Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সংঘর্ষে ফের নিষ্ক্রিয় পুলিশ, কালিয়াচকে অবরোধ

পঞ্চায়েতে কর্তৃত্ব কায়েম করা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় মাসখানেক ধরেই উত্তপ্ত মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুর এবং মোজামপুর। মঙ্গলবার ভোরে ফের সংঘর্ষে জাতীয় সড়ক লাগোয়া ভাগলপুর এলাকায় ৪টি দোকান ও ২টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন আগেই ভাগলপুরের বাসস্ট্যান্ডে পাঁচটি দোকানে লুঠপাটের অভিযোগ ওঠে।

সংঘর্ষে পুড়েছে দোকান। নওদা যদুপুরে।

সংঘর্ষে পুড়েছে দোকান। নওদা যদুপুরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালিয়াচক (মালদহ) শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৫
Share: Save:

পঞ্চায়েতে কর্তৃত্ব কায়েম করা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় মাসখানেক ধরেই উত্তপ্ত মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুর এবং মোজামপুর। মঙ্গলবার ভোরে ফের সংঘর্ষে জাতীয় সড়ক লাগোয়া ভাগলপুর এলাকায় ৪টি দোকান ও ২টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন আগেই ভাগলপুরের বাসস্ট্যান্ডে পাঁচটি দোকানে লুঠপাটের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তার পরেও পুলিশ কাওকে গ্রেফতার না করায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সকাল ৬টা থেকে দু’ঘণ্টা ধরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।

কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই এলাকায় লাগাতার গণ্ডগোল চলছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, কংগ্রেসই বারবার তাঁদের কর্মীদের উপরে হামলা করছে। কিন্তু নওদা যদুপুর এককালে বামেদের শক্ত ঘাঁটি থাকলেও গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে এলাকা তৃণমূলের দখলে চলে যায়। পঞ্চায়েতের ২৩টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তৃণমূল। কংগ্রেসের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীর দাবি, “দুই তৃণমূল নেতানেত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বেই কালিয়াচকে গোলমাল চলছে। পুলিশও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।”এক মাসে পুলিশের কাছে প্রায় ১০টির মতো অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০। পুলিশ তার মধ্যে মাত্র ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন নওদা যদুপুরে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ থেকে শুরু করে কালিয়াচক ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের আসাদুল্লা বিশ্বাস সহ শাসক দলের বেশ কিছু নেতা ও কর্মী। অভিযোগ রয়েছে নওদা যদুপুর পঞ্চায়েতের সদস্য জাকির শেখের বিরুদ্ধেও। জাকির তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনে জিতলেও পরে কংগ্রেস শিবিরে যোগ দেন। তবে খাতায় কলমে তিনি এখনও পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যই।

জাকিরের সঙ্গে বকুলের গণ্ডগোল থেকেই এই বিবাদ শুরু। পঞ্চায়েতের প্রধান পদের দাবিদার ছিলেন জাকির। কিন্তু বকুলবাবু তাঁর ভাইয়ের স্ত্রীকে প্রধান করে দেওয়ায় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়। জাকিরের অনুগামীদের দাবি, বকুলবাবু ও তাঁর দলবলই পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে নানা সুবিধা নিজের সঙ্গীদেরই পাইয়ে দিচ্ছেন। বকুলবাবুর অবশ্য দাবি, পঞ্চায়েতের কাজ ঠিকই হচ্ছে। তিনি সাবিত্রীদেবীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

লোকসভা নির্বাচনের পরে জেলায় তৃণমূলের নতুন সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। লোকসভা ভোটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেলায় তৃণমূলের ভরাডুবি হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। ভোটের মুখে প্রচারে গিয়ে খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাতেও কাজ হয়নি। ভোটের ফল প্রকাশের পরে সাবিত্রীদেবী ও কৃষ্ণেন্দুবাবুকে সতর্কও করা হয়। জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সাবিত্রীদেবীকে। দফতর বদল করা হয় কৃষ্ণেন্দুবাবুর। তার পরেও পরিস্থিতির যে তেমন কোনও পরিবর্তন ঘটেনি, তার প্রমাণ কালিয়াচক এলাকায় গত এক মাস ধরে চলতে থাকা গোষ্ঠী সংঘর্ষ।

পুলিশ অবশ্য বড় কোনও গোলমাল হয়েছে বলে মানতে চাইছে না। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামবাসীদের নিজের মধ্যে সামান্য গোলমাল হয়েছে। বড় কিছু হয়নি।” অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE