Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ইটভাটার ডোবার জলে মৃত্যু চার শিশুর, ক্ষোভ

স্নান করতে গিয়ে ইটভাটার ডোবার জলে তলিয়ে ৪টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার হলিদাডাঙা এলাকার ঘটনা। ওই ডোবা থেকে এক বালিকাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে বালুরঘাট জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

শিশুদের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর গ্রামবাসীর ভিড়।

শিশুদের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর গ্রামবাসীর ভিড়।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪০
Share: Save:

স্নান করতে গিয়ে ইটভাটার ডোবার জলে তলিয়ে ৪টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার হলিদাডাঙা এলাকার ঘটনা। ওই ডোবা থেকে এক বালিকাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে বালুরঘাট জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘটনায় ইটভাটা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বাসিন্দারা সরব হয়েছেন। এলাকায় তদন্তে যান বালুরঘাটের বিডিও শুভ্রজিত গুপ্ত।

পুলিশ জানায়, মৃত ৪ জন স্থানীয় হলিদাডাঙার ভাটাপাড়া এলাকার গরিব দিনমজুর পরিবারের ছেলেমেয়ে। মৃতদের নাম সাগুন বাস্কে (৬), পুনানি বাস্কে (৭), সাগর টুডু (৮) এবং ভোলা টুডু (৯)। ভুলি টুডু নামে ৮ বছরের বালিকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাগুন ও পুনানি দুই ভাইবোন।

এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে লোকজন ভিড় করেন। মাটি খুঁড়ে ইট তৈরির পরে গর্ত না-বোজানোর জন্যই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল বলে অভিযোগ করেছেন মৃতদের আত্মীয়রা। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “ঘটনার তদন্তে এলাকায় বিডিও গিয়েছেন। ইটভাটা কর্তৃপক্ষের তরফে গাফিলতির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মৃত শিশুদের শোকার্ত পরিজনেরা।

ওই ইটভাটার মালিক বিশ্বজিত সাহা জানান, মাটি কাটার পর গর্ত বুজিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, আচমকা বৃষ্টিতে জল জমে যাওয়ায় তা করা যায়নি বলে তাঁর দাবি। তা ছাড়া গত দুদিন হল ভাটা বন্ধ থাকায় এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে বলে বিশ্বজিৎবাবুর দাবি। তিনি বলেন, “মৃতদের পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য করা হবে।” বালুরঘাট থানার আইসি বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মৃত শিশুদের পক্ষে আত্মীয়রা থানায় অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বালুরঘাট শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে ডাঙ্গা পঞ্চায়েতের হলিদাডাঙা গ্রামে বিশাল এলাকা জুড়ে ওই ইটভাটা। তার পাশে গরিব আদিবাসী মানুষজনের বসতি। বাসিন্দাদের একাংশ ওই ইটভাটায় কাজ করেন। অনেকে শ্রমিকের কাজে দিল্লি গিয়েছেন। ওই পাঁচটি শিশু শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা নাজিমা খাতুন বলেন, “শিশুদের প্রায়ই ইটভাটার ডোবার জলে নেমে খেলতে দেখে বারণ করেছি। দুদিনের বৃষ্টিতে ওই ডোবার গর্তে গভীর জল জমে যাবে শিশুরা আন্দাজ করতে না পারায় এত বড় সর্বনাশ হয়ে গেল।”

মৃত ভোলার দাদু হুতুম টুডু জানান, এলাকার কলে স্নান করতে বলা হলেও সবার নজর এড়িয়ে ওরা পাঁচ জন মিলে ভাটার ডোবায় স্নান করতে যায়। বাসিন্দা বুধু হেমব্রম বলেন, “বাচ্চাগুলি ডোবায় নেমে তলিয়ে যায়। ওই সময় পাশের একটি ইটভাটায় জেসিপি দিয়ে মাটি কেটে ফেরার সময় গাড়ির চালক জলের শব্দ শুনে এগিয়ে যান। তিনিই ভুলি টুডু নামে ৮ বছরের বালিকাকে উদ্ধার করে গ্রামে খবর দেন। এর পর গ্রামবাসীরা প্রায় ১৮ ফুট গভীর ডোবা থেকে চারজনের দেহ উদ্ধার করেন।”

পুনানি ও তার ভাই সাগুনের বাবা সুনীল কবিরাজ শ্রমিকের কাজে দিল্লিতে। তাদের মা মীনুদেবী ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন। গোটা ভাটাপাড়া গ্রামে কান্নার রোল। মৃত সাগরের মা জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “ভেবেছিলাম স্নান করে ছেলে স্কুলে চলে গিয়েছে। দুপুরে খেত থেকে ফিরে জানতে পারি, আমার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।” তাঁদের অভিযোগ, ইটভাটা কর্তৃপক্ষ ওই ডোবার চারদিকে ঘেরা দিয়ে রাখলে চারটি শিশুর অকাল মৃত্যু হত না।

ইট তৈরির মাটির জন্য ওই ভাটা চত্বর জুড়ে একাধিক গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক সুবলচন্দ্র রায় বলেন, “ইট তৈরির জন্য মাটি কাটার পরে নিয়ম মত গর্ত বা ডোবা ভরাট করতে হবে। কোনও কারণে সেটা করা না গেলে অন্তত বাঁশের বেড়া দিয়ে ডোবাটি ঘিরে রাখা উচিত। দফতর থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

ছবি: অমিত মোহান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE