Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দ্রুত হোর্ডিং খোলার দাবি উঠছে শিলিগুড়িতে

মাস খানেক ধরে নানা রঙের পতাকা, ব্যানার, ফ্লেক্স নিয়ে কম টানাপড়েন চলেনি। কখনও পতাকা চুরি, কখনওবা ফ্লেক্স কেটে দেওয়া বা কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগ তুলে হইচই করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। দেওয়াল দখল নিয়ে চলছে পাড়ায় পাড়ায় টানা হেঁচড়া। অত্যন্ত সক্রিয়তার সঙ্গে একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জমা করেছেন প্রার্থী থেকে দলের নেতানেত্রীরা। ভোটযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে, শনিবার দুপুর ৩টেয়।

কিছু হোর্ডিং খোলার কাজ শুরু হলেও এখনও রয়েছে অনেকগুলিই।

কিছু হোর্ডিং খোলার কাজ শুরু হলেও এখনও রয়েছে অনেকগুলিই।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১১
Share: Save:

মাস খানেক ধরে নানা রঙের পতাকা, ব্যানার, ফ্লেক্স নিয়ে কম টানাপড়েন চলেনি। কখনও পতাকা চুরি, কখনওবা ফ্লেক্স কেটে দেওয়া বা কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগ তুলে হইচই করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। দেওয়াল দখল নিয়ে চলছে পাড়ায় পাড়ায় টানা হেঁচড়া। অত্যন্ত সক্রিয়তার সঙ্গে একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জমা করেছেন প্রার্থী থেকে দলের নেতানেত্রীরা। ভোটযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে, শনিবার দুপুর ৩টেয়।

কিন্তু তার পরে এলাকায় থেকে প্রচার সামগ্রী সরিয়ে পরিষ্কার করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বহু প্রার্থী থেকে শুরু করে দলগুলির মধ্যে অনীহা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দা থেকে পরিবেশপ্রেমীরাই। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, ‘‘বাড়ি দেওয়াল থেকে ব্যালকনি, দোকানের টিনের শেড থেকে গেটের মাথায় কোথাও কিছুই বাকি ছিল না। অনেক ছোট-বড় গাছও পেরেক, তারের খোঁচা থেকে রক্ষা পায়নি। ভোটের দিন যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে প্রচারের বহর। কিন্তু খোলার ক্ষেত্রে সেই তৎপরতা কোথায় ?’’

কয়েক জন পরিবেশপ্রেমী বাসিন্দা তো বলেছেন, ‘‘প্রচারের ক্ষেত্রে যেমন নির্বাচন কমিশন নজরজারি চালায়, তেমনিই প্রচার সামগ্রী খোলার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে দিয়ে নিয়ম করটা দরকার।’’ এমনই মনে করেন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসুও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচার সামগ্রীর ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের এমসিসি সেল-সহ প্রচুর নিয়ম রয়েছে বলে শুনি। ভোটের পর তা খুলে ফেলার জন্য তার একটা নিয়ম, আইন থাকলে ভাল হয়। বর্তমান পরিবেশের স্বার্থে এটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।’’

এ দিন শিলিগুড়ি বর্ধমান রোড, হিলকার্ট রোড, বিধানরোড, স্টেশন ফিডার রোড, বাবুপাড়া মেন রোড, রবীন্দ্রনগর মেন রোড, ইসকন রোড, তিনবাতি রোড-সহ একাধিক বড় রাস্তার ধার তো বটেই অধিকাংশ ওয়ার্ডেই ব্যানার ফেস্টুন ঝুলতে দেখা গিয়েছে। হাওয়ার উড়ছে নানা রঙের পতাকাও। আবার ভোট মিটে যাওয়ায় কর্মীদের নজর হালকা হতেই রাস্তা, নর্দমায় গড়াগড়ি খেতেও দেখা গিয়েছে ভোটের প্রচার সামগ্রী। শহরে ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে। পুরসভার ১৫, ১৪, ১৬, ১৭, ২৪, ৩৯-এর মত ওয়ার্ডে কোথাও কংগ্রেসের সুজয় ঘটক বা নিশা মাধুরী সাহা, কোথাও সিপিএম প্রার্থী রথীন পাল বা শঙ্কর ঘোষ, আবার কোথাও তৃণমূল প্রার্থী শুক্লা দেব, কৃষ্ণ পাল বা প্রদীব দেবকে ভোটের পর রাতেই নিজেরাই রিকশা বা ভ্যান নিয়ে বার হয়ে ওই সমস্ত পতাকা, ফ্লেক্স খুল ফেলতে দেখা গিয়েছে।

শহরের প্রবীণ বাসিন্দা তথা লেখক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুরোটাই দৃশ্যদূষণ। ভোটের আগে রাস্তার বার হলে তো চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল। কোথাও কিছুই বাকি ছিল না। অনেকে খুলেও ফেলেছেন ঠিকই। কিন্তু বড় অংশের প্রার্থীরাই তা করতে উঠতে পারেননি মনে হচ্ছে।’’ এই প্রসঙ্গে গৌরীবাবু বলেন, ‘‘আসলে শহরে ভূমিকম্প ফোবিয়া চলছে। সকাল থেকে রাত অবধি ওই চর্চাই চলছে। তার থেকে কী আর নেতারা বাদ আছেন, তাই হয়ত সময় পাচ্ছেন না। পৃথিবী শান্ত হলে হয়ত, এই দৃশ্যদূষণ কমবে।’’

যদিও এ দিনই সিপিএমের তরফে সমস্ত প্রার্থীকে নিজেদের উদ্যোগে এলাকায় ওই পরিষ্কারের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং জেলা সিপিএমের সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘আমরা সব প্রার্থীদের ব্যানার, ফ্লেক্স, পতাকা খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। কোনও ওয়ার্ডে শনিবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। রবিবারও হয়েছে। আশা করছি, ১-২ দিনের মধ্যে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ শাসক তৃণমূলের তরফেও একই আশ্বাস অবশ্য মিলেছে। দলের জেলার অন্যতম কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে পতাকা, ফ্লেক্স খোলা শুরু হয়েছে। দেওয়াল লিখনগুলিও মুছে ফেলা আজ, সোমবার সকাল থেকে শুরু হবে। বাকি ওয়ার্ডেও সব সরে যাবে।’’

তৃণমূল এবং সিপিএমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার সামগ্রী লাগিয়েছিল কংগ্রেসও। তাঁদের তরফেও কয়েকটি ওয়ার্ডে শনিবার রাত থেকেই ওই কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধরাণ সম্পাদক কুন্তল গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব প্রার্থীকেই এলাকা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য বলছি।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE