ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংসদে নিন্দা-প্রস্তাব গ্রহণের দাবি বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ খারিজ করিয়াছেন। ঠিকই করিয়াছেন। সত্য, এই যুদ্ধ মর্মান্তিক। যুদ্ধযন্ত্র ও অস্ত্রশক্তির তুল্যমূল্য বিচারে ইজরায়েল যেহেতু প্যালেস্টাইন অপেক্ষা অনেক বেশি উন্নত, তাই প্যালেস্টিনীয় পক্ষে হতাহতের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বহুগুণ বেশি। এবং অসম যুদ্ধে বহু নিরীহ, নিরস্ত্র প্যালেস্টিনীয় নাগরিকের প্রাণ যাইতেছে। প্যালেস্টাইনের প্রতি ভারতের সহমর্মিতাও তাই রহিয়াছে। কিন্তু সে জন্য ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংসদে নিন্দা-প্রস্তাব আনিতে হইবে কেন? নিন্দাপ্রস্তাবের দাবিটি তুলিয়াছিল কংগ্রেস, বাম দলগুলি এবং সংযুক্ত জনতা দল। বামপন্থীরা বরাবরই ইজরায়েলের বিরোধী। বিহার নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটের প্রত্যাশী শরদ যাদবের কথাও না-হয় বুঝা গেল। কিন্তু কংগ্রেস কোন নীতিতে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মুখর?
বিদেশ নীতিতে ইজরায়েল-বিরোধিতার সোভিয়েতপন্থী অবস্থান হইতে তো সেই কবেই নয়াদিল্লি সরিয়া আসিয়াছে। এ কাজে পথিকৃৎ রাজীব গাঁধী। তিনিই ইজরায়েলের সহিত দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক, সামরিক সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হন। এবং তাহা এমন একটা সময়ে, যখন ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসান হয় নাই। রাজীব গাঁধী কেবল ইজরায়েল প্রশ্নেই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নেও নূতন পথের সন্ধানী ছিলেন। পথটি আর কিছুই নয়, ভারতের স্বার্থ কীসে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবে রক্ষিত হয়, তদনুযায়ী বিদেশ নীতির অগ্রাধিকার নিরূপণ করা। তাঁহার প্রবর্তিত এই নীতি বিরোধী দল সহ ভারতের সকল রাজনৈতিক সংগঠনই কালক্রমে শিরোধার্য করে। নরসিংহ রাওয়ের আমলে তো বটেই, অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ জমানাতেও এই নীতিই বহাল থাকে। অতঃপর মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে দুই দফায় ইউপিএ-র যে-সরকার দেশ শাসন করে, তাহার বিদেশ নীতিতেও অগ্রাধিকারের ওই অভিমুখ পরিবর্তিত হয় নাই। তাহা হইলে এখন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কামান দাগিতে কংগ্রেস বামপন্থীদের সহিত একজোট হইয়াছে কী যুক্তিতে?
গাজায় যে সংঘর্ষ চলিতেছে, তাহাতে কিন্তু অর্ধেক প্যালেস্টাইন, অর্থাৎ ওয়েস্ট ব্যাংক শামিল হয় নাই। সেখানে ক্ষমতাসীন মাহমুদ আব্বাসের সরকারও ইজরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও প্রতিরোধ গড়ে নাই। এই যুদ্ধ একান্ত ভাবেই আল-হামাস নামক ইসলামি জেহাদি ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বনাম ইজরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষ। যে কোনও যুদ্ধই বন্ধ হওয়া উচিত। শান্তিকামী রাষ্ট্র হিসাবে ভারত তাহাই চায়। উভয় পক্ষই অস্ত্র-সংবরণ করুক এবং পৃথিবী শান্ত, হিংসামুক্ত হউক, ইহাই নয়াদিল্লির অভিপ্রায় এবং ভারতীয় সংসদ হইতে বিদেশ মন্ত্রীও সেই বার্তাই দিয়াছেন। বিষয়টি লইয়া সংসদে অকারণ শোরগোল করা এবং বিজেপি সরকারকে চাপে ফেলার মধ্যে বরং এক ধরনের সস্তা সুবিধাবাদ, এমনকী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্যাঁচ রহিয়াছে ভারতীয় মুসলমানদের কাছে এই বার্তা দেওয়া যে কংগ্রেস ও বামেরা জায়নবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামী, অতএব ভারতীয় সংখ্যালঘুদের স্বাভাবিক মিত্র। এই সুবিধাবাদী এবং সংকীর্ণ স্বার্থের অনুসারী আচরণ একটি আধুনিক, বাস্তববোধসম্পন্ন বিদেশ নীতি হইতে রাষ্ট্রকে বিচ্যুত করিতে চাহে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে আপন মত জানাইয়া দিয়াছে। ইহা সুলক্ষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy