ফুলহার শুকিয়েছে। তাই সঙ্কটে আর্সেনিকমুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্পই। ছবি: বাপি মজুমদার।
শুকিয়েছে ফুলহার। নদীতে জলের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে মালদহের রতুয়ার বালুপুর আর্সেনিক মুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্প।
ফুলহার নদীর জল পরিশোধনের জন্য ২২ কোটি টাকা খরচ করে ওই আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু গরম পড়তেই শুকিয়ে গিয়েছে ফুলহার। প্রকল্প থেকে নদী এখন আড়াইশো মিটার দূরে সরে গিয়েছে। নদী বলতে শীর্ণকায় খালের মতো ফুলহার থেকে নতুন করে খাল কেটে জল নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও তাতে কাজের কাজ হচ্ছে না। কেননা জলের সঙ্গে উঠে আসছে মাত্রাতিরিক্ত বালি। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরবরাহ।
গরমে নদীর জল শুকিয়ে প্রকল্পের জল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন রতুয়ার কাহালা ও দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। প্রকল্পের জল সরবরাহ ব্যাহত হয়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও প্রশাসনও।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের চাঁচলের সহকারি বাস্তুকার তরুব্রত রায় বলেন, ‘‘নদী দূরে সরে গিয়েছে। জলও কম। তবু খাল কেটে জল নিয়ে এসে একবার পাম্প চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কেননা জল কমে যাওয়ায় পাম্পে বালি উঠে আসছে।’’
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, আর্সেনিক প্রবণ ওই এলাকাগুলির পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে ২০০৮ সালে কাহালায় ফুলহারের ধারে প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। কাহালায় হলেও প্রকল্পের নাম অবশ্য বালুপুর আর্সেনিক প্রকল্প। ফুলহারের জল তুলে তা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিশোধনের পর তিনটি জলাধারে সংরক্ষণের পর দিনে দু’বার জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন ৪৫ হাজার মানুষ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে যেটুকু জল সরবরাহ করা হচ্ছে তাও মাঝপথে চুরি হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু এলাকায় পাইপলাইন ফুটো করে বাসিন্দাদের একাংশ জল চুরি করছেন। শুধু তাই নয়। পাইপলাইনে ছোট শ্যালো মেশিন লাগিয়ে জল সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। ফলে দূরের এলাকায় আর জল পৌঁছাচ্ছে না।
কাহালার বাসিন্দা সুফল সিংহ, নারায়ণ মিশ্ররা বলেন, ‘‘প্রকল্পটি হওয়ার পর পানীয় জলের সমস্যা মিটবে ভেবেছিলাম। কিন্তু গরমে প্রতি বছর কমবেশি একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা চাই যেভাবেই হোক সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক।’’
রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তা দেখা হচ্ছে।’’
সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে ওই প্রকল্পটি অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন প্রশাসন ও কারিগরি দফতরের কর্তারা। কেন না ফুলহারের একদিকে নদীবাঁধ। বাঁধ থাকায় নদী প্রতি বছরই গতিপথ পাল্টে প্রকল্পের উল্টো দিকে সরে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের জল উত্তোলক পাম্প নদীর আরও গভীরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তা খরচ সাপেক্ষ। তবে সেই চেষ্টা চলছে বলে কারিগরি দফতর ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy