মরিয়া: বাসে ওঠার লাইন দার্জিলিঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
দেড় মাস ধরে শিলিগুড়িতে মেয়ের কাছে ছিলেন। সোমবার ভিড় বাসে দাঁড়িয়ে শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং গেলেন তিনি।
তফসিলি জাতি, উপজাতি দফতরে দার্জিলিঙের ওই কর্মী, বি বি ব্রাহ্মণ শিলিগুড়ির দেবীডাঙায় থাকেন। সরকারি বাসে চালকের পাশে ইঞ্জিনের উঁচু অংশ কোনও রকমে বসে তিনি দার্জিলিং যান। হাজিরা দিয়ে আবার ওই বাস ফেরার সময় তাতে করেই ফিরবেন বলে নামার আগে চালককে অনুরোধ করে জায়গা রেখে গেলেন। না হলে জায়গা যে মিলবে না তা তিনি জানেন।
সোনাদার বাসিন্দা নইম আনসারির মা শিলিগুড়ির একটি নার্সিমহোমে পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। সে জন্য শিলিগুড়িতে ছিলেন। এদিন ভোরে তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসের সওয়ারি তিনিও।
বন্ধ পরিস্থিতি না ওঠায়, গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক না-হওয়ায় শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাতাযাত কতটা দুর্ভোগের তা তাঁরা টের পেলেন। নইম আনসারির কথায়, ‘‘বাসের জায়গা আগে না হেলে মিলবে না বলে শুনেছিলা। সে জন্য সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাস টার্মিনাসে চলে যাই। তাও কোনও রকমে শেষের দিকে একটা জায়গা পেয়েছি।’’
এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ জুলাই থেকেই পাহাড়ে সরকারি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে বন্ধ পরিস্থিতির জেরে। আন্দোলনকারীরা সরকারি বাস জ্বালিয়েও দিয়েছিল। গত ২৯ অগস্ট নবান্নে সর্বদল বৈঠকের পর সরকারি নির্দেশ আসে পাহাড়ে আবার বাস পরিষেবা চালু করতে। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে মিরিকে একটি বাস চালানো হচ্ছে। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কালিম্পঙে ১ টি বাস চালু করা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে দার্জিলিঙে যাচ্ছে ১টি বাস। সেখানে পৌঁছনোর পর যাত্রী নিয়ে আবার পুলিশি নিরাপত্তায় শিলিগুড়ি ফিরছে। যাত্রীদের ভিড় দেখে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২টি বাস দার্জিলিঙে পাঠানো হয়। সরকারি বাস চালু হয়েছে জেনে ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে। রবিবার তাই তিনটি বাস চালানো হয়।
এ দিন শিলিগুড়ি থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় দুটি বাস ভোরে দার্জিলিঙে রওনা হয়। জেলাশাসকের নির্দেশে কিছুক্ষণ পরে আরও দুটি বাস গিয়েছে। কালিম্পঙেও এ দিন দুটি গাড়ি এবং মিরিকে একটি গাড়ি গিয়েছে। এনবিএসটিসি’র শিলিগুড়ি ডিপোর ডিবিশনাল ম্যানেজার বিকাশ দাস বলেন, ‘‘পুলিশ নিরাপত্তা মেলায় বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে। যাত্রী ভিড় দেখে বাসও বাড়ানো হচ্ছে।’’
বেসরকারি গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় সরকারি গাড়িতে ভিড় উপচে পড়ছে। ঘুম থেকে এ দিন দার্জিলিঙের জজবাজারে চিকিৎসককে দেখাতে যান টি ভুটিয়া। তিনিও উঠেছেন বাসে। ভিড় বাসে গেটের কাছে কোনও রকমে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বলেন, ‘‘বেসরকারি যে গাড়ি দুই একটা চলছে তাতে দেড়শো, দুশো টাকা ভাড়া নিচ্ছে। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক না হলে দুর্ভোগ চলবেই।’’
কার্শিয়াং থেকে বেসরকারি গাড়ি কিছু চললেও দার্জিলিং থেকে হাতে গোনা কয়েকটি গাড়ি আসছে শিলিগুড়িতে। ভাড়াও চাইছে তিনশো থেকে পাঁচশো টাকা। প্রিয়াদেবী বলেন, ‘‘গাড়ি চলাচল নেই বলে বাড়ি যেতে পারছিলাম না। সরকারি গাড়িতে কষ্ট করেই যেতে হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy