Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাঁচার লড়াই তাঁতশিল্পীদের

চরকায় কাটা ওই সমস্ত সুতো দিয়েই তৈরি হবে তাঁতের শাড়ি। বন্যা আসলেও সেগুলি বুক দিয়ে আগলেছেন হস্তচালিত তাঁতশিল্পী সুরেন বসাক, দুলাল রায়, কালীপদ সরকারেরা।

মরিয়া: তাঁতের সুতো শুকনোর চেষ্টা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

মরিয়া: তাঁতের সুতো শুকনোর চেষ্টা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

অনুপরতন মোহান্ত
গঙ্গারামপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৯:০০
Share: Save:

সংসার ভেসে গিয়েছে। তবু লড়াই থামেনি। জাতীয় সড়কের ত্রিপলের ঠাঁই থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করে দিয়েছেন বানভাসি তাঁতশিল্পীরা।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বানভাসি গঙ্গারামপুরের মহারাজপুর এলাকায় ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কই এখন ঘরবাড়ি শতাধিক তাঁতশিল্পীর। জলে ডুবে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া রঙবেরঙের তাঁতসুতোর লাছি জাতীয় সড়কের উপর রেখে শুকোতে দিয়ে হস্তচালিত তাঁতযন্ত্র মেরামতি চালাচ্ছেন তাঁরা রাতের ঘুম ভুলে। সামনেই পুজো। বাজার ধরতে তাই আপ্রাণ চেষ্টা করছেন গঙ্গারামপুরের তাঁতি পরিবারগুলি।

চরকায় কাটা ওই সমস্ত সুতো দিয়েই তৈরি হবে তাঁতের শাড়ি। বন্যা আসলেও সেগুলি বুক দিয়ে আগলেছেন হস্তচালিত তাঁতশিল্পী সুরেন বসাক, দুলাল রায়, কালীপদ সরকারেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘পুজো মরসুমের তাঁতের শাড়ি তৈরির বায়না সবে আসতে শুরু করেছিল। একরাতের বন্যায় সব ডুবে গেল। কোনওমতে সুতোর লাছি বাঁচাতে পেরেছি। রোদে শুকিয়ে নিয়ে আমরা ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছি।’’

তবে বানভাসি পরিবারগুলির ঘর থেকে জল নামতেই তাঁতঘরও ভেঙে পড়েছে। কাদায় থিকথিকে ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় রাস্তাতেই তাঁরা রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। বন্যা সামলে হস্তচালিত তাঁতগুলি পরিস্কার করে ফের শাড়ি বোনার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। রবিবার, ১৩অগস্ট থেকে অন্তত ৪০০ তাঁতশিল্পীর সঙ্গে আরও শতাধিক কৃষিজীবী মানুষ বুনিয়াদপুর-বালুরঘাট ওই জাতীয় সড়কের উপর চরম কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

ত্রাণের ত্রিপলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও পানীয় জলের কষ্ট রয়েছে। রাস্তাতেই ভাত ফুটিয়ে নিয়ে গবাদিপশুর খাবার জোগাড় করতে দূরের এলাকায় অনেককে ছুটতে হচ্ছে। সুতো শুকোনো, লাছি থেকে মাকুতে ভরার কাজে বাড়ির ছেলে বউয়েরাও হাত লাগিয়েছেন। বন্যা থেকে সামান্য পরিমাণে বাঁচানো সর্ষে ও ধান পাকা রাস্তাতে বিছিয়ে শুকিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।

গঙ্গারামপুরের মহকুমাশাসক দেবাঞ্জন রায় বলেন, ‘‘ব্লক ও পুরসভা থেকে ওই এলাকায় জলের ট্যাঙ্ক সরবরাহ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘তাঁতশিল্পে জড়িত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য সোমবার মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE