শিলিগুড়ির সুকান্তপল্লি থেকে তরুণীর অর্ধনগ্ন পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার করার তিন দিন পরেও কেন খুনের মামলা দায়ের করেনি পুলিশ, অভিযোগ তুলে সরব হলেন বাসিন্দাদের অনেকেই। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছে একটি আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনও। কিন্তু, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে খুনের মামলা দায়ের করতে রাজি নয় পুলিশ। আইনজ্ঞদের অনেকের মতে, পুলিশ মনে করলে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করতেই পারে। পুলিশের ‘উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন ডান-বাম সব দলই। এমনকী তৃণমূলের নেতারা ওই তরুণীর রহস্য-মৃত্যু নিয়ে উদাসীন কেন তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন বাসিন্দাদের অনেকে। সদ্য প্রাক্তন কাউন্সিলর তৃণমূলের সমীরণ সূত্রধর ব্যস্ততার কারণে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “দেহটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।” ওই মামলার দায়িত্বে থাকা এসিপি তপনআলো মিত্র জানান, কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি বলে অন্য কোনও মামলা করা হয়নি।
কিন্তু যেখানে মৃতদেহটি কার, সেটাই শনাক্ত করা যায়নি, অভিযোগ দায়ের করবে কে? তো নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “পুলিশের খুনের মামলা দায়ের করা উচিত ছিল। লোকালয়ের মধ্যে একটি মেয়ের মৃতদেহ অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকল। অথচ পুলিশ কেন সাধারণ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছে তা জানতে চাইব। এমনকী মেয়েটির পরিচয়ও জানতে পারেনি কেন তাও জিজ্ঞাসা করা হবে।” শিলিগুড়ি পুরসভার গত নির্বাচনে ওই এলাকার কাউন্সিলর পদপ্রার্থী তথা আইনজীবী সিপিএমের পার্থ চৌধুরী বলেন, “এরকম ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ না দায়ের করলেও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করতে পারে। যেখানে খুনের সম্ভবনা রয়েছে ষোল আনা তখন এমন মামলা করাই যেত।”
মঙ্গলবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির অধীন সুকান্তপল্লি এলাকার একটি দেওয়াল ঘেরা জমি থেকে উদ্ধার হয় একটি তরুণীর মৃতদেহ। মহিলার দেহের একাংশের কাপড় ছিল না। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছিল ৪-৫ দিনের পুরোনো ওই দেহ। তবে তার বয়স কত তা সম্বন্ধে পরিস্কার করে কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। অনুমান করা হচ্ছে তাঁর বয়স ১৭ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ এখন ঘরে-ঘরে। এলাকা লাগোয়া গেটবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কাজল দাস এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “গোটা এলাকা সন্ধ্যের পর জুয়া আর মদের ঠেক বসে বলে অভিযোগ শুনেছি। কয়েকশো মিটারের মধ্যে বাজার রয়েছে। আমরা নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়িতে অভিযোগ জানিয়ে বহুবার রাতে পুলিশি টহলদারির আবেদন জানিয়েছি। সেই অনুরোধ রাখলে এই ঘটনা ঘটত না। ঘটনার পরেও অবশ্য পুলিশের বিশেষ ভূমিকা দেখছি না।”
সিপিএমের ফুলবাড়ি জোনাল সম্পাদক তথা সিটু নেতা দিবস চৌবে এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য জুড়েই পুলিশ শাসক দলকে আড়াল করতে তত্পর। ধূপগুড়ি গণধর্ষণ ও খুেনর ঘটনায়, যেখানে সমস্ত কিছু জানা সত্বেও পুলিশ তদন্তে গড়িমসি করছে, সেখানে অজ্ঞাত পরিচয় লাশের ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে এটাই স্বাভাবিক।” কংগ্রেস ও বিজেপিও ক্ষুব্ধ।
তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা কী করছেন? শিলিগুড়ি পুরসভার সদ্য প্রাক্তন কাউন্সিলর সমীরণবাবু বলেন, “আমি ব্যক্তিগত পেশায় ব্যস্ত থাকায় যেতে পারিনি। পুলিশের সঙ্গেও কথা বলা হয়নি। ” দু’একদিন পরে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।” অসুস্থ থাকায় এই ঘটনার কথা জানতেন না বলে জানান তৃণমূলের জেলা নেত্রী সুস্মিতা সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “আমি পুলিশের কাছে ঘটনা জানতে চাইব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy