Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

অদম্য জার

ভ্লাদিমির পুতিনের নয়া জার হইবার সাধনা অব্যাহত। ক্রাইমিয়া জবরদখল করার পর এ বার ইউক্রেনের রুশ-ভাষী-অধ্যুষিত প্রদেশ ডনেটস্ক দখলের অভিযান চলিয়াছে। গত এপ্রিল মাস হইতে তীব্র ও নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের পর রুশ-সমর্থক ইউক্রেনীয়রা রণনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ডনেটস্ক বিমানবন্দর দখল করিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫
Share: Save:

ভ্লাদিমির পুতিনের নয়া জার হইবার সাধনা অব্যাহত। ক্রাইমিয়া জবরদখল করার পর এ বার ইউক্রেনের রুশ-ভাষী-অধ্যুষিত প্রদেশ ডনেটস্ক দখলের অভিযান চলিয়াছে। গত এপ্রিল মাস হইতে তীব্র ও নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের পর রুশ-সমর্থক ইউক্রেনীয়রা রণনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ডনেটস্ক বিমানবন্দর দখল করিয়াছে। তাহাদের ভারী কামান, গোলাবারুদ, সাঁজোয়া গাড়ি ও ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্রশস্ত্র অবাধে সরবরাহ করিয়া রুশ সেনাবাহিনী যে ডনেটস্ক প্রদেশ হইতেও ইউক্রেনীয় আধিপত্য খতম করিতে উদ্গ্রীব, তাহা বুঝাই যাইতেছিল। এ বার বিদ্রোহীদের আক্রমণে ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীও পশ্চাদপসরণ করায় পুতিনের কাজটি অপেক্ষাকৃত সহজ হইয়া যায়। বিস্ময়ের ব্যাপার হইল, যখন রুশ হামলা ও প্রক্সি লড়াইয়ে ডনেটস্ক প্রদেশ কার্যত পুতিনের হাতে আসিতেছে, ঠিক সেই সময়েই বার্লিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশমন্ত্রীদের সম্মেলনে ইউক্রেনীয় বিদেশমন্ত্রী ইউরোপের সহায়তা চাহিতেছেন এবং দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো হাজির। তবু যে পুতিন একটি সার্বভৌম ইউরোপীয় রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ দখল করিতে সচেষ্ট হইলেন, তাহার পিছনে তাঁহার দুঃসাহস ও বেপরোয়া মনোভাবই সুস্পষ্ট।

এমন একটা সময় পুতিন এই ধরনের প্রক্সি যুদ্ধে পিছন হইতে শক্তি জোগাইতেছেন, যখন রাশিয়া এক অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়া চলিয়াছে, তাহার অন্যতম প্রধান সম্পদ খনিজ তেলের আন্তর্জাতিক বাজার ঘোর মন্দার সম্মুখীন এবং তাহার পরিণতিতে রুশ মুদ্রা রুবল-এরও প্রভূত অবমূল্যায়ন ঘটিয়া চলিয়াছে। তাঁহার দেশবাসীও এমন এক জন সুপারহিরো বা অতিনায়ককেই দেখিতে চাহেন, যিনি রাষ্ট্রনীতির বাস্তব বাধ্যবাধকতা অতিক্রম করেন নিজের মহিমা দিয়া। নহিলে গত সেপ্টেম্বরেই মিন্স্ক শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যে যুদ্ধবিরতির সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করিলেন, কয়েক মাস যাইতে-না-যাইতেই তাহা লঙ্ঘন করিয়া এ ভাবে ইউক্রেনের বিস্তৃত অংশে রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সামরিক অভিযান কেন? অতঃপর রুশ-ভাষী বিদ্রোহীরা হয়তো পুতিনের সামরিক বাহিনীর সাহায্য লইয়া লুহান্সক-এর দিকেও হাত বাড়াইবে।

আসলে পুতিন বুঝিয়া গিয়াছেন, ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ হইলেও বিশ্বযুদ্ধের আগের পর্যায়ে নাই। বারাক ওবামার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নূতন রণাঙ্গনে নিজেকে জড়াইতে চাহে না, পুতিনের মুখোমুখি তো নয়ই। ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস এখন কেবল রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করার হুমকি দেয়। কিছু নিষেধাজ্ঞা বলবৎও হয়, কিন্তু তাহা রুশ অর্থনীতিকে পঙ্গু করার মতো গুরুতর নয়। আক্রমণ করিলেও সামরিক প্রত্যাঘাতের বা প্রতি-আক্রমণের আশঙ্কা নাই, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হইয়াই পুতিন এ ভাবে রাশিয়ার জারের সময়কার সাম্রাজ্য ফিরিয়া পাইতে অগ্রসর হইতেছেন। তাঁহার এই বেপরোয়া রণোন্মত্ততা, আগ্রাসী মনোভাব ইউরোপকে পাল্টা হুমকি দিবার ‘সাহস’ দেশবাসীর মধ্যে তাঁহার জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি উন্নততর করিতেছে এবং আর্থিক সঙ্কট ভুলিয়া উগ্র রুশ জাত্যভিমানের কড়া পাকে নিজেদের সেঁকিয়া লইতে প্ররোচিত করিতেছে। ইউরোপের দুর্বলতাই এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার শক্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial anandabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE