Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খাদের ধারের রেলিংটা...

আবার উত্তপ্ত নস্টালজিয়ার পাহাড়। তাই সমতলের মন ভাল নেই। উত্তরের সেই বিষণ্ণতার কথা শুনল আনন্দবাজার। আজ শেষ পর্বমাধ্যমিক পরীক্ষার পরে পাহাড়ে গিয়ে টাইগার হিল থেকে চিড়িয়াখানা—চষে বেড়িয়েছি। ফেরার সময় খুব খারাপ লাগছিল। কেমন যেন একটা মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। ঘটনাচক্রে সেই শৈল শহরেই অবশ্য আমার প্রথম কর্মজীবন শুরু।

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ০৯:৫০
Share: Save:

সেই অনুভূতি

কিশোর বয়স থেকে অগুনতি বার দার্জিলিং গিয়েছি। কখনও স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে, কখনও মাউন্টেনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সংগঠনের কাজে। শৈলশহর এখন উতপ্ত, কবে শীতলতা ফিরবে কেউ জানে না। দার্জিলিংয়ের আন্দোলন যদিও শান্ত হয় তবে পর্যটক ও বাইরে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া পড়ুয়াদের আস্থা কি ফিরবে? সেই প্রশ্ন উকি দিচ্ছে আমার মতো হাজারো দার্জিলিং প্রেমিকের মনে। সালটা ১৯৬৭ হবে। তখন আলিপুরদুয়ার কলেজিয়েট স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে প্রথমবার দার্জিলিং যাই। সেই অনুভূতি আজও মনে রয়েছে।

তবে বর্তমান দার্জিলিংয়ের পৃথক গোর্খল্যান্ড আন্দলোনের সঙ্গে শৈল শহরের কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছি না। ভয় এই আন্দোলন পাহাড় থেকে সমতলে ছড়িয়ে না পড়ে। তরাই ডুয়ার্সেও আন্দোলনের বীজ বপন হচ্ছে। বছর কয়েক আগে রাজাভাতখাওয়া এলাকায় মোর্চার আন্দোলনের জেরে আটকে দেওয়া হয়েছিল রক্তদান শিবিরে যাওয়া আমাদের গাড়িও। যে কোন সময় অশান্ত হয়ে উঠতে পারে তরাই ডুয়ার্স।

অমল দত্ত
চেয়ারম্যান, আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাব।

বড় মায়া

মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে পাহাড়ে গিয়ে টাইগার হিল থেকে চিড়িয়াখানা—চষে বেড়িয়েছি। ফেরার সময় খুব খারাপ লাগছিল। কেমন যেন একটা মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। ঘটনাচক্রে সেই শৈল শহরেই অবশ্য আমার প্রথম কর্মজীবন শুরু। ২০০১-২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা দার্জিলিং গভর্নমেন্ট কলেজে ইতিহাসের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেছি। ওই এক দশকে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়। কর্মক্ষেত্র থেকে ব্যক্তিগত নানা প্রয়োজনে তাঁদের দারুণ সহযোগিতাও পেয়েছি। এক দশকের ব্যবধানে নিজের শহর কোচবিহারের কলেজে ফেরার সময়ও তাই ভীষণ খারাপ লেগেছিল। ইচ্ছে ছিল সুযোগ পেলেই ছুটে যাব আমার পুরোনো কলেজে, কোয়ার্টার থেকে চেনা পাহাড়ি রাস্তায়।

সাম্প্রতিক আন্দোলনের জেরে সেই সম্ভবনা খানিকটা ফিকে হয়ে যাওয়ায় তাই দার্জিলিংপ্রেমী হিসেবে আমারও খারাপ লাগছে। তা ছাড়া আমিও তো সেখানে থাকার সুবাদে নিজে চোখে দেখেছি এমন অশান্তি, বন্‌ধে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষজনদের কেমন অবস্থা হয়। এবারেও নিশ্চয়ই তাই হচ্ছে!

প্রজ্ঞাপারমিতা সরকার
ইতিহাস বিভাগের প্রধান, কোচবিহার এবিএন শীল কলেজ

ভালবাসা মরেনি

স্কুলবেলায় থাকতাম সেবকের রেল কোয়ার্টারে। তখন থেকেই পাহাড় প্রেমের শুরু। দার্জিলিঙে প্রথম গিয়েছিলাম কাকুর সঙ্গে। মনে আছে, চকবাজারে জিপ থেকে নেমেছিলাম, গোলঘর রেস্তোরায় পরোটা মাংস খেয়েছিলাম। চোখ বুজলে সে দিনের চকবাজার, গোলঘর আজকেও দেখতে পাই। কলেজে পড়ার সময় দার্জিলিং প্রেমটা জাঁকিয়ে বসল। অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের নেশা তৈরি হল। ছড়িয়ে থাকা হেরিটেজ ভবন-জায়গা নিয়ে আগ্রহ জন্মালো। সেই খিদেও মেটাল দার্জিলিং। বর্ধমানের রাজার প্যালেস, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বাড়ি, সিস্টার নিবেদিতার বাসভবনের স্থাপত্য শৈল শহরের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অথচ এখন যখন প্রতিদিন চকবাজার, চৌরাস্তায় কালো ধোঁয়া আর ছাই উড়তে দেখি মন খারাপ হয়ে যায়।

অতীতেও পাহাড় অনেক আন্দোলন দেখেছে। কিন্তু নিজেদের ঐতিহ্য নষ্ট করে, পুড়িয়ে কার কী স্বার্থ চরিতার্থ হবে? পাহাড়-সমতল দুই এলাকার বাসিন্দাদের মনে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা এখনও নষ্ট হয়ে যায়নি। আমার বিশ্বাস সেই ভালবাসাই পাহাড়কে বাঁচার রাস্তা দেখাবে।

সম্রাট সান্যাল
ট্যুর অপারেটর সংগঠনের কর্তা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling দার্জিলিং Nostalgia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE