ছিটমহলে জনগণনায় নাম নথিভুক্ত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে একটি চক্র টাকা তুলতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ চলে বছরভরই। প্রতি বছর শতাধিক বাংলাদেশি ধরা পড়ে পুলিশ ও বিএসএফের হাতে। বেআইনি ভাবে ভারত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়া এই সমস্ত মানুষদের ভারতের বাসিন্দা করে দেওয়ার টোপ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ছিটমহল বিনিময় কমিটির। জেলা প্রশাসনের কাছেও বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। ২ জুলাই বুড়িমারির বৈঠকে দু’দেশের প্রশাসনিক আধিকারিকদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
এই অবস্থায় শনিবার, জনগণনার কাজ শুরু করতে বাংলাদেশ থেকে ২৫ জনের একটি দল পৌঁছল কোচবিহারে। শনিবার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ওই দলটি কোচবিহারে পৌঁছয়। কোচবিহার থেকেও একটি ৫০ জনের দল বাংলাদেশের লালমনিরহাটে পৌঁছে গিয়েছে। আজ, রবিবার ওই দলের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবে দুই দেশের জেলা প্রশাসন। কাল, সোমবার থেকে জনগণনার কাজ শুরু করবে তাঁরা। ৬ জুলাই থেকে টানা দশদিন ওই সমীক্ষার কাজ চলবে।
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “জনগণনার কাজ চলার পাশাপাশি বাসিন্দাদের ছবি তোলার কাজও করা হবে। ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাইরে কেউ জনগণনায় সামিল হওয়ার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সবদিকে নজর রেখেই কাজ করছি।” ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাইরে যাতে কেউ ওই তালিকায় নাম ঢোকাতে না পারেন সে ব্যাপারে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় পক্ষ থেকেও তাদের সংগঠনের সদস্যদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কমিটির উদ্যোগে বাড়ি ধরে ধরে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
সংগঠনের সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন,“ছিটমহলের বাসিন্দাদের কারও নাম যাতে জনগণনার বাইরে না থাকে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। সে জন্য প্রত্যেক ছিটমহলবাসীকে জনগণনার সময় ছিটমহলে হাজির থাকার জন্য আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাইরের কেউ যাতে ওই তালিকায় নাম নথিভুক্ত করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।” কমিটির পক্ষ থেকে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১১ সালে ছিটমহলের জনগণনা হয়েছিল। সেই নিরিখে বাংলাদেশের ভূখন্ডে থাকা ভারতীয় ১১১ টি ছিটমহলের জনসংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন। ভারতীয় ভূখন্ড দিয়ে ঘেরা বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহলের জনসংখ্যা ১৪ হাজার ২১৫ জন। গত চার বছরে ওই সংখ্যার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করছে প্রশাসন । এই সময়ের মধ্যে নতুন করে অনেকের জন্ম হয়েছে অনেকে আবার মারাও গিয়েছেন। সবমিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি কি রয়েছে তা এই জনসংখ্যায় স্পষ্ট হবে। পাশাপাশি ছিটমহলের বাসিন্দারা কোন দেশে থাকতে চান তা নিয়েও তথ্য সংগ্রহের কাজ করবে জনগণনায় নিযুক্ত দল। অভিযোগ, ইতিমধ্যেই ছিটমহলের বাসিন্দা নন এমন কিছু বাংলাদেশের বাসিন্দা ছিটমহলে ঠাঁই নিয়েছেন। তাঁদের পাকাপাকি ভাবে এদেশের বাসিন্দা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় একটি চক্র টাকা তুলতে শুরু করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, কোনও ভাবেই ওই চক্র সফল হবে না। দুই দেশের ছিটমহলে ৭৫ টি টিম জনগণনার কাজ করবে। একটি টিমে একজন ভারতীয় একজন বাংলাদেশি থাকবেন। বাংলাদেশে ৫০ টি দল কাজ করবে। ভারতে ২৫টি। এদিন সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ ভারতীয় টিম চ্যাংরাবান্ধা হয়ে বাংলাদেশে যায়। দুপুর ২ টা নাগাদ বাংলাদেশের টিম ভারতে পৌঁছয়। তাঁদের দিনহাটায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy