অভিযুক্ত: এই দু’জনের বিরুদ্ধে সরব বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
প্রেসক্রিপশনে নামের পাশে লেখা এমবিবিএস। কিন্তু বেশি প্রশ্ন করলেই এক জন একবার বলছেন, মেডিক্যালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর একবার বলছেন, হোমিওপ্যাথ। অন্য জন কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে যাননি। সাফ বলে দিলেন, তিনি হাতুড়ে।
দু’জনের বিরুদ্ধেই স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, তাঁরা চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে চেম্বার খুলে বসেছেন। রোগীও দেখে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এ দিন ইংরেজবাজারের ৩ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির দুই ভুয়ো ডাক্তার সিদ্ধার্থ কর্মকার ও আইনুল হককে আটক করেছে। তাদের কাছ থেকে যে কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের।
গভর্নমেন্ট কলোনিতে দু’জনের পৃথক চেম্বার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসচারেক ধরেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে চেম্বারগুলো চলছে। সেখানে ভিড়ও জমছে। সেই ভিড় জমানোর পিছনে অবশ্য দুই ‘ডাক্তারের’ কৌশলও রয়েছে। অভিযোগ, তাঁরা স্থানীয় রিকশাচালকদের টাকা দিয়ে রোগী জোগাড় করার ব্যবস্থা করেন। বিশেষ করে যাঁরা গ্রামগঞ্জ থেকে ইংরেজবাজারে এসেছেন ডাক্তার দেখাতে।
দুই ‘ডাক্তারের’ হাবভাবে স্থানীয় মানুষেরই সন্দেহ হয়। তাঁরাই গিয়ে দুই চেম্বারে হানা দেন। তখন মানিকচকের মথুরাপুরের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ নিজেকে একবার হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক, একবার মেডিক্যালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বলে দাবি করেন। কথায় অসংগতি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। তার পরেই হানা দেওয়া হয় মোথাবাড়ির বাসিন্দা আইনুল হকের চেম্বারে। তিনি নিজেকে হাতুড়ে চিকিৎসক বলে পরিচয় দেন।
এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের আটক করে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মুখে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক বলছেন, আর প্রেশক্রিপশনে লিখছেন এমবিবিএস! তিনি রোগীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে ভিজিটও নিয়ে নিচ্ছেন।
পেটের সমস্যা নিয়ে সিদ্ধার্থের কাছে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন শিবানী মহলদার। তিনি হকচকিয়ে যান। বলেন, ‘‘এক জন রিকশাচালক বলল, এই ডাক্তার খুব ভাল। তাই এখানে চিকিৎসা করাতে এসেছি।’’ তাঁর চোখের সামনে দিয়েই পুলিশ সিদ্ধার্থকে ধরে নিয়ে যায়। শিবানী দেবীর কথা, ‘‘আমরা গ্রামের মানুষ। শরীর খারাপ হলে চিকিৎসা করাতে আসি। এত কিছু কী করেই বা বুঝব!’’
আইনুল ও সিদ্ধার্থ দাবি করেন, ‘‘আমাদের কাছে বৈধ নথিপত্র রয়েছে। আমরা পুলিশের কাছে তা জমা দেব।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ওঁদের নথিপত্র খতিয়ে দেখা হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হাতুড়ে চিকিৎসক বলে কিছু নেই। গ্রামগঞ্জে যাঁরা চিকিৎসা করেন, তাঁদের ‘ইনফরমার হেলফ কেয়ার প্রোভাইডার’ বলে। তাঁরা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।’’ ঘটনার সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy