নজরুল জয়ন্তী উদযাপন পরিকল্পনা নিয়ে নির্দল কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠক করলেও, বির্তক পিছু ছাড়ছে না শিলিগুড়ি পুরসভার সদ্য গঠিত বোর্ডের। এ বার অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ জানালেন তৃণমূল কাউন্সিলর নান্টু পাল।
শহরের পাকুড়তলা মোড়ের নজরুল ইসলামের মূর্তির সামনেই প্রতি বছর পুরসভার অনুষ্ঠান হয়। ১৫ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝামাঝি এলাকায় মূর্তিটি রয়েছে। সে কারণে এতদিন পুরসভার এই অনুষ্ঠানে সামিল থাকেন দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরই। এটাই প্রথা। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নান্টু পাল মেয়র পদের ভোটাভুটিতে প্রার্থী হয়েছিলেন। নান্টুবাবুকে হারিয়ে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সেই নান্টুবাবুকে নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় সামিল করা হয়নি বলে অভিযোগ।
নান্টুবাবুর অভিযোগ, শুধুমাত্র একটি আমন্ত্রণের চিঠি পাঠিয়েই দায় সেরেছে পুর কর্তৃপক্ষ। নতুন পুরবোর্ডের সৌজন্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে নান্টুবাবুর কটাক্ষ, ‘‘আজকে যাঁরা পুরসভার পদে বসেছেন, ভোটের প্রচারে দলতন্ত্র নিয়ে তাঁদের মুখে অনেক কথা শোনা গিয়েছিল। বোর্ড গঠনের পরেও সকলকে নিয়ে চলার কথা বলা হয়। তা যে কাজে করা হবে না, নজরুল জয়ন্তীর চিঠি পেয়ে বুঝলাম। আমাকে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় সামিল করায় হয়তো ওদের আপত্তি রয়েছে, তবে সৌজন্যের খাতিরে একটা ফোন অবশ্য আশা করেছিলাম।’’ মেয়র অশোকবাবু অবশ্য নান্টুবাবুর ‘দলতন্ত্রের’ আশঙ্কা অমূলক বলে দাবি করে বলেন, ‘‘সকলকে নিয়েই অনুষ্ঠান হবে। শনিবার শিলিগুড়িতে ফিরছি। সবার পরামর্শ, মতামত শুনব।’’
নজরুল জয়ন্তী নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষকে অনুষ্ঠানে সামিল না করার অভিযোগ নিয়ে। বামেদের সমর্থন করে শিলিগুড়ি পুরবোর্ডের ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৪-এ পৌঁছে দেন অরবিন্দবাবুই। সমর্থন করার চিঠিতে বেশ কিছু প্রস্তাবও রেখেছিলেন অরবিন্দবাবু। এলাকায় যিনি ‘অমুদা’ নামেই বেশি পরিচিত। সেই প্রস্তাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার কথা বললেও, নিজের ওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে তাঁকেই ব্রাত্য রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। বামপন্থী একটি গণ সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করে, অমুদাকে শুধু আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে তাঁর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং শহরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা অভিযোগ তোলেন। নতুন পুরবোর্ডের প্রথম অনুষ্ঠানের নিয়ে ক্ষোভ-বির্তক তৈরি হয়েছে টের পেয়েই শুক্রবার সকাল থেকে আসরে নামেন বাম নেতৃত্ব। এ দিন সকালেই অরবিন্দবাবুর বাড়িতে যান সিপিএম কাউন্সিলর শঙ্কর ঘোষ। মেয়র কলকাতায় থাকায় নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব শঙ্করবাবুই সামলাচ্ছেন। বাড়িতে গিয়ে অরবিন্দবাবুর সঙ্গে কথা বলে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন তিনি।
শঙ্করবাবুর অনুরোধে এরপর দুপুরে পুরসভায় গিয়ে অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করেছেন অরবিন্দবাবু। অরবিন্দবাবুর কথায়, ‘‘এ দিন নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার মতামত জানিয়েছি।’’ অমুদাকে নিয়ে বির্তক মিটতে না মিটতেই, সৌজন্যে নিয়ে অভিযোগ তুলে অস্বস্তি বাড়িয়েছেন নান্টুবাবু।
এ দিকে পুরভবনে কংগ্রেসের পর বিজেপিও পরিষদীয় দলের ঘর চেয়ে দাবি জানাতে চলেছে। এতদিন পুরসভায় শুধুমাত্র তৃণমূলের পরিষদীয় দলেরই ঘর বরাদ্দ ছিল। এবারে বিরোধী দলনেতার ঘরটি পেতে চলছে তৃণমূল। পুরসভায় কংগ্রেসের চার কাউন্সিলর রয়েছেন। কংগ্রেসের তরফে একটি ঘর চেয়ে মেয়রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরিষদীয় দলনেতা সুজয় ঘটক সেই চিঠি দিয়েছেন। বিজেপির কাউন্সিলর সংখ্যা দুই। বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা মালতী রায় বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমরা ঘর চেয়ে চিঠি দেব।’’ অশোকবাবুর কথায়, ‘‘পুরসভায় কত ঘর দেখা হচ্ছে। ইচ্ছে রয়েছে পুরসভায় সব কাউন্সিলরদেরই বসার ঘরের ব্যবস্থা করার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy