Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লোহা-ইটে হামলা

গত শনিবার বিকেলে সুকনায় তীব্র বেগে কিছু একটা উড়ে এসে লেগেছিল এক পুলিশের কপালে। দরদর করে রক্ত গড়াতে শুরু করে। কপালে লেগে রাস্তায় ছিটকে পড়া টুকরোটি কুড়িয়ে শিউরে উঠেছিলেন অন্য পুলিশকর্মীরা।

(বাঁ দিক থেকে) এ রকম লোহার টুকরোই ছোড়া হচ্ছে পুলিশের দিকে। সে জন্য আন্দোলনকারীরা ব্যবহার করছে গুলতি।—নিজস্ব চিত্র

(বাঁ দিক থেকে) এ রকম লোহার টুকরোই ছোড়া হচ্ছে পুলিশের দিকে। সে জন্য আন্দোলনকারীরা ব্যবহার করছে গুলতি।—নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০২:৪১
Share: Save:

কখনও লৌহযুগ, কখনও প্রস্তরযুগ! আর সে সবের ধাক্কা যে কী হতে পারে, পাহাড়ের আন্দোলন মোকাবিলা করতে গিয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা।

কেমন সেই ধাক্কা? কাঁদানে গ্যাসের শেল, স্মোক বম্ব, জল কামান নিয়ে মোর্চার আন্দোলন থামাতে হাজির পুলিশের দিকে হঠাৎ হয়তো আড়াল থেকে ছুটে এল সরু ফলার পাথর বা লোহার টুকরো। কখনও পাহাড়ের ঢাল থেকে ছুটে এল তির। শরীরের নানা জায়গায় সেই ক্ষত নিয়ে পুলিশদের ছুটতে হচ্ছে হাসপাতালে। যে হাতে ক’দিন আগে স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করতেন পাহাড়ের লোকজন, সেই হাতই এখন ব্যবহার করছে লোহা আর পাথরের এই অস্ত্র।

গত শনিবার বিকেলে সুকনায় তীব্র বেগে কিছু একটা উড়ে এসে লেগেছিল এক পুলিশের কপালে। দরদর করে রক্ত গড়াতে শুরু করে। কপালে লেগে রাস্তায় ছিটকে পড়া টুকরোটি কুড়িয়ে শিউরে উঠেছিলেন অন্য পুলিশকর্মীরা। লোহার রডের টুকরো। যে রড বাড়ির তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়, সেগুলিই মেশিনে ছোট ছোট টুকরোয় কাটা। গুলতিতে টেনে সেগুলি পুলিশের দিকে ছোড়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। শনিবার সাত ঘণ্টার খণ্ডযুদ্ধের শেষে রাস্তা থেকে অসংখ্য এমন লোহার টুকরো কুড়িয়েছে পুলিশ। রাস্তাতেই মিলেছিল কয়েকটি তিরও। যেগুলির ফলা টিন-লোহা দিয়ে বাঁধা।

মোর্চা সমর্থকদের খুকুরি নিয়ে মিছিল করাকে কেন্দ্র করেই শনিবার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে সুকনা। পুলিশের ওপর যথেচ্ছ হামলার অভিযোগ ওঠে। খুকুরি দিয়ে আঘাত করা হয় এক পুলিশকর্মীকে। সুকনা থেকে পানিঘাটা, মিরিক থেকে সোনাদা সর্বত্রই এই খুকুরি নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগও উঠেছে। ভানুভক্তের জন্মজয়ন্তী পালন করতে গত ১৩ জুলাই রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব পানিঘাটায় গিয়েছিলেন। সে দিনও বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে গুলতি ছিল।

শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘সুকনায় পাথর-তির তো বটেই, আমাদের দিকে লোহার টুকরোও ছোড়া হয়েছিল। এগুলিতে মারাত্মক জখম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চোখে লাগলে দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারাতে হতে পারে।’’

কেন এই সব অস্ত্র? পুলিশের দাবি, হাত দিয়ে পাথর ছুড়লে যে গতিতে যাবে, গুলতিতে তার কয়েক গুণ বেশি জোর হবে। খুকুরি পাহাড়ের বাসিন্দাদের কাছে ঐতিহ্যের প্রতীক। পাহাড়ের বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় তির-ধনুককে পুজো করে। সঙ্গে খুকরি অথবা তির-ধনুক থাকলে সে সব অজুহাতে পুলিশের হাত থেকে ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই গুলতি-খুকুরি-তিরকেই পুলিশের ওপর হামলা চালানোর অস্ত্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

মোর্চার সুকনা-পানিঘাটা ব্লক সভাপতি রাজেশ লামা বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের ওপর লাঠি, গুলি চালাচ্ছে। ওরাই পাথর ছুড়ছে। উল্টে বদনাম করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE