রবিবার চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে আতঙ্কের অভিঘাতে দশ জন জখম হইয়াছেন। দিনটি রবিবার না হইলে আহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হইবার সম্ভাবনা ছিল, এমনকী পরিণাম আরও মারাত্মক হওয়াও অসম্ভব ছিল না। প্রবল শব্দ এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী আতঙ্ক ছড়াইবে, ইহাতে অস্বাভাবিক কিছু নাই। পাতালপথের স্টেশনে আতঙ্ক বহুগুণ বেশি হইবে, তাহাও স্বাভাবিক। কলিকাতার মেট্রো রেলে সাম্প্রতিক কালে বিবিধ অঘটন ঘটিয়াছে বলিয়া যাত্রীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার আরও বেশি হইয়াছে, তাহাও সহজবোধ্য। সামগ্রিক ভাবে দেশ এবং দুনিয়া জুড়িয়া সন্ত্রাসী হানার পরম্পরায় নাগরিক চেতনায় ও অবচেতনে আতঙ্কের মাত্রা উত্তরোত্তর বাড়িয়া চলিয়াছে, যাহার ফলে ছোট দুর্ঘটনাও অনায়াসে বড় ভয় সৃষ্টি করিয়া থাকে। কিন্তু ঠিক সেই কারণেই, আতঙ্কের পরিবেশ পরিস্থিতি মজুত বলিয়াই, মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের বিশেষ সতর্ক এবং তৎপর থাকা উচিত, যাহাতে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হইলেই তাহার মোকাবিলা করা যায়, যাহাতে আতঙ্ক না ছড়ায়। রবিবারের ঘটনা দেখাইয়া দিয়াছে, তাহা হয় নাই। শব্দ শুনিয়া ও ধোঁয়া দেখিয়া যাত্রীরা যখন আতঙ্কিত, তখনই যদি মেট্রো স্টেশনের নিরাপত্তা রক্ষী ও অন্যান্য কর্মী তাঁহাদের আশ্বস্ত করিতে অগ্রসর হইতেন, এই পরিণতি হইত না। কিন্তু অঘটনের পরে তাঁহাদের কার্যত সন্ধানই পাওয়া যায় নাই, পরেও তাঁহাদের প্রতিক্রিয়ায় ঔদাসীন্য প্রকট।
ইহাকে কেবল ঔদাসীন্য বলিলে ভুল হইবে। ইহার মধ্যে এক ধরনের পরিচালনগত অদক্ষতার পরিচয় রহিয়াছে। দক্ষতা বলিতে সচরাচর যান্ত্রিক কার্যকারিতা বোঝানো হইয়া থাকে, যন্ত্র এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে কুশল হইলেই দক্ষ বলিয়া মনে করা হয়। প্রযুক্তিকুশলতা নিশ্চয়ই মূল্যবান, কিন্তু পরিচালনার দক্ষতার একটি বড় অঙ্গ হইল যথাযথ প্রতিষ্ঠান ও পরিকাঠামো তৈয়ারি রাখা এবং সেই পরিকাঠামোয় যে কর্মীরা কাজ করেন তাঁহাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শদানের মাধ্যমে তৎপর করিয়া তোলা। কেমন প্রশিক্ষণ, কেমন পরামর্শ, তাহা কাজের ক্ষেত্রটির উপর বিশেষ ভাবে নির্ভর করে। একটি বড় শহরের পাতাল রেলের পরিচালনায় দুর্ঘটনা বা তাহার আশঙ্কা হইতে সৃষ্ট উদ্বেগের মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকা সর্বক্ষণের প্রস্তুতির অঙ্গ। রবিবার যাহা ঘটিয়াছে, তাহা যে কোনও সময় ঘটিতে পারে। তাহার মোকাবিলায় কর্তাব্যক্তিদের স্টেশনে নামিয়া আসিবার কোনও প্রয়োজন নাই, কিন্তু অবশ্যই নিরাপত্তা বা রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত কর্মীদের দায়িত্ব লইবার প্রয়োজন আছে। তাঁহাদের এই ধরনের সমস্যার মোকাবিলায় সর্বদা মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকিতে হইবে। পাশাপাশি, কোন পরিস্থিতিতে ঠিক কী কী করণীয় তাহার একটি সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত বন্দোবস্ত সতত মজুত রাখিতে হইবে। ধোঁয়া দেখিলেই মানুষ আগুন ভাবিবে, ইহাতে কোনও অস্বাভাবিকতা নাই, সেই মানুষকে আশ্বস্ত করা এবং প্রয়োজনে তাঁহাদের পরিত্রাণের ব্যবস্থা করাই পরিষেবা সরবরাহকারীদের কর্তব্য। এই ব্যবস্থাটি এ শহরে নিতান্ত অপটু। নাগরিকরাও তাহা জানেন। অতএব তাঁহারা বিপদের আশঙ্কা দেখিলেই সমস্ত আশাভরসা হারাইয়া সম্পূর্ণ দিশাহারা হইয়া পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলিয়া যায়। রবিবার ঠিক তাহাই হইয়াছে। মেট্রোর কর্তারা ঔদাসীন্যের আড়ালে মুখ না লুকাইয়া একটি যথার্থ দক্ষ পরিষেবার প্রয়োজনগুলি যাচাই করিলে ও সেই অনুযায়ী নিজেদের ব্যবস্থাটিকে প্রস্তুত করিলে তাঁহাদের সম্মান বাড়িবে। যাত্রীদের নিরাপত্তাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy