আর কালে ভদ্রে নয়, বাসিন্দাদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে প্রতি মাসে বন্ধ বাগানে পরিদর্শন করবেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সোমবার ঢেকলাপাড়া ও বান্দাপানি চা বাগান পরিদর্শন করতে এসে শ্রমিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী নিজেই। বন্ধ বাগানে অন্ত্যোদয় যোজনার যে চাল, গম সরবরাহ করা হয়, তা নিম্নমানের বলে শ্রমিকরা বহুবার অভিযোগ তুলেছেন। সম্প্রতি রায়পুর ও রেডব্যাঙ্ক বাগানে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার পর ওই অভিযোগ তোলেন বাগানবাসীরা। বন্ধ বাগানের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পৃথক ভাবে কংগ্রেস ও বাম বিধায়কদের দল বাগানে ঘুরে যান। তাদের কাছেও খাদ্য দফতরের সরবরাহ করা চালের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শ্রমিকরা। বিধায়কদের কাছে চালের নমুনা তুলে দেওয়া হয়।
তাতেই নড়েচড়ে বসেন খাদ্যমন্ত্রী। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, “শ্রমিকদের সরবরাহ করা খাদ্য সামগ্রীর মান নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলে, তা বরদাস্ত করা হবে না। ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ির খাদ্য সরবরাহ আধিকারিককে আমি অন্যত্র বদলি করিয়েছি। এখন থেকে আমি প্রতি মাসে বাগানে এসে সমগ্র ব্যবস্থা খতিয়ে দেখব।” তিনি জানান, স্থায়ী শ্রমিক ছাড়া বন্ধ বাগানের অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য খুব শীঘ্রই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে রেশন দোকান চালানো হবে।
সম্প্রতি বাম বিধায়কদের দল বন্ধ বাগান ঘুরে যাওয়ার বিষয়ে সিপিএম-এর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। মন্ত্রী জানান, ২০০২ সাল থেকে উত্তরবঙ্গের একের পর এক বাগান বন্ধ হতে শুরু করে। সে সময় অনাহারে ও অনাহার জনিত অসুখে ভুগে গড়ে দেড়শো জন মানুষ মারা যান। সে সময় সিপিএমের মন্ত্রী, বিধায়ক এমনকী, নেতারা বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের খোঁজ নেননি। বান্দাপানি, ঢেকলাপাড়া বাগানে বাম আমলে আগে কোনও মন্ত্রী আসেননি। আমরা তো বারবার আসছি। বহু বাগানা চালু করে দিয়েছি।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত মঙ্গলবার থেকে দুদিন রাজ্যের চার মন্ত্রী গৌতম দেব, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং মলয় ঘটক পাঁচটি চা বাগান পরিদর্শনে বার হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রায়পুর, রেডব্যাঙ্ক, ধরণীপুর, সুরেন্দ্র নগরে রাত অবধি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বুধবার সকাল নয়টা নাগাদ মন্ত্রীরা ঢেকলাপাড়া ও বান্দাপানি চা বাগানে যান। ২০০২ সালের আগস্ট মাস থেকে বন্ধ ওই বাগান মাঝে কয়েক মাস অন্য মালিক বাগান চালু করলেও ফের বাগান বন্ধ করে দেওয়া হয় বিপাকে ৬০৪ জন শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। বাগানের বাসিন্দারা মন্ত্রীদের জানান, তাঁর অনুদানে বাঁচতে চান না। বাগান চালু করে দিলে সমস্ত অভাব দূর হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু শ্রমিকদের জানান, হাইকোর্টের থেকে চারটি বাগান অন্য মালিকের হাতে তুলে দেবার জন্য নিলাম হয়। তবে কেউ বাগান কিনতে রাজি হননি।
চা গাছগুলি অযত্নে যে ভাবে পাতা দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে, তাতে তাঁর দফতরের থেকে নতুন চারা দেওয়ার কথা জানান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। ওই বাগানে কয়েকশো ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে যেতে হলে ১৩ কিলোমিটার দূরে বীরপাড়া হয়। এরজন্য এনবিএসটিসি-র বাস চালুর কথাও বলেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য এদিনও অনাহার জনিত রোগে ভুগে সম্প্রতি কারও মৃত্যু হয়নি বলে ফের দাবি করেছেন। তিনি জানান, বন্ধ বাগানের শ্রমিক অসুস্থ হলে ১০২ টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে যাবে।
এ দিন জলপাইগুড়ি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “ঢেকলাপাড়া বাগান চালু করতে চাইছেন অসমের একটি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবো। বাগানে সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে মহিলাদের কুটীর শিল্পের জন্য ঋণ ব্যবস্থা চালু করা যায় তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।” মন্ত্রীরা জানান, বাগানের বিষয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে কেন্দ্রের। মঙ্গলবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ বাগানের সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy