Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই বন্ধ নিয়োগ, অভিযোগ

২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণ দিনাজপুর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হন তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৫
Share: Save:

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর টানাপড়েনে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য রয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে প্রশাসনিক কাজকর্মের পাশাপাশি স্কুলগুলিতে শিক্ষক বদলি, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে রয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে খুদে পড়ুয়াদের পোশাক এবং স্কুল ব্যাগ বিতরণের কাজও। রোজ নানা সমস্যা নিয়ে দূরবর্তী গ্রামের স্কুল থেকে শিক্ষকেরা বালুরঘাটে জেলা স্কুল সংসদ অফিসে গিয়ে ঘুরে যাচ্ছেন। মাতৃত্বকালীন সুবিধা পেতেও হন্যে হয়ে শিক্ষিকাদের ঘুরতে হচ্ছে বল অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষক সংগঠনগুলি দ্রুত চেয়ারম্যান নিয়োগ করে সমস্যা মেটানোর দাবি জানিয়েছে। একাধিকবার তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিলেও শিক্ষা দফতরের তরফে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।

নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষের অভিযোগ, তৃণমূলের কোনও গোষ্ঠীর নেতাকে চেয়ারম্যান পদে বসানো হবে। তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর দড়ি টানাটানিতে থমকে রয়েছে চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া। এক বছরের উপর চেয়ারম্যানহীন হয়ে শিক্ষা দফতর চলতে থাকায় শিক্ষকদের মাসুল দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দূরের স্কুলের শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুল চলছে টিচার ইনচার্জ দিয়ে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়ে রয়েছে। বিষয়গুলি নিয়ে স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। চেয়ারম্যন না থাকায় দিনকে দিন সমস্যা চরম আকার নিয়েছে বলে তৃণমূলের শিক্ষক নেতারাও আড়ালে স্বীকার করেছেন।

প্রতিমন্ত্রী তথা প্রাক্তন জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান বাচ্চু হাঁসদা বলেন, ‘‘আমি আগে ওই পদে ছিলাম বলেই জানি, শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান চেয়ারম্যান যতটা করতে পারেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কেউ পারেন না।’’ বিষয়টি বাচ্চুবাবু রাজ্যস্তরে জানিয়েছেন। কেন চেয়ারম্যান নিয়োগ হচ্ছে না, তা তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেন।

দল সূত্রের খবর, ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণ দিনাজপুর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হন তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা। নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত অভিযোগের জেরে তিন বছর বাদে বাচ্চুবাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অনুগামী জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি কল্যাণ কুণ্ডুকে ওই পদে বসানো হয়। গত বিধানসভা ভোটের আগে শঙ্কর চক্রবর্তী তৃণমূল জেলা সভাপতি হওয়ার পরে কল্যাণবাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর ওই পদের জন্য শঙ্কর চক্রবর্তী ঘনিষ্ঠ কয়েক জন শিক্ষক নেতার নাম উঠে আসে। কিন্তু শঙ্করবাবু বিধানসভা ভোটে বালুরঘাট থেকে হেরে যান। দলের সভাপতির পদ থেকেও তাঁকে সরানো হয়। তার পরই বাচ্চুবাবু ওই পদে ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক নেতাকে বসাতে আসরে নেমে পড়েন বলে অভিযোগ।

কিন্তু ফের বিপ্লব মিত্র তৃণমূল জেলা সভাপতি পদ ফিরে পেতে নতুন করে অঙ্ক কষা শুরু হয়। বাচ্চুবাবু না বিপ্লববাবু? কোন পক্ষের নেতা ঘনিষ্ঠকে চেয়ারম্যান করা হবে, তা নিয়ে উভয় পক্ষের সুপারিশ নিয়ে রাজ্যস্তরের দোলাচলে বিষয়টি আটকে রয়েছে বলে তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন। অবশ্য দলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘গোষ্ঠীর বিষয় নেই। রাজ্যস্তরে জানানো হয়েছে। শীঘ্র চেয়ারম্যান নিয়োগ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE