Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মোটরবাইক দাপিয়ে ফিরে আসছে আইনুদ্দিনরা

মহব্বতপুরের বছর বাইশের যুবক আইনুদ্দিন শেখ (নাম পরিবর্তিত)। কয়েক বছর আগেও তাঁর বাড়ি বলতে ছিল বাংলা ভাটার ইট দিয়ে তৈরি দুটি ঘর। তাতে পলেস্তারার বালাই নেই। মাথার উপর ছিল লড়ঝড়ে টিনের চাল। বর্ষায় ফুটো চাল দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ত।

নকল: ফেব্রুয়ারিতে মালদহে উদ্ধার হওয়া জাল দু’হাজার টাকার নোট। নিজস্ব চিত্র

নকল: ফেব্রুয়ারিতে মালদহে উদ্ধার হওয়া জাল দু’হাজার টাকার নোট। নিজস্ব চিত্র

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০২:০১
Share: Save:

মহব্বতপুরের বছর বাইশের যুবক আইনুদ্দিন শেখ (নাম পরিবর্তিত)। কয়েক বছর আগেও তাঁর বাড়ি বলতে ছিল বাংলা ভাটার ইট দিয়ে তৈরি দুটি ঘর। তাতে পলেস্তারার বালাই নেই। মাথার উপর ছিল লড়ঝড়ে টিনের চাল। বর্ষায় ফুটো চাল দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ত। তখন ওপরে ত্রিপল টাঙাতে হতো। তাতেই বাবা, মা, চার ভাইবোন থাকত আইনুদ্দিন।

কিন্তু তিন বছরের মধ্যেই আইনুদ্দিনের বাড়ির ভোল বদলাতে শুরু করে। দুটি ঘর ভেঙে চারটি ঘর নিয়ে ঝাঁ-চকচকে বাড়ি তৈরি হয়। টিভি, দামি খাট, হাতে দামি অ্যান্ড্রয়েড ফোন। ঝকঝকে মোটরবাইক নিয়ে সে এলাকায় দাপিয়ে ঘুরতে থাকে। মাঝে মাঝে বাইরেও যেত। এক বছর আগে ধুমধাম করে বিয়েও হয় তার।

হঠাৎ কোন জাদুকাঠিতে এই পরিবর্তন? এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘‘এর পিছনে যে জাল নোটের ‘ছোঁয়া’ রয়েছে, তা অনেকেই বুঝতে পারেন। কিন্তু পাচার কারবারিদের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের যোগ থাকে। তাই মুখ ফুটে কেউ কখনও কিছু বলে না।’’

বাসিন্দারা দাবি করেছেন, নোট বাতিলের কিছু দিন পর থেকে সেই আইনুদ্দিনের ঠাঁটবাট কমতে থাকে। বাইক নিয়ে দাপাদাপিও কমে যায়। মাসখানেক পর দেখা যায়, সে আর এলাকায় নেই। পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, বাইরে গিয়েছে।

সম্প্রতি আবার গ্রামে ফিরেছে আইনুদ্দিন। তার পর থেকেই গ্রামবাসীদের মধ্যে ঘুরছে প্রশ্ন— জাল নোটের কারবার ফের মাথাচাড়া দিতেই কি আইনুদ্দিন ঘরে ফিরল? সীমান্তের গ্রামগুলিতে কান পাতলে এমন অনেক আইনুদ্দিনেরই সন্ধান মেলে, তা সে ষষাণি হোক বা খড়িবোনা। এই অবস্থায় সকলের মনে স্বাভাবিক প্রশ্ন, কালিয়াচক কি ফিরছে কালিয়াচকেই?

জাল চিনতে

• নোটের কাগজের মান খারাপ।

• ফ্লুরোসেন্ট জলছাপ নেই।

• সিকিউরিটি থ্রেড থাকে না।

•দৃষ্টিহীনদের জন্য টাচমার্ক নেই।

•নোটের রং উজ্জ্বল নয়।

পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়েছে পরপর জাল নোট-সহ লোকজন পাকড়াও হওয়ায়। কয়েক দিন আগে তো চরিঅনন্তপুরে সীমান্তের ও পার থেকে ১০০টি দু’হাজারি নোট ছুড়ে দেওয়া হয় এ পারে। সেটা উদ্ধার করে বিএসএফ। তারা পরে জানিয়েছে, নতুন জাল দুহাজারি নোটে সিকিউরিটি থ্রেড খুব একটা খারাপ নয়। ফলে সাধারণ লোক চট করে ধোঁকা খেয়ে যেতে পারে।

এনআইএ সূত্রে খবর, কালিয়াচক ৩ ব্লকের ওপারেই বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জ জেলায় পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই অন্তত দু’টি অফসেট বসিয়ে জাল ভারতীয় নোট ছাপার বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। সেই নোটই পাচার হয়ে এপারে আসছে। এনআইয়ের এক আধিকারিক জানান, আর এই পাচারে কাজে লাগানো হচ্ছে পুরনো পাণ্ডাদেরই। কারণ, তারা আটঘাট জানে।

বিএসএফের মালদহের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন, নতুন করে জাল নোটের কারবার শুরু হওয়ার পরে সীমান্ত এলাকায় বহিরাগতদের ব্যাপারে নজরদারি শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীদের বলা হয়েছে, কেউ এসে কয়েক দিন থাকলেই প্রশাসনকে জানান। সঙ্গে চলছে টহলদারিও। বিএসএফের মালদহের ডিআইজি অমরকুমার এক্কা থেকে মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ, সকলেই তদন্তে গতি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fake Currency Traffciking Poor Rich
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE