Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইউপিএ-র প্রত্যাবর্তন

অরুণ জেটলি যে বাজেটটি পেশ করিলেন, তাহাকে তৃতীয় ইউপিএ সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। প্রণব মুখোপাধ্যায় বা পালানিয়াপ্পন চিদম্বরমের বাজেটের সহিত তাঁহার বাজেটের যেটুকু ফারাক, তাহা খুচরা হিসাবের। বিত্ত কর বাতিল করিয়া অতি ধনীদের কর বৃদ্ধির ন্যায় সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে নূতন দিশার সন্ধান নিতান্ত পণ্ডশ্রম হইবে। বিশ্বসভায় ভারতীয় অর্থনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কী করা প্রয়োজন, তাহা সম্যক উপলব্ধি করিয়াও জেটলি সে পথে হাঁটিতে সাহস করিলেন না, ইহাই সর্বাপেক্ষা দুঃখের।

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ০০:০২
Share: Save:

অরুণ জেটলি যে বাজেটটি পেশ করিলেন, তাহাকে তৃতীয় ইউপিএ সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। প্রণব মুখোপাধ্যায় বা পালানিয়াপ্পন চিদম্বরমের বাজেটের সহিত তাঁহার বাজেটের যেটুকু ফারাক, তাহা খুচরা হিসাবের। বিত্ত কর বাতিল করিয়া অতি ধনীদের কর বৃদ্ধির ন্যায় সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে নূতন দিশার সন্ধান নিতান্ত পণ্ডশ্রম হইবে। বিশ্বসভায় ভারতীয় অর্থনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কী করা প্রয়োজন, তাহা সম্যক উপলব্ধি করিয়াও জেটলি সে পথে হাঁটিতে সাহস করিলেন না, ইহাই সর্বাপেক্ষা দুঃখের। বেসরকারি বিনিয়োগ বিনা ভারত দৌড়াইবে না, অর্থমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন। সেই বিনিয়োগ টানিবার জন্য প্রয়োজন ছিল সাহসী সিদ্ধান্তের। অর্থমন্ত্রী এক দিকে চার বৎসরের জন্য কর্পোরেট করের হার কমাইয়া ২৫ শতাংশ করিবার কথা বলিয়াছেন, আর অন্য দিকে এই করের বিবিধ ছাড় উঠাইয়া লওয়ার প্রস্তাব করিয়াছেন। স্বচ্ছতার প্রশ্নে সিদ্ধান্তটি জরুরি হইতে পারে, কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ টানিতে এই পদক্ষেপ অকিঞ্চিৎকর। ভারতকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের পছন্দের গন্তব্য করিয়া তুলিতে বৃহত্তর আর্থিক প্রণোদনার প্রয়োজন ছিল। কর্পোরেট করকে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা-যোগ্য হারে নামাইয়া আনা যাইত। বিনিয়োগের উপর লাভজনক আর্থিক ছাড়েরও ব্যবস্থা করা বিধেয় ছিল। কেন বিনিয়োগকারীরা ভারতে লগ্নি করিবেন, অরুণ জেটলির নিকট এই প্রশ্নের উত্তর নাই। দেখা গেল, নরেন্দ্র মোদীর নিকটও নাই। বস্তুত, একটি রাজ্য চালনা করা আর দেশের শাসক হওয়া যে এক কথা নহে, নরেন্দ্র মোদী প্রমাণ করিতেছেন। প্রথমটির জন্য ভাল ‘ম্যানেজার’ হইলেই চলে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বৃহত্তর ছবিটি দেখিতে পাইবার ক্ষমতা আবশ্যক। এই বাজেটে অন্তত সেই ক্ষমতার ছাপ নাই।

বাজেটে স্পষ্ট, সরকার খরচে রাশ টানিবার কথা ভাবিতেছে না। আগামী অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতির হারের লক্ষ্যমাত্রা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩.৯ শতাংশ ধার্য হইয়াছে। এক দিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়িতেছে, আর অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতির হার দ্রুত নিম্নগামী এমন অবস্থায় সরকারের হাতে টাকা থাকাই স্বাভাবিক। ফলে, ধার না করিয়াও সরকার টাকা খরচ করিতে পারে। অর্থমন্ত্রী সেই সিদ্ধান্তই করিলেন। কিন্তু, সেই টাকা কোন খাতে খরচ হইতেছে, সে দিক হইতে নজর সরাইলে চলিবে না। ইউপিএ সরকার সরাসরি দানছত্র খুলিয়া বসিয়াছিল। জেটলি সরকারের টাকায় পরিকাঠামো গড়িবার কথা বলিতেছেন। কিন্তু, তিনিও কর্মসংস্থান যোজনাটিকে বিদায় করিতে পারিলেন না, ভর্তুকির প্লাবনে বাঁধ দেওয়ার কথা বলিলেন না। রাজকোষ ঘাটতি মানিয়া লওয়া যায়, যদি সেই টাকায় দেশের অর্থনীতির পক্ষে প্রকৃত প্রয়োজনীয় কাজগুলি করা হয়। বেসরকারি বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির পরিবর্তে জেটলি ইউপিএ-র সুরটিই বাজাইয়া গেলেন।

এই বাজেটে যাহার অভাব, তাহার নাম সাহস। অটলবিহারী বাজপায়ীর জোট সরকারের যে সাহস ছিল, মোদীর সরকার প্রবল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লইয়াও তাহা স্পর্শ করিতে পারিল না। সেই সরকারে বিলগ্নিকরণ মন্ত্রক ছিল, এবং মারুতি-র ন্যায় লাভজনক সংস্থার বিলগ্নিকরণ করিতেও তাহার বাধে নাই। সেই সিদ্ধান্তে একটি অমোঘ বার্তা ছিল ঘাটতি পূরণ করিবার জন্য নহে, বিলগ্নিকরণ প্রয়োজন সরকারকে বাণিজ্যিক উদ্যোগ নামক অকর্তব্য হইতে দূরে রাখিবার জন্য। জেটলি তাঁহার ভাষণে বিলগ্নিকরণ বিষয়ে মোট দুইটি বাক্য ব্যয় করিয়াছেন। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে প্রায় ৭০,০০০ কোটি টাকা তুলিবার প্রস্তাব, কিন্তু এখনও অ-লাভজনক সংস্থার বিলগ্নিকরণের বাহিরে ভাবা সম্ভব হইল না। এই সাহস না হওয়া পর্যন্ত সংস্কার অধরাই থাকিয়া যাইবে।

য ৎ কি ঞ্চি ৎ

অস্কার কার কাছে গেল, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ: কোন রূপসি তুমুল খোলামেলা পোশাক পরে এলেন, পার্টিতে কোন স্টার কোন নায়িকাকে পেছন থেকে এসে সহসা চুমু খেলেন। যৌনতার হালকা চাদর এমন কৌশলে পাশ্চাত্য জলসায় বিছিয়ে দেওয়া থাকে, গ্লোবাল গসিপ হুহু জন্মায়। বলিউড জাঁকজমকে হলিউডকে সমানে টক্কর দিচ্ছে, স্টেজে আইটেম নাম্বারও ঝলসাচ্ছে, কিন্তু ব্যাকস্টেজের ব্যাপারটায় ব্যাক পেয়ে যাচ্ছে। ওখান থেকে কেচ্ছা-ট্রেনার আনলে হয় না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE