রাজবাড়ির কালী। — নিজস্ব চিত্র
পুরোহিত আসতেন কাশ্মীর থেকে। প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হত শোল ও বোয়াল মাছের ঝোল। রাজ পরিবারের লোকজন হাতি চেপে হাজির হতেন ওই পুজোয়। সমস্ত প্রজাদের পেট পুরে প্রসাদ খাওয়ানো হত। এখন সেই রাজকীয় জৌলুস নেই। পুজোর জন্য ট্রাস্টি বোর্ডের বরাদ্দ মাত্র এক হাজার টাকা। ফলে বাহারি আলোকসজ্জা বা চোখ ধাঁধানো মণ্ডপসজ্জা সম্ভব নয়। কিন্তু রাজবাড়ির পুজো বলে কথা! তাই ৪০০ বছরের পুরনো মালদহের চাঁচলের মালতীপুর কালীবাড়ির পুজোর আকর্ষণ আজও কমেনি এতটুকুও।
একসময় এই কালীমন্দিরে পুজো দিয়েছেন রানি রাসমণি। চাঁচল রাজ পরিবারের আত্মীয়, অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ও চাঁচলে এলে মালতীপুর কালীবাড়িতে পুজো দিতে ভুলতেন না। ওই দেবী আজও এলাকার বাসিন্দাদের কাছে জাগ্রতদেবী হিসাবেই পরিচিত। পুরনো রীতি মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন করা হয়। বাইরের পুজো দেখার পাশাপাশি এক বারের জন্য হলেও তাই মালতীপুরে আসতে ভোলেননা দর্শনার্থীরা। স্থায়ী মন্দিরে সারাবছর ধরেই পুজো হয়। কিন্তু কালীপুজোর সময় স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের মতো করে ফুল ও আলোয় মন্দির সাজিয়ে তোলেন। শুধু চাঁচল মহকুমার বাসিন্দারাই নন। দুই দিনাজপুর, বিহার, ঝাড়খন্ড থেকেও ঐতিহ্যের টানে মালতীপুরে হাজির হন দর্শনার্থীরা। ট্রাস্টি বোর্ডের স্থানীয় পর্যবেক্ষক পিনাকীজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মালতীপুরের দেবী এলাকায় জাগ্রত, মনস্কামনা পূরণের দেবী হিসেবে পরিচিত। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা সবরকম সাহায্য করেন।’’
এলাকায় কান পাতলে কয়েক শতকের পুরনো ওই পুজোকে ঘিরে রকমারি গল্প শোনা যায়। পুজো শুরু করেছিলেন কে, তা নিয়েও ভিন্নমত রয়েছে। এক সময় মালতীপুরে জমিদারি ছিল উত্তর ২৪ পরগনার টাকির জমিদারদের। তাদের কাছ থেকে ওই জমিদারি লাভ করেছিলেন চাঁচলের রাজার পূর্বপুরুষেরা। ফলে কারও মতে টাকির জমিদার আবার কারও মতে চাঁচল রাজ পরিবারের উদ্যোগে পুজো শুরু হয়েছিল। তবে প্রতিষ্ঠাতা যেই হোন, ওই পুজোকে চাঁচল রাজবাড়ির পুজো বলেই মনে করেন বাসিন্দারা। এও শোনা যায়, চাঁচলে রাজবাড়ি লাগোয়া ঠাকুরবাড়িতে ওই কালীপুজোর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল রাজ পরিবার। সেইজন্য আড়াই হাতের অষ্টধাতুর মূর্তি গড়তে দেওয়া হয় কাশীতে। তখন যোগাযোগ বলতে ছিল নদীপথ। রাজ পরিবারের কর্মীরা বজরায় সেই মূর্তি নিয়ে চাঁচলে আসার সময় ঘন জঙ্গলে ভরা মালতীপুরে রাত হয়ে যাওয়ায় সেখানকার কাছারিবাড়িতে থেকে যান তারা। পরদিন বহু চেষ্টা করেও সেই বজরা নাকি আর চাঁচল রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। তারপর সেখানেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy