Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পুড়ে মৃত দিদিমা, নাতি

শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল দিদা ও নাতির। রবিবার রাতে তুফানগঞ্জ থানার বলরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চেকাডেরা গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে জখম হয়েছেন এক শিশু-সহ পরিবারের অন্য তিন সদস্যও। কোচবিহার জেলা হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।

তুফানগঞ্জে পুড়ে যাওয়া বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

তুফানগঞ্জে পুড়ে যাওয়া বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০২:০৫
Share: Save:

শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল দিদা ও নাতির। রবিবার রাতে তুফানগঞ্জ থানার বলরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চেকাডেরা গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে জখম হয়েছেন এক শিশু-সহ পরিবারের অন্য তিন সদস্যও। কোচবিহার জেলা হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম জ্যোৎস্না বর্মন (৬০) ও শুভজিৎ বর্মন (৭)।

জ্যোৎস্নাদেবীর বাড়ি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ডহরেরপাড় এলাকায়। ওই দিন বিকালে চেকাডেরা গ্রামে মেয়ের বাড়িতে বেয়ানের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। রাতে নাতি শুভজিৎকে সঙ্গে নিয়ে খাটে ঘুমিয়েছিলেন। বৃদ্ধার মেয়ে, জামাই ও এক নাতনি ওই ঘরের মেঝেতেই বিছানা করে ঘুমোন।। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ গ্রামবাসীরা ওই বাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখেন। খবর পেয়ে কোচবিহার থেকে দমকলের দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় আধ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। তার আগেই অবশ্য ওই বৃদ্ধা ও তার নাতি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। বাকিদের উদ্ধার করেন এলাকার বাসিন্দারা। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত করা হচ্ছে।”

পুলিশ জানায়, চেকারডেরার বাসিন্দা মন্তেশ্বর বর্মনের সঙ্গে জ্যোৎস্নাদেবীর মেয়ে সবিতা বর্মনের বিয়ে হয়েছিল। পেশায় দিনমজুর মন্তেশ্বরের মা সম্প্রতি মারা যান। ওই দিন তাঁর মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন জ্যোৎস্নাদেবী। রাতে সকলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া সারেন। পাটকাঠির বেড়া ও টিনের চাল দেওয়া এক চিলতে ঘরে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে ঘুমোতে যান তিনি। ওই ঘরের এককোণে দুটি ছাগল বাধা ছিল। একটি কুপি জ্বেলে রাখা হয়েছিল ঘরে। পরিজনদের আশঙ্কা, কোনওভাবে ছাগলের দড়িতে লেগে কুপি উল্টে আগুন ধরে যায়। মূহূর্তের মধ্যে গোটা ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে থাকায় কেউই বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পাননি।

স্থানীয় বাসিন্দা নীরেন্দ্র নারায়ণ বলেন, “বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ঘটনার রাতে আগুনে ঘরটি জ্বলতে দেখে সেখানে ছুটে গিয়েছিলাম। বৃদ্ধার সঙ্গে তার নাতির পুড়ে যাওয়া দেহ দেখে শিউরে উঠি।’’

মৃত জ্যোৎস্না বর্মনের স্বামী নিতাই বর্মন ঘটনার জেরে মুষড়ে পড়েছেন। প্রতিবন্ধী নিতাইবাবু বলেন, “বেয়ানের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়ে এমন সর্বনাশ হবে ভাবিনি। নাতিটাকেও হারালাম। মেয়ে, জামাই, নাতনি সুস্থ হয়ে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত চিন্তা কমছেনা। আমার মত অসহায়কেই বা কে দেখবে ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছিনা।” প্রাথমিক তদন্তের পর দমকল কর্তাদেরও অনুমান, কুপি থেকেই আগুন ছড়িয়েছে।

ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে চেকাডেরা গ্রামে যান এলাকার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। নিতাইবাবুর হাতে নগদ আর্থিক সাহায্য তুলে দেন তিনি। বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। সরকারি ভাবেও পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের বন্দোবস্ত করা হবে। আমরা পাশে থাকব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE