রায়গঞ্জে কর্মিসভায় শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সভা-সমাবেশে, মিছিলে ভিড় উপচে পড়লেও উত্তর দিনাজপুরে ভোটে কেন বারেবারে দল মুখ থুবড়ে পড়ছে সেই প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল নেতা-সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
সোমবার সন্ধ্যায় রায়গঞ্জে কর্মিসভায় যোগ দিতে গিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘উত্তর দিনাজপুরে মিটিং-মিছিলে ভিড় উপচে পড়ে। অথচ লোকসভায় ফল খারাপ হয়েছে। পুরসভাতেও দলের ফল খারাপ হয়েছে। কংগ্রেস জিতে যায়। কী ভাবে কংগ্রেস জিতছে?’’ এর পরেই লোকসভা ভোটের পর পুরসভা নির্বাচনেও ভরাডুবির জন্য দলের জেলা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁদের সতর্ক করেন তিনি।
তৃণমূলের উদ্যোগে সোমবার বিকালে রায়গঞ্জে বিধান মঞ্চে আয়োজিত কর্মিসভায় যোগ দিয়ে শুভেন্দুবাবু জানান, উত্তর দিনাজপুর জেলায় দলের সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফলে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী সন্তুষ্ট নন। জেলায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে দলনেত্রী যথেষ্টই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। শুভেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘সেই কারণেই দলনেত্রী তাঁকে উত্তর দিনাজপুরে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর জন্য তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন।’’
ওই কর্মিসভায় শুভেন্দুর প্রশ্ন, উত্তরবঙ্গের মালদহ, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূল শক্তিশালী ও নির্ণায়ক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে, উত্তর দিনাজপুর জেলায় কেনও শক্তিশালী হবে না? কেনও এ জেলায় কংগ্রেস এগিয়ে থাকবে? শুভেন্দুর এই প্রশ্নে মঞ্চে থাকা জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য, কার্যকরী সভাপতি শেখর রায়, জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি গৌতম পাল, আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অরিন্দম সরকার ও অমলবাবুর বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত শিবিরের নেতা তিলক চৌধুরী-সহ জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা অস্বস্তিতে পড়ে যান।
শুভেন্দুবাবু সুর চড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘জেলায় দলের অনেক নেতাই বলেছেন আমরা কংগ্রেসের একাধিক জেলা পরিষদের সদস্য, ডালখোলা পুরসভার একাধিক কংগ্রেস কাউন্সিলর ও গোয়ালপোখরের কংগ্রেস বিধায়ককে দলে টেনে দলকে শক্তিশালী করেছি। বিরোধী দলের নেতা, কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের দলে না টানলে দলকে কখনও শক্তিশালী করা সম্ভব নয়।’’
শুভেন্দুবাবু এর পর জেলা নেতাদের সতর্ক করে বলেন, ‘‘কেশপুর, গড়বেতা, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর ও হলদিয়া একসময়ে সিপিএমের শক্তঘাঁটি থাকলেও এখন সেইসব এলাকায় সিপিএমকে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়। তাঁর বক্তব্য, তাহলে উত্তর দিনাজপুরে কেনও কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি থাকবে?’’
উল্লেখ্য, এদিনের কর্মিসভায় দলের জেলা ও ব্লক নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, দুর্নীতি, প্রবীণদের গুরুত্ব না দেওয়া, কোনও কাজের বিনিময়ে উৎকোচ নেওয়ার মতো একাধিক অভিযোগ ওঠে। কর্মিসভার শেষে শুভেন্দুবাবু তাঁদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি সব শুনলাম। আবার ২০ জুনের পরে জেলায় এসে কর্মিসভা করব। অতীতকে ভুলে যান। আত্মসমালোচনা ও দোষারোপের পালা বন্ধ করে এবারে নিজ নিজ বুথে দলের ভিত শক্তিশালী করুন।’’
উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সিকে হারাতে তৃণমূল দীপাদেবীরই দেওর পবিত্ররঞ্জন দাশমুন্সিকে প্রার্থী করেছিল। তবে শেষরক্ষা হয়নি। সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের কাছে দীপাদেবী ১৬৩৪ ভোটে পরাজিত হওয়ার পর তৃণমূল শিবিরে সাময়িক স্বস্তি দেখা গেলেও প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির পরে তৃণমূলের স্থান হওয়ায় জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ রাজ্য নেতৃত্বের ভর্ৎসনার শিকার হন।
একই ভাবে সদ্য শেষ হওয়া কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। দুটি পুরসভার ১৭টি করে ওয়ার্ডের মধ্যে কালিয়াগঞ্জে একটি আসনও দখল করতে পারেনি তৃণমূল। ইসলামপুরে অবশ্য তিনটি ওয়ার্ডে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমলবাবু বলেন, ‘‘জেলায় দলের সর্ব স্তরের নেতা, কর্মী ও সমর্থক ও শাখা সংগঠনগুলিকে নিয়ে আমরা দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy