ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করে অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিক ছন্দে কাজ কর্ম চলল চা বাগানগুলিতে। বৃহস্পতিবার বাম ও বিজেপি-র ডাকা ধর্মঘটের দিন চা বাগান নির্ভরশীল ডুয়ার্সের হাট বাজার ও হাতে গোনা কিছু সরকারি অফিস অচল থাকলেও বাগানের শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করেননি। ডুয়ার্সের ২৭২টি চা বাগান ছাড়াও তরাইয়ের চা বাগানগুলিতে পাতা তোলা থেকে বাগান পরিচর্যা এমনকী কারখানায় চা উৎপাদন হয়েছে অন্যান্য দিনগুলির মতোই।
চা বাগান মালিক সংগঠন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি এসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি সঞ্জয় বাগচির কথায়, ‘‘কর্মীদের একাংশ সকালে এক ঘণ্টা গেট মিটিং করে শুধু। তার পর বাগানের কাজ কর্ম স্বাভাবিক হয়। কোনও বাগানের কাজ বন্ধ হয়নি।’’ মালিকদের অপর সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সমস্ত বাগানে কাজ হয়েছে। শ্রমিকেরা কাজে গিয়েছেন সর্বত্র।’’
নভেম্বর মাসে চা বাগানের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে দু’দিন ধর্মঘট ডাকে তৃণমূল বাদে সমস্ত ডান-বাম শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। সে সময় বাগানগুলি অচল হয়ে পড়ে। কাজ না করে ধর্মঘটের পথে যাওয়ায় মজুরি কাটা যায় বহু শ্রমিকের। ফলে পাঁচ মাসের মধ্যে ফের বন্ধ ডাকায় কোনও সাড়া দেননি শ্রমিকেরা। এর আগেও বামেরা বেশ কয়েক দফা ধর্মঘট ডেকেছিল। সে সময় শ্রমিকদের একটি অংশ কাজে না গেলেও বাকিরা বন্ধে তেমন ভাবে সারা দেননি। তবে এ বার একশ শতাংশ চা বাগানে কাজ হয়েছে। বাগানের শ্রমিকেরা ধর্মঘটের পথে না যাওয়ায় বাম ও ডান শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা শেষ মেশ বাগানকে বন্ধের আওতায় রাখা হয়নি বলে দাবি করেছেন। সিটু-র চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক রবিন রাই বলেছেন, ‘‘শুক্রবার মে দিবস। সে কারণে তার আগের দিন চা বাগানে বন্ধ ডাকলে দু’দিন কাজ বন্ধ থাকবে। চা শিল্পের ক্ষতি হবে এবং শ্রমিকদের উপর তার প্রভাব পড়বে বলে আমরা বাগানগুলিকে বন্ধের আওতায় সে অর্থে রাখিনি।’’
বামেদের অপর সংগঠন আরএসপি দলের চা শ্রমিক নেতা নির্মল দাসের কথায়, ‘‘চা বাগানকে আমরা বন্ধের আওতায় রাখিনি এটা বলব না। তবে তাঁরা মজুরি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করেছেন। বন্ধের পক্ষে মিছিল সভা করেছেন। বন্ধ করা হবে কি না তা তাঁদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিছু জায়গায় শ্রমিকেরা কাজে যাননি বলে শুনেছি। তবে সকালে সাব স্টাফদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে প্রতি বাগানে গেট মিটিং হয়েছে। ইনটাকের চা শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লু-র পক্ষে মণি ডারনালের বক্তব্য, ‘‘বাগানকে আমরা বন্ধের আওতায় রাখিনি।’’
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ডুয়ার্স ও তরাইয়ের চা বাগানগুলি লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। বাম আমলের শেষ দিকে মোর্চার আলাদা রাজ্যের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর বাগানগুলিতে নতুন করে তাঁরা সংগঠন তৈরি করতে থাকেন। মোর্চার বিরোধিতা করে পৃথক ভাবে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ সংগঠন তৈরি করে। তাতেই বাম দুর্গ ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। পরবর্তী কালে ক্ষমতা দখলের পর তৃণমূল আলাদা ভাবে সংগঠন তৈরি করার পর বামেদের ঘাঁটি নষ্ট হয়ে যায়। ডুয়ার্সের বীরপাড়ার নাংডালা চা বাগানের এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘সারা দিন খেটে খুটে পাই মোটে ৯৫ টাকা মজুরি। তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। এর উপর এক দিন কাজ বন্ধ রাখলে কর্তৃপক্ষ টাকা দেবে না। তাই বন্ধে কোনও রকম সাড়া দিইনি। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি জওয়াকিম বাক্সলা বলেছেন, এই ধর্মঘট চা শ্রমিকেরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। সর্বত্র কাজ হয়েছে। শ্রমিকদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy