কেউ হাসিমুখে ওড়ালেন আবির। কেউ দেশের পতাকা হাতে ঘুরে বেড়ালেন গ্রামে। কারও চোখ থাকল ফানুসের দিকে। ওই বুঝি কাঁটাতার পেরিয়ে ফানুস ঢুকল ফেলে আসা গ্রামে। সোমবার ছিটমহল বিনিময়ের দু’বছরে আবেগে ভাসলেন দুই বাংলার মানুষ। তবে আনন্দেও চাপা থাকেনি ক্ষোভ।
ছিটমহল বিনিময়ের পরে উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। কেন দু’ বছর পরেও স্থায়ী পুনর্বাসন পেলেন না, তাই নিয়ে সরব হয়েছেন ও পার বাংলার ভারতীয় ছিটমহল থেকে আসা বাসিন্দারা।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, দু’ বছরে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। ইতিমধ্যেই পাকা সড়ক নির্মাণের কাজ এগিয়েছে। বিদ্যুৎ, পানীয় জল, সেচের জন্য সোলার পাম্প বসানো থেকে শুরু করে কমিউনিটি সেন্টার তৈরির কাজ হয়েছে। স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্যেও নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই ছিটমহল বিনিময় হয়। তারপর থেকে উন্নয়নের কাজ চলছে। বর্ষার জন্যে এখন কাজের গতি কিছুটা কম। তবে এক বছরের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।” মন্ত্রী ওই দাবি করলেও সাবেক ছিটমহল দক্ষিণ মশালডাঙার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন, সাদ্দাম হোসেন, পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা পুতুল বর্মনরা অভিযোগ করেন, উন্নয়নের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। যেটুকু হয়েছে তাতেও পক্ষপাতিত্ব হয়েছে।
জয়নালের কথায়, “অনেক স্বপ্ন ছিল চোখে। কিন্তু পূরণ হল না। এখনও জমি পেলাম না। অনেক ছাত্রছাত্রী পরিচয় গোপন করে পড়াশোনা করেছে। পরিচয় না পেয়ে।” মেখলিগঞ্জ ক্যাম্পের বাসিন্দা নরেশ বর্মন বলেন, “স্থায়ী বসবাসের জায়গা এখনও পাইনি। যে জায়গা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা প্রত্যন্ত এলাকায়। সেখানে কোনও সুযোগ সুবিধে নেই।” দিনহাটা ক্যাম্পের ওসমান গনি বলেন, “সরকার ফ্ল্যাট বাড়ি দেবে। তা আমরা চাই না। এতদিন নিজের জমিতেই বাড়ি করে ছিলাম। তেমনটাই চাই।” এ দিন দক্ষিণ মশালডাঙায় মোমবাতি, মশাল জ্বালিয়ে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা। বিলি করা হয় মিষ্টি। কয়েকজন আবির নিয়েও মেতে ওঠে। পোয়াতুর কুঠিতে মঙ্গলবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছিটমহল আন্দোলনের নেতা বর্তমানে বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার পর্যবেক্ষক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ক্ষোভ, দুঃখ আছে। তাঁর মধ্যেও এই দিনটি ভুলে যাওয়া যায় না। দুই বাংলার সাবেক ছিটমহলের মানুষ এ দিনটি পালন করে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy