স্বস্তি: শিলিগুড়ি শহরে বৃষ্টি। বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
প্রবল দাবদাহে দগ্ধ শিলিগুড়িতে এল এক অন্য ‘শাওন!’। যাতে ভিটেছাড়া এক মায়ের কোল আলো হয়ে গেল। তাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন পাহাড়ে অত্যাচারের জেরে শিলিগুড়িতে আশ্রিত শতাধিক পাহাড়ি পরিবার। যাঁর কোলে এল সদ্যোজাত শাওন, সেই ২৫ বছর বয়সী তরুণী তখন অঝোরে চোখের জল ফেলছেন। কারণ, তাঁর বেশির ভাগ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবই যে পাহাড়ে। বংশের প্রথম সন্তানের জন্মের দিনে তাঁরা কেউই থাকতে পারলেন না।
তাই চোখের জল মুছে সবে মা হওয়া তরুণী বললেন, ‘‘গোলমাল চিরদিন চলে না। শান্তি ফিরলেই শাওনকে নিয়ে পাহাড়ে ফিরে যাব। ছেলে বড় হলে সবই ওকে বলব।’’
পাহাড়ে গোলমাল শুরু হতেই আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য নানা এলাকায় অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। জবরদস্তি চাঁদা আদায়, ভাঙচুর, হুমকি, জাতিবিদ্বেষী তকমা দিয়ে একঘরে করার চেষ্টা সহ ভূরি ভূরি অভিযোগ। যে সব এলাকায় অত্যাচার চরমে পৌঁছেছে, ঘরদোর পুডিয়ে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানকার শতাধিক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন শিলিগুডড়িতে। সেই পরিবারের মধ্যে ছিলেন ওই অন্ত্বঃসত্ত্বা বধূ ও তাঁর স্বামী। ইতিমধ্যে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে পাহাড়ে না ফিরলে আর পাহাড়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
এর পরে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন বধূটি। খবর পেয়ে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব ওই বধূকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, আতঙ্কের কারণেই অস্থির হয়েছেন প্রসূতি। নির্ধারিত সময়ে দেরি থাকলেও বিশেষজ্ঞরা দ্রুত প্রসব করানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো মঙ্গলবার রাতেই অস্ত্রোপচার হয়। সে সময়ে শিলিগুড়ির তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনভর গরমে হাঁসফাস করেছেন প্রসূতি। সন্তান হওয়ার পরে ছোট্ট শিশুকে দেখে অঝোরে কেঁদেছেন তিনি। পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ‘‘শিলিগুড়িতে ওঁদের কোনও অসুবিধে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু, শুভদিনে নিজের সব পরিজনদের পাশে পেলে ওঁদেরও ভাল লাগত।’’
তা দেখেই তরুণীর স্বামী ঠিক করেন, তাঁদের দগ্ধ জীবনযাপনে যেন বৃষ্টি হয়ে নেমে এসেছে শিশুটি। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তরুণ তখনই তাঁর সন্তানের নামকরণ করেন শাওন। শিলিগুড়িতে এ দিন সামান্য বৃষ্টি হয়ে সেই নামকরণ যেন সার্থক করে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy