Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতেও পাহারা

তবে নির্বিঘ্নে শপথগ্রহণ ও বোর্ড দখল হলেও আত্মতুষ্ট নন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, কাউন্সিলরদের যাতে চাপ দিয়ে কিছু করানোর চেষ্টা না হয়, সে জন্য সকলকেই দেহরক্ষী দেওয়ার আবেদন করেছে শাসক দল।

বাড়ি: অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে পুনম বিশ্বোয়ার।—নিজস্ব চিত্র।

বাড়ি: অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে পুনম বিশ্বোয়ার।—নিজস্ব চিত্র।

কিশোর সাহা
মিরিক শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ০৩:২৭
Share: Save:

ভোট গণনা শেষ হওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে মিরিক থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন ওঁরা ৬ জন। সেটা ছিল ১৭ মে। ১১ দিনের মাথায় ২৯ মে, সোমবার নিজের শহরে ফিরে পুরবোর্ড গঠনের পরে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পেয়ে কেউ কেঁদে ফেলেছেন। কেউ সন্তানকে আঁকড়ে ধরেছেন। কেউ আবার স্বামীর সঙ্গে মুখোমুখি টেবিলে বসে কফিতে চুমুক দেওয়ার ফাঁকে অজ্ঞাতবাসের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। যা শুনতে মিরিক লেকের ধারের পার্ক হোটেলে উপচে পড়ে ভিড়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কৌতুহলীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে তাঁদের। সে সময়ে কাছে বসে মিটিমিট হেসেছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। সৌরভ বলেছেন, ‘‘উফ, ক’টা দিন যা গিয়েছে! তবে ৬ কাউন্সিলরের যাতে এতটুকুও অসুবিধে না হয়, সেই জন্য প্রতিটি মুহর্ত সতর্ক থেকেছি।’’

তবে নির্বিঘ্নে শপথগ্রহণ ও বোর্ড দখল হলেও আত্মতুষ্ট নন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, কাউন্সিলরদের যাতে চাপ দিয়ে কিছু করানোর চেষ্টা না হয়, সে জন্য সকলকেই দেহরক্ষী দেওয়ার আবেদন করেছে শাসক দল। সরকারি সূত্রের খবর, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে তৃণমূলের সব কাউন্সিলরের জন্য দেহরক্ষী ও বাড়িতে পাহারার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।

কোথায় ছিলেন ৬ জন? সেই সন্ধ্যায় মিরিক থেকে বেরিয়ে সটান শিলিগুড়ির একটি হোটেল। দলের পর্য়বেক্ষক অরূপবাবুর সঙ্গে দেখা করানোর পরে কাউন্সিলরদের নিয়ে সৌরভবাবু হাজির হন এসজেডিএ-এর অধীনে থাকা ডুয়ার্সের একটি অতিথি নিবাসে। কড়া পুলিশ পাহারায় সেখানে শুরু হয় ৬ জনের অজ্ঞাতবাস। কিন্তু, মিরিকের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পুনম বিশ্বোয়ার কাছে অজ্ঞাতবাসের দিনগুলি ছিল ভারী চমৎকার। তিনি জানান, ওই কদিনে ডুয়ার্সের এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে ঘোরাফেরা করিনি। তিনি বলেন, ‘‘রোজই সকালের দিকে রাজনীতি নিয়ে কিছু আলোচনা হতো। বেলা বাড়তেই কোনও একটা সাফারিতে চলে যেতাম। সন্ধ্যা হলেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কোনও দিন আদিবাসীদের সঙ্গে নাচ। কোনদিন নেপালি গানবাজনা। আবার কোনদিন হিন্দি গানের সঙ্গে নাচ।’’

আচমকা নোটিসে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ায় জামাকাপড়ের সমস্যা হয়নি? লালবাহাদুর রাই, মণিকুমার তামাঙ্গ (জিম্বা)া জানান, দরকার হলে গাড়ি পাঠিয়ে মিরিক থেকে আনানো হয়েছে। আবার যাঁর জরুরি দরকার তাঁকে বাজারে থেকে কিনে দেওয়া হয়েছে। যেমন, সোমবার শপথগ্রহণে তৃণমূল কাউন্সিলররা নেপালিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেছিলেন। সকলের সঙ্গে ছিল না। সে জন্য শিলিগুড়ি থেকে তা কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন পূর্তমন্ত্রী তথা দলের দার্জিলিঙের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। পুনম বললেন, ‘‘প্রথমটা ছেলে, স্বামীকে ছেড়ে এতদিন কী ভাবে থাকব ভেবে মন কেমন করছিল। পরে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ হল। ওঁদের সঙ্গে রোজই যোগাযোগ ছিল। দলের জন্য এটা করাই যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC councilor missing Mirik Arup Biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE