Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

একে অপরকে নিয়ে থাকেন মজিদুল, গৌতমরা

আড়াইশো তিনশো পরিবারের জন্য এই একটিই পানীয় জলের কল। সেখান থেকেই জল নেন আলেমা, মজিদুল, গৌতম, রাজু। কোচবিহারের ঘুঘুমারিতে তোর্সা নদীর পাড়ে এই কলটিই এলাকায় সম্প্রীতির স্মারক হয়ে উঠেছে।

জল-সই: এক কল থেকে জল নিচ্ছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।

জল-সই: এক কল থেকে জল নিচ্ছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ১২:৫০
Share: Save:

আড়াইশো তিনশো পরিবারের জন্য এই একটিই পানীয় জলের কল। সেখান থেকেই জল নেন আলেমা, মজিদুল, গৌতম, রাজু।

কোচবিহারের ঘুঘুমারিতে তোর্সা নদীর পাড়ে এই কলটিই এলাকায় সম্প্রীতির স্মারক হয়ে উঠেছে। শুধু জল নেওয়া নয়, গৌতম, রাজুদের যে কোনও প্রয়োজনে হাজির আলেমা, মজিদুল। আবার উল্টোটাও সব সময় সত্যি। সে কথা এলাকার লোকের মুখে মুখেও ঘোরে। কয়েকজন বলেন, “পানীয় জল যখন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ভাগাভাগি করে নিই, তখন ভাল লাগে।”

হিন্দু, মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষেকেই সেখানে দেখা যায় পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতে। বড় বড় গাছের ছায়ায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান অনেকে। সেখানে সংসারের গল্প হয়। গ্রামের অনেক কথা হয়। এই গ্রামটি যে পিছিয়ে রয়েছে, সে কথাও উঠে আসে। শ্মশানের মধ্যেই বছরে একবার অষ্টপ্রহরের আসর বসে। সেই আসরে দুই সম্প্রদায়ের মানুষকেই দেখা যায়। এক সঙ্গে চাঁদা তোলা থেকে পরিষ্কার, পরিছন্নতার কাজে কেউই পিছিয়ে থাকেন না।

এখানে বসতি গড়ে উঠেছে বহু কাল হল। গুটি কয়েক হিন্দু পরিবারের বাস। বাকি কয়েকশো পরিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের। বেশির ভাগ মানুষই দিনমজুরি করে সংসার চালান।

সেই গ্রামের মানুষের পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। বাসিন্দারা জানান, প্রায় দু’কিলোমিটার দূর থেকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হত তাঁদের। বছর খানেক আগে জেলা পরিষদের তিন লক্ষ টাকায় পানীয় জলের একটি প্রকল্প বসানো হয়। সেই থেকে ওই জল ভাগ করে খান এলাকার মানুষ।

সেই সঙ্গে ভাগ করে নেন জীবনের সুখ-দুঃখও। যে কোনও সমস্যায় তাঁরা একে অপরের পাশে দাঁড়ান। বিপদ পড়লে কেউ ভাবেন না, কে কোন সম্প্রদায়ের।

গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সাবেদ আলি মিয়াঁ বলেন, “বহু বছর ধরে আমরা এক সঙ্গে আছি। একে অপরের পাশে থেকেছি। কোনওদিন কোনও সমস্যা হয়নি। জল আনতে গেলেও কেউ বাধা দেয়নি।”

যে কারণে গ্রামের কচিকাঁচারাও এই পরিবেশেই বড় হচ্ছে।

রাজু রজক বলেন, “ভেদাভেদ বুঝি না। সবাই মানুষ। যে যার ধর্ম পালন করেন। আর যে কোনও সমস্যায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তো বড় ধর্ম।” কোচবিহার জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, “সবাই মিলে একসঙ্গে থাকার থেকে আনন্দ যে আর কিছুতে নেই তা তাঁরা সহজ করে রোজকার জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এটা দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Communal harmony Cooch Behar Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE