Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সব জেনেবুঝেও চুপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

ক্যাম্পাসে চায়ের দোকন থেকে ক্যান্টিন, ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড থেকে বিভিন্ন বিভাগ, হস্টেল থেকে কর্মী, অধ্যাপকদের আবাসন সর্বত্র চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে একের পর এক শ্লীলতাহানির ঘটনা। এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ভাবে দিনের পর দিন সব জেনে বুঝেও হাত গুটিয়ে রয়েছেন সেই প্রশ্ন।

শহর নয়, ক্যাম্পাস। তবু এ ভাবেই অবাধ যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

শহর নয়, ক্যাম্পাস। তবু এ ভাবেই অবাধ যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

ক্যাম্পাসে চায়ের দোকন থেকে ক্যান্টিন, ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড থেকে বিভিন্ন বিভাগ, হস্টেল থেকে কর্মী, অধ্যাপকদের আবাসন সর্বত্র চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে একের পর এক শ্লীলতাহানির ঘটনা। এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ভাবে দিনের পর দিন সব জেনে বুঝেও হাত গুটিয়ে রয়েছেন সেই প্রশ্ন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্রভানু মঞ্চের পিছনের রাস্তায় এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনার পর দু’দিন কেটে গেলেও অভিযুক্তকে ধরতে না-পারা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তার প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে সকলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বহিরাগত কোন যুবক ছাত্রীটির হাত ধরে টানাটানি করেছে, তা পরিষ্কার বুঝে উঠতে পারছেন না কেউ। আলোর অভাবে স্পষ্ট দেখা যায়নি তাকে। সে কারণে বিভিন্ন রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো এবং ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর দাবি তুলেছেন ছাত্রীরা। তা ছাড়া রাস্তাগুলিতে যাতে নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকেন তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ঘটনার পর ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তা স্পষ্ট নয় বলে অভিযোগ। ছাত্রীটি নির্জন ওই রাস্তায় কেন গিয়েছিলেন, কর্তৃপক্ষের কয়েকজন প্রশ্ন তুললে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ক্যাম্পাসের যে কোনও অংশে যাওয়ার স্বাধীনতা সকলের রয়েছে। ওই প্রশ্ন করে বেহাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকটি আড়াল করলে চলবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের অংশে খেলার মাঠ রয়েছে। তার এক দিকে স্টাফদের কোয়ার্টার। অন্য পাশে অধ্যাপকদের আবাসন। সন্ধ্যার পর ওই অংশে যাতায়াত করতেও বাসিন্দাদের অনেক শঙ্কিত থাকেন বলে অভিযোগ। বাইক নিয়ে বহিরাগতদের অনেকেই ক্যাম্পাসের ওই অংশে ঢুকে মহিলাদের বিরক্ত করেন বলে অভিযোগ। অনেকে বিষয়টি পাঁচ কান করেন না। অনেকে হইচই হলে পাছে কর্তৃপক্ষের তরফে চাপ আসবে সেই ভয়ে চুপ করে থাকেন। স্টাফ কোয়ার্টারের এক কর্মীর কথায়, ‘‘২৫ বছর তো ক্যাম্পাসে রয়েছি। এত কিছু ঘটনার পরও কিছু করা হল না। তা হলে কাকে কী বলবেন? পরিবারের মহিলারা সন্ধ্যার পর কোয়ার্টারের বাইরে বার হলে ভয়ে থাকেন। অথচ বাজারে যাওয়া, ছেলেমেয়েদের টিউশানে নিয়ে যাওয়ার মতো অনেক কাজেই সন্ধ্যার পর বাইরে যেতে হয়।’’ স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের অভিযোগ, খেলার মাঠের পিছনের অংশে এবং চা বাগানের দিকে দিনের বেলাতেই মদ্যপান, জুয়ার আসর বসে। তরুণ-তরুণীরা আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকে। নিরাপত্তা বিভাগের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অলক মজুমদার জানান, ক্যাম্পাসের পিছনের অংশে পাঁচিল ভেঙে একাধিক জায়গা দিয়ে রাস্তা করে বহিরাগতরা ঢুকছে। যত গেটই থাকুক না কেন সেখানে নিরাপত্তা রক্ষী রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর ওই সমস্ত গেটও আটকে দেওয়া হবে। শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সংগঠনের নেতা গুরুচরণ রায়ের অভিযোগ, ‘‘ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে ঠিক নেই তা আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি। ব্যবস্থা নেওয়া দাবিতে আমরা আন্দোলনে নামার কথা ভাবছি।’’

ছাত্রীদের কয়েকজন জানান, ম্যাথামেটিক্স, ফিজিক্স, অ্যানথ্রোপলজি বিভাগের সামনে রাস্তার এক দিকে শালবন। নির্জন ওই রাস্তায় কী হচ্ছে আশপাশ থেকে বোঝাও যায় না। বেলা গড়ালে ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটা চলা করতে গা ছমছম করে। নিরাপত্তা কর্মীরা থাকলে তাও কিছুটা নিশ্চিত। কিন্তু তারা না থাকলে অনেকেই বিপদের আশঙ্কা করেন। ওই রাস্তা দিয়েই স্টাফ কোয়ার্টারে যাতায়াত করেন বাসিন্দাদের অনেকে। এর আগে ম্যাথামেটিক্স বিভাগের সামনেই এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে বাইক নিয়ে অভিযুক্তরা খেলার মাঠের পিছনের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিক ওই রাস্তায় যাতায়াতের ক্ষেত্রেও অতীতে বহিরাগতদের হাতে মহিলাদের হেনস্থার শিকারও হতে হয়েছে বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Molestation North Bengal University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE