Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ক্ষোভের আগুন

আর সালিশি নয়, একযোগে বলছেন সবাই

পরিচিত কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী বহুবার নিষেধ করা সত্ত্বেও সালিশি সভায় গিয়েছিলেন বড়াইবাড়ির তৃণমূল নেতা আব্দুল হামিদ। বাড়ির লোকজন জানান, হামিদ ভেবেছিলেন, এলাকার কত রকমের ঝামেলাই তো সালিশির মাধ্যমে মিটিয়ে দিয়েছেন। এ বারও আলোচনায় তা মিটিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু, সালিশি সভায় মতবিরোধের জেরে যে হামিদকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হবে তা পরিচিতেরা কেউ ভাবতেই পারেননি।

খুনে অভিযুক্ত জব্বার আলির বাড়িতে খড়ের গাদায় আগুন দিয়েছে জনতা।

খুনে অভিযুক্ত জব্বার আলির বাড়িতে খড়ের গাদায় আগুন দিয়েছে জনতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

পরিচিত কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী বহুবার নিষেধ করা সত্ত্বেও সালিশি সভায় গিয়েছিলেন বড়াইবাড়ির তৃণমূল নেতা আব্দুল হামিদ। বাড়ির লোকজন জানান, হামিদ ভেবেছিলেন, এলাকার কত রকমের ঝামেলাই তো সালিশির মাধ্যমে মিটিয়ে দিয়েছেন। এ বারও আলোচনায় তা মিটিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু, সালিশি সভায় মতবিরোধের জেরে যে হামিদকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হবে তা পরিচিতেরা কেউ ভাবতেই পারেননি।

সোমবার কোচবিহারের বাণেশ্বরে সালিশি সভায় খুনের ঘটনার পরে এলাকার প্রায় সকলেই এখন সালিশি প্রথা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরব হয়েছেন। বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, আগামীতে কোনও সমস্যা হলে সোজা থানায় পাঠানো হবে। আদালতে যেতে বলা হবে। গ্রামে আলোচনা করে মেটানোর প্রথা বন্ধ হওয়া দরকার বলে তাঁরা মনে করেন।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, হামিদ এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। গ্রামের কোনও মানুষ সমস্যায় পড়লে প্রথমে হামিদের কাছেই যান। তেমন ঘটনাই ঘটেছিল এ দিনের সালিশির ক্ষেত্রেও। তবে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেটাই এখন চাইছেন এলাকাবাসী সকলেই।

ঘটনাস্থলে পুলিশি টহল।

বস্তুত, সালিশি সভায় খুনোখুনির ঘটনা নতুন কিছু নয়। অতীতে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিপিএমের তিন কর্মীকে সালিশি সভায় খুনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও সালিশি সভায় গণ্ডগোলের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সালিশি সভার নিদান মেনে গণধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে। তবে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিষয়টিকে সালিশি সভা হিসেবে দেখা ঠিক নয়। গ্রামের এক মহিলা অভিযোগ নিয়ে দলের প্রধান, পঞ্চায়েতদের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা হচ্ছিল। তার মধ্যেই হামিদকে খুন করা হয়।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানান, আইন কোনও অবস্থায় কেউই নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিদ্বজ্জনদের অনেকেই। দিনহাটা কলেজের অধ্যক্ষ সাধন কর বলেন, “আমাদের বিচার ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত ও সুসংহত। আদালতের উপরে আস্থা রাখা প্রয়োজন।” নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক রাজু রায় জানান, সালিশি সভা ঘিরে নানা সময়ে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তাঁর মতে, “এ দিন যা ঘটল তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এর পরে আর কোথাও যাতে সালিশি সভা না বসে সে ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।”

কোচবিহার হাসপাতালে
আহত হাইরুল হোসেন।

হাসপাতালে আহত
রুমিতা বিবি।

ফালাকাটা কলেজের শিক্ষক কোচবিহারের বাসিন্দা রঞ্জন রায় অবশ্য মনে করেন, আদালতের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে মানুষ নিশ্চিত হতে পারেন। কিন্তু, সালিশি সভার রায় নিয়ে বিতর্ক থেকেই যায় বলে তাঁর ধারণা। তিনি বলেন, “পুলিশ-প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ করা উচিত।” দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক জয়গোপাল ভৌমিক সালিশি সভা বন্ধের জন্য জনমত গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, “পুলিশ রয়েছে, প্রশাসন রয়েছে, বিচারব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে সালিশি সভা কেন? সমস্ত রাজনৈতিক দলের এর বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠানো দরকার। জনমত গঠন হোক।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arbitration tmc abdul hamid killed cooch behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE