কাটা হচ্ছে কেক।—নিজস্ব চিত্র।
তিন বছর ধরে নিজেরাই নিজেদের জন্মদিন পালন করে এসেছেন। এ বার সেই অনুষ্ঠানের দরজা খুলে দেওয়া হল সাধারণ মানুষের জন্য। আর তাতেই চমক। শিলিগুড়ির ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন করলেন শহরের দূষণ নিয়ে। প্রশ্ন এল ট্র্যাফিক সমস্যা নিয়ে। ছাত্রছাত্রীরা মুখ খুলল তারস্বরে লাউড স্পিকার বাজানোর বিরুদ্ধে।
সব মিলিয়ে, বৃহস্পতিবার দুপুরে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের জন্মদিন জমজমাট। সে কথা মেনে নিলেন অনেক পুলিশ কর্মীও। আর সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনে, খাতায় লিখে রাখলেন পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা। পরে বললেন, ‘‘খুব ভাল সব মতামত এল। এ বার থেকে এই অনুষ্ঠানে নিয়মিত হাজির থাকবেন শিলিগুড়ির বাসিন্দারা।’’
২০১২ সালের ৪ অগস্ট দার্জিলিং জেলা পুলিশকে ভেঙে শিলিগুড়ি কমিশনারেট তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাইবার থানা ও মহিলা থানা মিলিয়ে কমিশনারেটের আওতায় আপাতত ৭টি থানা। ৬৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। এ দিন ওই অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে। ছিল স্কুলের পড়ুয়ারাও। ঘণ্টা দু’য়েকের অনুষ্ঠানের পুরোটাই চলল প্রশ্নোত্তর, মত বিনিময় নিয়ে।
কী বললেন শিলিগুড়ির বাসিন্দারা? কিষাণ অগ্রবাল ব্যবসায়ী। তিনি বললেন, শহরের গতি বাড়াতে হবে। রাস্তাঘাটে গাড়ি নিয়ে চলাচল করাই দায় হয়ে পড়েছে। অরবিন্দ ঘোষ রোড ট্রান্সপোর্ট সংগঠনের সদস্য। তিনি বললেন, হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, সেবক রোডের তো ফুটপাথেরই ঠিক নেই। রাস্তাও পার্কিং-এর দখলে। মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঞ্জয় টিব্রুওয়াল অটো ও টোটো ঠেকাতে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে বললেন। কিছুটা এগিয়ে স্টেশন ফিডার রোড ব্যবসায়ী সংগঠনের অসিত মিত্র বললেন, ‘‘শালুগাড়া, শালবাড়ি, ফুলবাড়ি বা জলপাইমোড়ে জাতীয় সড়ক তো বাজারই দখল করে নিয়েছে। অবিলম্বে তা দেখা দরকার।’’
শহরের চিকিৎসক সুশান্ত রায় যেমন আমেরিকার ট্র্যাফিক অভিজ্ঞতা কথা বলে, যানজট, দুঘর্টনা কমাতে ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টের উপর জোর দিলেন। এক স্কুল ছাত্রী দার্জিলিং মোড়ের যানজটের প্রসঙ্গ তুলে বলল, শহরে আরও উড়ালপুল হওয়া দরকার। আবার কয়েক জন পড়ুয়া তো বলেই ফেলল, ‘‘ম্যাডাম, গাড়ি, অটোর কালো ধোঁয়ায় তো দূষণ এবং অসুস্থতা বাড়ছে। এখনই কিছু করা দরকার।’’ শব্দদূষণ নিয়েই সরব হয়ে, এনজেপির এক স্কুলপড়়ুয়া বলল, ‘‘নানা অনুষ্ঠানে এমন মাইক বাজে যে, পড়াশুনোই করা দায়। শব্দদূষণে তো আমরা জেরবার।’’ অমিত সরকারের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য প্রশ্ন তুললেন, গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা করা হবে না কেন?
কমিশনার মন দিয়ে সব শুনেছেন। লিখেও নিয়েছেন বেশ কিছু পয়েন্ট। সম্প্রতি পথে নেমে যান নিয়ন্ত্রণ হেলমেটবিহীন চালকদের ধরপাকড় অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন নিজে। তাতেই সম্ভবত এ দিন শিলিগুড়িবাসী আরও জোর পেয়েছে তাঁর কাছে মন খুলে কথা বলার। অনেকেই মেনে নিয়েছেন, এমন মত দেওয়া-নেওয়ার সভা খুবই কার্যকরী ব্যাপার।
অন্য দিকে কমিশনারের মন্তব্য, ‘‘এ সবই তো শুনতে চাইছিলাম। এ বার পয়েন্ট ধরে ধরে কাজ
করতে হবে।’’
ছবি: সন্দীপ পাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy