Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

অতঃ কিম্?

রো গীর মৃত্যু হইল, হাসপাতাল ভাঙচুরও হইল। অতঃ কিম্? প্রতিবার এই প্রশ্নে ঠেকিয়া যায় রাজ্য। কিছু দিন পরে পুনরভিনয় হয় পুরাতন পালার।

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

রো গীর মৃত্যু হইল, হাসপাতাল ভাঙচুরও হইল। অতঃ কিম্? প্রতিবার এই প্রশ্নে ঠেকিয়া যায় রাজ্য। কিছু দিন পরে পুনরভিনয় হয় পুরাতন পালার। ইহার নায়ক স্থানীয় নেতা, চিকিৎসক খলনায়ক, পুলিশ দর্শক, সংবাদমাধ্যম ‘নেপথ্যে কোলাহল’। রাজ্যবাসী এত দিনে বুঝিয়াছে, ভাঙচুর শোকাহত স্বজনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া নহে, তাহা রেল রোকো, রাস্তা অবরোধের মতো একটি পরিকল্পিত কর্মসূচি। এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক কর্মসূচির ন্যায় ইহারও কোনও পরিণাম নাই। আছে কেবল শক্তিপ্রদর্শনের ইচ্ছা। হাসপাতাল তছনছ যদি ‘উচিত শিক্ষা’ হইত, তবে এত দিনে হাসপাতাল শুধরাইত। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি, কোনও হাসপাতালেই তাণ্ডবের পর রোগীর অধিক সুরক্ষার নজির কেহ দেখে নাই। তাই একই দিনে সংবাদে প্রকাশ, বেসরকারি হাসপাতালে বিধায়কদের চিকিৎসার খরচের বহর দেখিয়া ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তদন্তের নির্দেশ দিয়াছেন। যদি অতিরিক্ত ব্যয়, অপচিকিৎসা, অ-চিকিৎসার রাজনৈতিক সমাধান নেতারা খুঁজিতেন, তবে আজ তদন্তের প্রয়োজন হইত কি? নিজের পকেটে টান না পড়িলে সরকারের টনক নড়ে না, ইহাও আশ্চর্য বটে। তবে নেতাদের কার্যকলাপ দেখিয়া বিস্মিত হইতে ভুলিয়াছে বাঙালি। অতএব সমাজকেই প্রশ্ন করিতে হইবে, বেসরকারি হাসপাতালে অবহেলা ও অতিব্যয় ঘটিতেছে কি না, তাহা নির্ণয় এবং প্রতিকারের কী ব্যবস্থা রহিয়াছে?

কিছু নাই। বিদেশে বিমা কোম্পানিগুলি ব্যয়ের উপর নজর রাখে। এ দেশে তাহারা বিল অনুমোদন করিয়া দেয় কেবল, খরচের যৌক্তিকতা লইয়া প্রশ্ন করে না। বরং অভিযোগ, বিমা থাকিলে হাসপাতাল অধিক খরচ করে। অপ্রয়োজনে অস্ত্রোপচার হয়। মেডিক্যাল কাউন্সিলগুলি অভিযোগ সামলাইতে হিমসিম। তাহাদের নিরপেক্ষতা লইয়াও সংশয় আছে। ক্রেতা আদালতের কাজ নির্দিষ্ট অভিযোগের বিচার, গোটা ব্যবস্থায় নজরদারি নহে। বেসরকারি হাসপাতালের মান নির্দিষ্ট করিবার স্বতন্ত্র সংস্থা রহিয়াছে। কিন্তু তাহারা চিকিৎসার পদ্ধতি ও নথিপত্রের স্বচ্ছতার মূল্যায়ন করে, ব্যয়ে অসঙ্গতি পরীক্ষা করে না। রোগীর সুরক্ষা মূল্যায়নের ক্ষমতা চিকিৎসক সংগঠনগুলির রহিয়াছে, কিন্তু ইচ্ছা নাই। এক কথায়, রোগীর স্বার্থ মাথায় রাখিয়া প্রেসক্রিপশন অডিট, ডাক্তারি পরীক্ষাগুলির অডিট, চিকিৎসার জন্য অপেক্ষার সময়ের হিসাব, প্রভৃতি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা বেসরকারি ক্ষেত্রে নাই। ইহার অনেকগুলি সরকারি হাসপাতালেও প্রয়োজন। তবে সরকারি হাসপাতালে শয্যা, ঔষধ ও সরঞ্জাম সহজলভ্য করিয়া খরচ কমাইবার চেষ্টা হইতেছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে তাহাও হয় নাই।

অতএব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির সুযোগ রহিয়াছে। নিঃসন্দেহে সেই সুযোগ অনেকে গ্রহণও করিয়াছেন। কিন্তু কত ক্ষেত্রে বাস্তবিক দুর্নীতি ঘটিয়াছে, আর কতগুলিতে অকারণে ভাঙচুর হইয়াছে, তাহার নির্ণয় দুঃসাধ্য। রোগীর আত্মীয়দের প্রত্যাশাও অযৌক্তিক হইতে পারে। অনেকে গোড়াতেই মারমুখী হইয়া ওঠেন, অনেকে চিকিৎসকদের চিকিৎসা শিখাইতে চান। আবার জনসংযোগে গাফিলতিও একটি কারণ। হাসপাতালের তরফে রোগীর অবস্থার গুরুত্ব, চিকিৎসার পদ্ধতি ও খরচ সম্পর্কে রোগীর আত্মীয়দের যথাসময়ে অবহিত না করিবার ফলেও রোগীর স্বজনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী নাই বহু হাসপাতালে। এমন বহু ফাঁক। নাগরিক সংগঠন বা রাজনৈতিক দল, যাহারাই এগুলির প্রতিকারের চেষ্টা হউক, হইচই করিলে হইবে না। চিকিৎসা ব্যবসায়ীর দুর্নীতি হইতে রোগীর সুরক্ষার বিধিব্যবস্থা নির্মাণ ধৈর্যসাধ্য কাজ। হাসপাতালে তাণ্ডবকারী তাহার অংশ নহে। তাহাদের প্রাপ্য নিন্দা ও শাস্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE