প্রতীকী ছবি।
কাবুলের এক সরল গ্রামবাসী বিনা অপরাধে জালালাবাদের জেলে ষোলো বছর কাটিয়ে নিজের পরিচয় ভুলে গিয়েছিলেন। সৈয়দ মুজতবা আলি লিখেছিলেন, আসল পরিচয় ভুলে তার মনে শুধু গেঁথে ছিল কয়েদি নম্বরটুকু। খালাস পাওয়ার পরেও নাম, পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলতেন, ‘‘আমি পঁয়তাল্লিশ নম্বরের’’। শিলিগুড়ি লাগোয়া বিজয়নগর চা বাগানের এক তরুণীও দুবাইতে তিন বছরের বেশি সময়ে ‘বন্দি’ থেকে ভুগছেন পরিচয় সঙ্কটে। পাচারকারীদের তৈরি জাল পাসপোর্টই এখন তাঁর ‘আসল’ পরিচয়। তাঁর নিজের কোনও পরিচয়পত্র তাঁর সঙ্গে নেই। তাই বাড়িও ফিরতে পারছেন না তিনি। মাসখানেক ধরে তরুণী আটকে রয়েছেন নেপালের পুলপা এলাকার এক থানায়। কী ভাবে মেয়েকে ফিরিয়ে আনা যাবে, তা জানতে পুলিশ থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অফিসে ঘুরছে তরুণীর পরিবার।
অভিযোগ, বছর পাঁচেক আগে শিলিগুড়ি লাগোয়া নকশালবাড়ির বিজয়নগর চা বাগান থেকে ওই তরুণীকে কাজের টোপ দিয়ে দিল্লি নিয়ে যান এলাকারই এক বাসিন্দা। বাবা মারা যাওয়ার পরে মা এবং তিন বোন থাকতেন।
অভাব-অনটন কাটাতে কাজের প্রস্তাবে তরুণী রাজি হন বলে দাবি। দিল্লি যাওয়ার মাস তিনেক পর থেকে আর কোনও খোঁজ মেলেনি। সম্প্রতি নেপাল থেকে ওই তরুণী বাড়িতে ফোন করে যোগাযোগ করেন। তখনই পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে পরিচয়ের গেরোয় তিনি নেপালে আটকে রয়েছেন।
এক বোনের সঙ্গে তরুণীর ফোনে কথা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, দিল্লিতে পৌঁছনোর তিন মাসের মধ্যে তরুণীকে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি বাড়িতে তাঁকে পরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তরুণীর ওপর নানা রকম নির্যাতনও হয় বলে অভিযোগ। মাস দেড়েক আগে দুবাইয়ের একটি সংগঠন তরুণীকে উদ্ধার করে দিল্লিতে রওনা করিয়ে দেয়।
সেখান থেকেই শুরু হয় বিপত্তি। দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছে তরুণী জানতে পারে পাসপোর্টে তাঁকে নেপালের বাসিন্দা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তরুণীর বোন বলে, ‘‘দিদি বিমানবন্দরের পুলিশকে জানিয়েছিল যে শিলিগুড়িতেই ওর বাড়ি। কিন্তু ওরা সে সব বিশ্বাস করেনি। ওর কাছে আসল কোনও পরিচয়পত্রও ছিল না।’’ বিমানবন্দরের অভিবাসন দফতর নেপালের দূতাবাসে যোগাযোগ করে তরুণীকে নেপালে পাঠিয়ে দেয়। গত সপ্তাহে নেপালের এক পুলিশ অফিসারের সাহায্যে বাড়িতে ফোন করেছিলেন তরুণী।
শিলিগুড়ির লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, ‘‘ওই পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। নেপালের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’ সংগঠনের পরামর্শে গত মঙ্গলবার নকশালবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। দার্জিলিং জেলা পুলিসের ডিএসপি (গ্রামীণ) সৌম্যজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমন হয়ে থাকলে তরুণীকে নেপাল থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy