দৃষ্টান্ত: রেখা গোপ। নিজস্ব চিত্র
কখনও হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে বাড়ি পৌঁছে দেন। কখনও আবার পুলিশ-প্রশাসন-স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে দিনের পর দিন পড়ে থেকে গ্রাম থেকে ভিনরাজ্যে পাচার হওয়া কিশোরীদের ফিরিয়ে আনেন। কোথাও নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে শুনলে তা বন্ধ করতে সটান হাজির হয়ে যান। সব কাজ একা করা যাবে না। তাই গোটা জেলার ১২ হাজার নাবালিকাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই কাজে সামিলও করেছেন ২৬ বছরের রেখা। আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার হতদরিদ্র এক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন তিনি।
দেশ জুড়ে মেয়েদের জন্য কাজ করে নজর টেনেছেন যাঁরা, সেই তালিকায় প্রথম সারিতে নাম উঠেছে রেখার। তাতেই উদ্দীপিত ডুয়ার্সের মফস্বল শহর ফালাকাটা ও লাগোয়া এলাকা।
তাঁর পুরো নাম রেখা গোপ। বাবা দ্বিগ্বিজয়বাবু সরকারি অফিসের অস্থায়ী কর্মী। একেবারেই ছাপোষা মানুষ। রেখা যখন সবে প্রাথমিকে সে সময়ে ডায়েরিয়ায় মৃত্যু হয় তাঁর দুই কাকার। ছোট্ট মেয়েটি স্কুলে গিয়ে জানতে পারে, একটু নুন-চিনি জল বারবার খাওয়ালে দুই কাকার মৃত্যু হয়তো হতো না। রেখা তখনই ঠিক করে নেন, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ছোটখাটো বিষয়গুলি শিখে নিয়ে গ্রামে শেখাবে। দর্শনে এমএ করেছেন তিনি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সংস্পর্শে এসে কমবয়সী মেয়েদের নানা বিপদ থেকে বাঁচানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন রেখা।
গ্রামে গ্রামে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সবলা বাহিনী, কন্যাশ্রী বাহিনী গড়ে পাচার, যৌন হেনস্থা রোখার কাজে তাঁদের সামিল করেন। গত ডিসেম্বরেই ফালাকাটার মুণ্ডাবস্তি, মাদারিহাট সহ কয়েকটি এলাকার ২২টি কিশোরীকে হরিয়ানা, চণ্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে ১৮ জনকে উদ্ধার করেছেন তিনি। গত ৩ বছরে এমন ৪২ জনকে উদ্ধার করেছেন। সাইকেলে, স্কুটিতে চা বাগানে ঘুরে বেড়ান।
সম্প্রতি দিল্লির একটি সংস্থার তরফে ফালাকাটায় গিয়ে টানা কয়েকদিন ধরে রেখার কর্মকাণ্ড নিয়ে সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র তোলা হয়েছে। এমন সম্মানে খুশি হলেও রেখা উচ্ছ্বসিত নন। তাঁর কথায়, ‘‘ডুয়ার্সের চা বলয়ের অনেক কিশোরী এখনও বাইরে। তাদের ফেরাতে হবে।’’ এ কথা বলেই বোনকে পেছনে বসিয়ে স্কুটি নিয়ে ছোটেন চা বাগানের দিকে। সে দিকে তাকিয়ে বাবা দিগ্বিজয়বাবু দু-হাত কপালে ঠেকিয়ে বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা ভয় পেতাম। কিন্তু, বুঝলাম, মানুষের ভালবাসা ওঁকে ঘিরে আছে। কেউ কিছু করতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy