয়েছেন। আবার সকালে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির পর কাজ শুরু হলেও মাঝপথে কিছুক্ষণ তা বন্ধ থাকে। গত তিনদিনের রিপোর্ট তৈরির পর সেলের কর্মীরা ফের আরেক দফায় অভিযানে নামেন। বিকাল অবধি ছোট গাড়ির এক ট্রাক প্রচার সামগ্রী এনে আদালত চত্বরে জড়ো করা হয়। এদিন তৃণমূল প্রার্থী নান্টু পাল এবং মঞ্জুশ্রী পালকে তিনদিনের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে তাঁরা হোর্ডিং, ব্যানার সরকার জায়গা থেকে সরিয়ে না নিলে তা খুলে নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমসিসি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বীর বিক্রম রাই জানান, পক্ষপাতের কোনও বিষয় নেই। আপাতত আমরা ৪৭টি জায়গায় সরকারি দেওয়ালে প্রচারে মুছে দিয়েছি। ২৮টি হোর্ডিং, ৩টি বড় ব্যানার এবং ৩০০ মত ফ্ল্যাগ খুলে ফেলা হয়েছে। শুক্রবারের হিসাব পুরোপুরি তৈরি সংখ্যা আরও বাড়বে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রচার সামগ্রীই তাতে রয়েছে। কোনও বাছ বিচারের বিষয় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE