Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
দক্ষিণ দিনাজপুর

সীমান্তে নজরদারি বাড়ছে, গ্রেফতার ৬

রানাঘাট কাণ্ডে হাবরার গোপাল সরকার গ্রেফতারের পর দুষ্কৃতীদের মোবাইল টাওয়ারের সূত্র ধরে রাজ্য পুলিশের সিআইডি তদন্ত বিস্তৃত হল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটেও। অভিযুক্তদের মোবাইল টাওয়ার লোকেশনে বালুরঘাটের হদিস মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, সিআইডি থেকে খবর পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

রানাঘাট কাণ্ডে হাবরার গোপাল সরকার গ্রেফতারের পর দুষ্কৃতীদের মোবাইল টাওয়ারের সূত্র ধরে রাজ্য পুলিশের সিআইডি তদন্ত বিস্তৃত হল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটেও। অভিযুক্তদের মোবাইল টাওয়ার লোকেশনে বালুরঘাটের হদিস মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, সিআইডি থেকে খবর পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

ঘটনাচক্রে এ দিন সকালে বালুরঘাটের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৬ জন বাংলাদেশি যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বয়স ২০ থেকে ৩২ বছর। তারা বিনা পাসপোর্টে হিলি সীমান্ত টপকে কেউ মহারাষ্ট্র কেউ গাজিয়াবাদে যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে বালুরঘাটে এসেছিল বলে জেরায় জানিয়েছে। ধৃতরা বাংলাদেশের দিনাজপুর, নীলফামারি এবং পাবনা জেলা বাসিন্দা। এ দিন তাদের বালুরঘাট আদালত থেকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ এবং রানাঘাট কাণ্ডের পরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে রোজ পালা করে সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিক পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও পরে তারা জামিন পেয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। কিছু দিন আগে তিন বিদেশি নাগরিককে পুলিশ গ্রেফতার করে। সেই নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছিলেন যে ব্যক্তি, তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়। বালুরঘাট শহরের খিদিরপুরের সুকান্তপল্লি এলাকার ঘটনা।

আইসি বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধৃত তিন জন বাংলাদেশের পার্বতীপুর এলাকার বাসিন্দা। তাদের কাছে কোনও পাসপোর্ট ভিসা ছিল না। তিন দিন আগে তারা অবৈধ ভাবে হিলি সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে বালুরঘাটে ঢুকে ওই বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তাদের অবৈধ ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বাড়ির মালিক জগন্নাথ মোহান্তকে পুলিশ ধরে। ধৃত তিন বাংলাদেশি মহম্মদ জয়চাঁদ, মহম্মদ বকুল এবং মহম্মদ হীরা-সহ ধৃত বাড়ির মালিককে পুলিশ বালুরঘাট আদালত থেকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।” তবে ধৃত অনুপ্রবেশকারীদের জিজ্ঞাসাবাদের মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো জেলা পুলিশের নেই বলে তদন্তকারী এক অফিসার স্বীকার করেন। ফলে উপযুক্ত তদন্ত ও তথ্য প্রমাণের অভাবে ধৃতরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে বলে ওই অফিসারের দাবি। এদের আড়ালে দাগী দুষ্কতী থেকে জঙ্গিদের থাকার সম্ভবনার কথা উড়িয়ে দেননি ওই অফিসার।

হিলি সীমান্তের নিশ্চিত করিডর ব্যবহার করে এপারে দুষ্কর্ম ঘটিয়ে ওপারে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এর আগেও গোয়েন্দারা পেয়েছিলেন। তত দিনে পাখি উড়ে গিয়েছিল। যেমন কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে পুলিশের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত দুই দুষ্কৃতী উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে কিছু দিন লুকিয়ে থাকার পরে হিলি দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়েছিল। ওপারের পাচারকারীদের যাতায়াতের পছন্দের পথ হিলি এবং কুমারগঞ্জ সীমান্ত কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গি কুমারগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে এপারে ঢুকে পালাতে সক্ষম হয় বলে গোয়েন্দারা পরে জানতে পারেন। ফলে রানাঘাট কান্ডের পর অভিযুক্তদের একাংশ বালুরঘাট হয়ে হিলি সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে গিয়েছে কি না, পুলিশ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, বাংলাদেশ এবং মায়াম্মার থেকে গত এক বছরে স্রোতের মতো এপারে অনুপ্রবেশকারী ঢুকছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে সীমান্তে চুরি, ছিনতাই ডাকাতি ও খুনের মতে অপরাধ। গত বছর পুজোর সময় থেকে ও চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে হিলিতে একাধিক বাড়িতে রাতে চড়াও চালিয়ে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। এক মহিলা খুন হন। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছিলেন ৪ জন গৃহবধূ।

জনতার হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়েছিল। তার পরিচয় মেলেনি। বালুরঘাটের পতিরামে চার্চের সামনে এক সিস্টারের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনতাই এবং বালুরঘাট শহরে পর পর চুরি, জেলা পরিষদে ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ভিনদেশি দুষ্টচক্রের যোগসাজশ রয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। তবে এখনও কেউ ধরা পড়েনি বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া দাবি করেন, “অনুপ্রবেশকারীদের ধরে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বেশ কিছু দুষ্কৃতীকে ধরা হয়েছে।”

হিলি সীমান্তে কাঁটাতারহীন এলাকা দিয়ে দুর্বৃত্তরা ঢুকে পড়ছে বলে বিএসএফের দাবি। সমস্যার কথা তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে বিএসএফের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE