দু’জনেই এলাকায় কোটিপতি বলে পরিচিত। একজনের মুখে মুচকি হাসি লেগেই থাকে। আর একজন খানিকটা হলেও গম্ভীর। একজন লক্ষ্মীকান্ত সরকার। আর এক জন তপন দাম। মেখলিগঞ্জে তৃণমূলের ওই দুই নেতাকে নিয়েই এখন ক্ষোভ চরমে উঠেছে নিচুতলার কর্মীদের। দলের নিচুতলার কর্মীদের কাছে দু’জনেই অভিযুক্ত।
তৃণমূল কর্মীদের অনেকেরই দাবি, শাসক দলের পদে থাকার আড়ালে আসলে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়ে তোলাই ওই নেতাদের লক্ষ্য। সেখানে দলের উঁচুতলার অনেক নেতাদের মদত রয়েছে। যাদের ঘরে পৌঁছয় ওই টাকার অংশ। পুলিশের সঙ্গে সখ্য রয়েছে দুই পক্ষেরই। লক্ষ্মীবাবু ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনায় তপনবাবুর নাম জড়িয়ে পড়ার পরই এমন অভিযোগে তোলপাড় গোটা মেখলিগঞ্জ।
কারা এই দুই তৃণমূল নেতা?
তপনবাবু ব্যবসায়ী। গাড়ির ব্যবসা থেকে শুরু করে পাট, তামাক সহ কৃষিজাত পণ্য মজুত করে রাখা থেকে চা বাগান সহ একাধিক ব্যবসা রয়েছে। লক্ষ্মীবাবুদের অভিযোগ, ওই ব্যবসার আড়ালে চ্যাংরাবান্ধায় বেআইনি ব্যবসায় হাত রয়েছে তপনবাবুর। তাঁর গুদাম ঘর থেকে কিছুদিন আগে এক ট্রাক গরু আটক করে পুলিশ ও বিএসএফ তা নিয়ে মামলাও হয়। শুধু তাই নয়, চ্যাংরাবান্ধা হয়ে যে সমস্ত ট্রাক বাংলাদেশে যাতায়াত করে তাদের কাছেও গাড়ি পিছু প্রতিদিন আড়াইশো টাকা করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই টাকায় ভাগ থাকে বড় নেতাদের। পুলিশের একটি অংশের কাছেও ওই টাকা পৌঁছয় বলে দাবি। তপনবাবুর অনুগামীরা অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তাঁদেরই একজনের কথায়, “এক সময় তোলাবাজির স্বর্গ্যরাজ্য মেখলিগঞ্জ। তপনবাবু ব্লক সভাপতি হওয়ার পরে তা পাল্টে গিয়েছে।”
এক সময় বলতে লক্ষ্মীবাবু ব্লক সভাপতি থাকার সময়কেই উল্লেখ করেছেন তাঁরা। আর এই লক্ষ্মীবাবু একসময় কংগ্রেসে ছিলেন। কিছুদিন এলাকায় গৃহশিক্ষকতা করতেন। ২০১১ সাল নাগাদ দলের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরেই তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। গাড়ি, বাড়ি, চা বাগানের মালিক হয়ে ওঠেন লক্ষ্মীবাবু। বিরোধী দলের সঙ্গে গণ্ডগোলে জড়ানোর ঘটনায় কিছু দিন আগে একবার গ্রেফতার হন লক্ষ্মীবাবু।
তপনবাবুর অনুগামীরা পাল্টা অভিযোগ করেন, সীমান্তের বেআইনি কারবার একসময় নিয়ন্ত্রণ করতেন লক্ষ্মীবাবু। শুধু তাই নয়, চাকরি দেওয়ার নাম করেই লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেন তিনি। লক্ষ্মীবাবুর এক অনুগামী অবশ্য বলেন, “পৈতৃক সম্পত্তিতেই বহু টাকার মালিক লক্ষ্মীবাবু। তা মেখলিগঞ্জের সকলেই জানেন।” মেখলিগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান অবশ্য এমন কোনও কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “এমন কোনও অভিযোগ আমি কখনও পাইনি।” দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কারও বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থেকে থাকে তা হলে পুলিশ-প্রশাসন আছে। আমাকে কেউ এমন কিছু জানায়নি।” এক পুলিশ কর্তার কথায়, “দু’জনের বিরুদ্ধেই আমরা যে সব অভিযোগ পেয়েছি আইন মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
তপনবাবু কিন্তু এ দিন গোটা পরিস্থিতির জন্য এদিন সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মনকেই দায়ী করেছেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘দল আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর বারবার বিজয়বাবুর বাড়িতে ছুটে গিয়েছি৷ রবীন্দ্রনাথবাবু যেহেতু জেলা সভাপতি তাই তার বাড়িতেও গিয়েছি৷ দেখা হলেই বিজয়বাবুকে প্রণাম করেছি৷ কিন্তু উনি মেখলিগঞ্জে এলেই লক্ষ্মীকান্তবাবুকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন৷ অথচ, লক্ষ্মীকান্তবাবু কী ভাবে গত বিধানসভা নির্বাচনে দলকে হারানোর জন্য সব করেছেন তা সবার জানা৷ তাই তাঁর সঙ্গে ঘুরলে দলের বাকিরা যে কোন সময় ক্ষেপে যেতে পারে তা বিজয়বাবুকে বললেও শোনেননি৷’’
তবে বিজয়বাবু অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি৷ তাঁর কথায়, ‘‘যতদূর জানি, স্থানীয় বিধায়ক তপন দামকে ব্লক সভাপতি করলেও কোচবিহার জেলা সভাপতি তার কোন অনুমোদন দেননি৷ ফলে হিসাব মত ওই ব্লকে এখন কেউই সভাপতি নন৷ তপন ও লক্ষ্মীকান্ত দু’জনেই আমায় খুব ভালবাসে৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy