Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিলিগুড়িতে শুটআউট

গুলির আওয়াজ শুনে প্রথমে ভাবেন, গাড়ির চাকা ফেটেছে। তার পরেই দেখেন দু’জন সিঁড়ি দিয়ে নেমে দৌড়চ্ছে। নিমেষের মধ্যে দেখেন, দোকানের দুই কর্মী কাঁপতে কাঁপতে বাইরে এসে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করছেন।

মার: দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে চলছে গণপিটুনি। ছবি: স্বরূপ সরকার।

মার: দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে চলছে গণপিটুনি। ছবি: স্বরূপ সরকার।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪১
Share: Save:

পুজোর মুখে অন্য এক শিলিগুড়ির দেখা মিলল।

শুক্রবারের সন্ধ্যা ৭টার হিলকার্ট রোড। রেস্তোরাঁ, পানশালা, দোকানগুলিতে ভালই ভিড়। রাস্তার দুই পাশের আড্ডাগুলিতে যুবকেরা বাইক, স্কুটি নিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। চায়ের দোকানগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছিল। এনজেপিতে কাজকর্ম সেরে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন দীপক ঠাকুর। ডাকাতি হওয়া সোনার দোকানটি থেকে ১০/২০ মিটার দূরে।

গুলির আওয়াজ শুনে প্রথমে ভাবেন, গাড়ির চাকা ফেটেছে। তার পরেই দেখেন দু’জন সিঁড়ি দিয়ে নেমে দৌড়চ্ছে। নিমেষের মধ্যে দেখেন, দোকানের দুই কর্মী কাঁপতে কাঁপতে বাইরে এসে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করছেন।

চায়ের কাপ ফেলে দিয়ে পিঠে ব্যাগ নিয়ে যুবকের পিছনে দৌড় দেন। লাগোয়া সিনেমা হলের সামনেই তিন জন যুবক বাইক থেকে নেমে একজনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।

• ৬টা ৪৫: হাসমিচক লাগোয়া একটি সিনেমা হলের সামনে হেলমেট পরা তিন জনকে দেখা যায়। ৫০ মিটারের মধ্যেই গয়নার দোকানের শো-রুম।

• ৬টা ৫০: শো-রুমের সামনে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল তারা।

• ৬টা ৫১: শো-রুমের নিরাপত্তাকর্মী তিন জনকে হেলমেট খুলতে বলায় বচসা শুরু। নিরাপত্তাররক্ষীর পায়ে গুলি চালিয়ে ভিতরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। কেড়ে নেওয়া হয় নিরাপত্তা কর্মীর রাইফেল। খুনের হুমকি দিয়ে গয়না ভর্তি ব্যাগ আদায়।

• ৭টা ১০: নিজেরাই ‘ডাকাত ডাকাত’ চেঁচিয়ে শো-রুম থেকে বেরিয়ে পালাতে চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। পথচারীদের সন্দেহ হওয়ায় সিঁড়িতেই এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলেন। গুলি চালাতে চালাতে পালায় অন্য দুই দুষ্কৃতী। জখম হন এক পথচারী। ধরা পড়া দুষ্কৃতীর থেকে বন্দুক কেড়ে নেয় বাসিন্দারা। গণপিটুনি শুরু হয়। উদ্ধার হয় গয়না ভর্তি ব্যাগও।

• ৭টা ১২: শো-রুমের উল্টো দিকে ১০০ মিটার দূরের ফুটপাতে আরও এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলল বাসিন্দারা। তার থেকেও উদ্ধার হল একটি নাইন এমএম পিস্তল। ধৃতকে গণপিটুনি।

• ৭টা ১৫: পাশের একটি গলি থেকে বাসিন্দারা ধরল আর এক দুষ্কৃতীকে। নর্দমা থেকে উদ্ধার নিরাপত্তাকর্মীর কেড়ে নেওয়া রাইফেল।

এ বার পিছনে ঘুরে দেখেন আরও এক জন গুলি চালাচ্ছে। কোনও ক্রমে এক দোকানের সামনে নিজেকে আড়াল করে রাখেন দীপক। তার পরেই আরও জনা দশেক তেড়ে আসতেই সাহস পান দীপক।

সকলে মিলে ধরে পড়েন একজনকে। দীপক বলেন, ‘‘এখন ভাবলে গা শিউরে উঠছে। সিনেমায় যা দেখি, সেইভাবে গুলি চলেছে। আমাদের সামনে দিয়ে আরও দুই জন পালায়। তখন ওদের ধর ধর বলে চিৎকার করি। পরে সকলকে ধরা হয়।’’

প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্তা মনোজ বর্মা দোকানটি থেকে ২০০ মিটার দূরে স্কুটিতে ঘোরাঘুরি করছিলেন।

হঠাৎ আওয়াজ শুনে ছুটে যান রাস্তার আর এক দিকে। ডাকাতি বুঝতে পেরে আর দেরি করেননি মনোজবাবু। ফোনে পরিচিতদের ডাকতে থাকেন।

এলাকা দিয়ে বিধানরোডে যাচ্ছিলেন হায়দারপাড়ার দুই যুবক সোহম মজুমদার ও বিকি শর্মা। লোকের তাড়া দেখে দুই জনই এগিয়ে ধাক্কা মারেন এক দুষ্কৃতীকে।

এর মধ্যে আরও এক দুষ্কৃতীর গলা চিপে হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নেন সৌরভ বলে এক যুবক। নিজের পদবী অবশ্য বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘একটু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে ফেলেছি ঠিকই। তবে শহরের ভালর জন্য এটা করাই যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE