মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত যুব তৃণমূলের নেতাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দু’দিন কেটে গেলেও অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হওয়াতেই পুলিশ তাঁকে এখন খুঁজে পাচ্ছে না। এটা পুলিশের রেওয়াজে পরিণত হয়ে গিয়েছে। তবে জিয়াউরের এমন কান্ডের জন্য তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূল নেতাদেরও একাংশ। উত্তর মালদহ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী তথা গায়ক সৌমিত্র রায় বলেন, ‘‘এমন ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। কলকাতাতে থাকলেও হরিশ্চন্দ্রপুরে আমার বাড়ি। বাড়িতে এসে ঘটনাটি শুনতে পেয়েছি। এখানে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। তবে জিয়াউরের উচিত হাসপাতালে গিয়ে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া।’’ জিয়াউরকে নিয়ে জেলা নেতৃত্বও যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে। যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি বলেন, ‘‘জিয়া আমাদের দলের কোনও পদে নেই। এমনকি আমাদের দলের সক্রিয় কর্মীও নন। শুনেছি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’’
গত শুক্রবার রাতে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ঢুকে কর্তব্যরত নার্সকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর নিজেকে যুব তৃণমূলের জেলা সম্পাদক বলে দাবি করেছেন। ওই নার্সকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি অন্য চিকিৎসকদেরও গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার দিন রাতেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলাও রুজু করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জিয়াউরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬, ১৮৬, ১৮৯ এবং ৩৫৩ জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে তাঁকে এখনও পর্যন্ত ধরা যায়নি। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ফেরার। নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’
তবে হাসপাতালে ঢুকে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ধরা না পড়ায় চিকিৎসক এবং নার্সদের বড় অংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। তাঁদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের স্বার্থে দিবারাত্র পরিষেবা দেওয়ার পরেও প্রায়ই হেনস্থা হতে হয়। হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর, চিকিৎসকদের হেনস্থার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি কখনও শোনা যায়নি। অথচ তারপরেও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এই বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মন্ডল বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কাজ করেছি। এখন পুলিশের কাজ রয়েছে। শাসকদের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এমন হুমকি দিতেও পিছপা হচ্ছেন না নেতা কর্মীরা।’’
সম্প্রতি টিএমসিপির এক নেতা কলেজের শিক্ষিকা রেপ করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। সেই ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি জেলাতে। এর মাঝে ফের এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির ঘটনা অভিযোগের আঙুল উঠল তৃণমূলের যুব নেতার বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। অথচ তাঁর দলের কর্মীরা কখনও শিক্ষিকা, কখনও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে হুমকি দিচ্ছেন। আর পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভুমিকা পালন করছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নেতা কর্মীদের মিথ্যে মামলা দিয়ে পুলিশ ফাঁসাচ্ছে। আর শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলে পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে পারছে না।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। এমন ঘটনাকে দল কখনও প্রশয় দেয় না। পুলিশ তাদের মতো ব্যবস্থা নেবে এবং আমরা দলগত ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’
ঘটনার পরের দিন অভিযুক্ত জিয়াউরকে পাওয়া গেলেও এদিন তাঁর দেখা মেলেনি। এমনকি তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy