Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হবে বিজেপি

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে তাঁরা রাজ্যপাল কিশোরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হবেন বলে জানালেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। রাজ্যপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। বাম আমলে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকা দুর্নীতির মামলা তৃণমূল জমানায় ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, অতীতে বাম নেতারা ওই মামলায় যাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, এখন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের নেতাদের একাংশ তাঁদের আড়াল করতে আসরে নেমেছেন।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৯
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে তাঁরা রাজ্যপাল কিশোরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হবেন বলে জানালেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। রাজ্যপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।

বাম আমলে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকা দুর্নীতির মামলা তৃণমূল জমানায় ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, অতীতে বাম নেতারা ওই মামলায় যাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, এখন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের নেতাদের একাংশ তাঁদের আড়াল করতে আসরে নেমেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিভাগীয় তদন্তে প্রায় ১ কোটি টাকা দুর্নীতির দায় বর্তেছে ‘রেজিস্ট্রার’ দিলীপ সরকারের উপরে। ঘটনাচক্রে, আর্থিক দুর্নীতির মামলায় দিলীপবাবুকে আগেই সাসপেন্ড করেছেন কর্তৃপক্ষ। দার্জিলিং আদালতে সরকারি টাকা নয়ছয়ের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধেও চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তবে দিলীপবাবু গোড়া থেকেই দাবি করেছেন, তিনি কোনও রকম আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর যুক্তি, “আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। সব টাকাই চেক মারফত দেওয়া হয়েছে। অডিটও হয়েছে। কাজেই নয়ছয়ের প্রশ্ন উঠতে পারে না।” সেই সঙ্গে দিলীপবাবু তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চালানোর পাশাপাশি পুনর্বহালের আর্জিও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।

এই অবস্থায়, মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি মামলায় কাউকে আড়াল করা কিংবা লঘু শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বলেন, “উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির মামলার ব্যাপারে বিশদে তথ্য আমাদের কাছেও রয়েছে। ওই মামলায় পুলিশ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। বিভাগীয় তদন্তেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সব তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছি। অনৈতিক ভাবে কাউকে যেন ছাড় দেওয়া না হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য আর্জি জানাব।”

ঘটনাচক্রে, সপ্তাহ দুয়েক আগেই বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির প্রসঙ্গে প্রকাশ্য সভায় সরব হয়েছিলেন। ওই সময়ে উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্‌ করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাসপেন্ড’ হওয়া রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু। তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে নানা আলোচনা শুরু হয়। কারণ, অতীতে বাম আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন গৌতমবাবুও। এমনকী, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রমাণ হলে কড়া শাস্তির পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে খবর যায়, ওই মামলায় রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই চার্জশিট পেশের অনুমতি মেলে। পুলিশ চার্জশিট দেয়। সেই মামলা দার্জিলিং আদালতের বিচারাধীন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট পেশ হয়। সূত্রের খবর, রিপোর্ট পেশের আগেই একটি মহল থেকে ওই ন্যূনতম শাস্তি তথা দিলীপবাবুকে সতর্ক করে পুনবর্হাল করা হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। প্রয়োজনে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মেনে ভাতা বৃদ্ধির পরিমাণ কমিয়ে শাস্তি দেওয়ার পক্ষেও মত দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার-কর্মীদের একাংশ। ঘটনাচক্রে, বামপন্থী মনোভাবাপন্ন অধ্যাপক-শিক্ষকদের একাংশ অতীতে দিলীপবাবুকে পুর্বহাল করে মামলা চালিয়ে যাওয়ার যে মত দিয়েছিলেন, সে পথে হাঁটার ইঙ্গিত দেন তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের কয়েকজন নেতাও।

এ দিন বিজেপির দলীয় বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ ওঠে। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের তরফে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বলেন, “যেখানে পুলিশ একজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে, তিনি যদি মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্‌ করেন তা হলে জনমানসে নানা প্রশ্ন উঠতেই পারে। সবই রাজ্য সভাপতিকে জানানো হয়েছে। উনি শীঘ্রই আচার্য তথা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন।” যদিও গৌতমবাবু ও পার্থবাবু আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE