Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আধঘণ্টা বৃষ্টিতে ভাঙল আবাস

তাপমাত্রা বাড়ছিল গত কয়েকদিন ধরেই। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছিল নিম্নচাপ অক্ষরেখা। তার জেরেই বজ্রগর্ভ মেঘ জমতে শুরু করে উত্তরবঙ্গের আকাশে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আধঘণ্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গ। শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স জুড়ে এ দিন বিক্ষিপ্ত ভাবে শিলাবৃষ্টি হয়েছে।

ধুলোয় ঢেকে গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের সারদাপল্লি এলাকা। বৃহস্পতিবার রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ধুলোয় ঢেকে গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের সারদাপল্লি এলাকা। বৃহস্পতিবার রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share: Save:

তাপমাত্রা বাড়ছিল গত কয়েকদিন ধরেই। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছিল নিম্নচাপ অক্ষরেখা। তার জেরেই বজ্রগর্ভ মেঘ জমতে শুরু করে উত্তরবঙ্গের আকাশে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আধঘণ্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গ। শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স জুড়ে এ দিন বিক্ষিপ্ত ভাবে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। ডুয়ার্সের বন্ধ চা বাগান ঢেকলাপাড়ায় ৩৫টি শ্রমিক আবাস এদিন ঝড়ে ভেঙে পড়ে। মালবাজারের রানিচেরা চা বাগানের এক কিলোমিটার জুড়ে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সবুজ চা বাগিচা শিলের টুকরোয় ঢেকে সাদা হয়ে যায়। শিলের স্তূপ জমে যায় বাগানের কিছু এলাকায়। চাউর হয়ে যায়, বাগানে বরফ পড়েছে। আশপাশের এলাকা থেকে পর্যটকরা চলে আসেন বাগানে।

বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টো নাগাদ শিলাবৃষ্টি শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। অন্তত ১০ মিনিট শিলা বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আশেপাশের এলাকাতেও শিলাবৃষ্টি হলেও, রানিচেরা বাগানে তুলনামূলক বেশি পরিমানে শিল পড়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। শিলের আকৃতিগুলিও অনেকটাই বড় ছিল বলে তাঁরা জানিয়েছেন। চা বাগানের ৪ এবং ৫ নম্বর সেকশনের এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি ঝোরা শিলের স্তূপে ঢাকা পড়ে যায়। রাণিচেরা চা বাগানের ম্যানেজার অনির্বাণ মজুমদার বলেন, “আগে এমন দৃশ্য দেখিনি।”

পর্যটকরা ভিড় জমালেও, শিল পড়ে বাগানের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫৫ হেক্টর এলাকার চা গাছ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শিলের স্তূপের ছবি তুলতে পর্যটকদের মধ্যে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতার চিংড়িঘাটার বাসিন্দা অনমিত্রা সাহা, নির্মল দস্তিদাররা বলেন, “গ্যাংটক থেকে ডুয়ার্সের গরুমারাতে যাচ্ছিলাম। পাহাড়ে বরফের দেখা পাই নি। ডুয়ার্সে বরফের মতো শিলের স্তূপে কিছুটা হলেও স্বাদ মিটল বলা যায়।”কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “এটা স্বাভাবিক ঘটনা। যে এলাকার উপরে বজ্রগর্ভ মেঘ বেশি পরিমাণে এবং উঁচুতে থাকে সেখানে শিলাবৃষ্টি বেশি হয়। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখা দুইয়ের প্রভাবে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সিকিমে টানা বৃষ্টি চলছে।”

এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ ঢেকলাপাড়া চা বাগানের ৩৫টি শ্রমিক আবাস ভেঙে পড়ে। যার জেরে ৩৫ টি পরিবারের লোকজনকে কার্যত খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়াতে হল। গত ১২ বছর ধরে বাগানটি বন্ধ। শ্রমিকদের আবাসগুলি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এদিন খবর পেয়েও ব্লক প্রশাসনের কেউ বাগানে যাননি বলে অভিযোগ। মাদারিহাট-বীরপাড়ার বিডিও পেম্বা শেরপা বলেন, “গীতাঞ্জলি আবাস প্রকল্পের অর্থে ওই বাগানের শ্রমিক আবাসের ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত পলিথিন বিলি করা হবে।”

বাগানের শ্রমিক নসিব তাঁতি ও সুদর্শন তাঁতির অভিযোগ, “মাঝেমধ্যেই বাগানে হাতি ঢুকে ঘর ভেঙে দেয়। এবার ঝড়ে ঘর ভাঙল। কতদিন ঘর ছাড়া থাকতে হবে জানি না।” ঢেকলাপাড়া ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বানারহাটের কারবালা চা বাগানের ৪০ টি শ্রমিক আবাস। গাছ পড়ে বানারহাটে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শিলাবৃষ্টি হয়েছে শিলিগুড়িতেও। সেবক রোড, হিলকার্ট রোডের মতো ব্যস্ত এলাকাতে দুপুরে পথচারীদের একাংশকে শিল কুড়োতে দেখা গিয়েছে। শহরের দুই মাইল এলাকায় তুলনামুলক শিল বেশি পড়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hailstorm jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE