Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

ইতিবাচক

সকাল দেখিয়া দিনের আঁচ পাইবার চেষ্টা খানিক বিপজ্জনক, সন্দেহ নাই। কিন্তু, তাহাতে সকালের মাহাত্ম্য কমে না। কেন্দ্রে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট সরকারের প্রত্যুষেই প্রকাশ পাইল, ভারতীয় অর্থনীতি এই অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৫.৭ শতাংশ হারে বাড়িয়াছে। সংবাদটিকে তাহার প্রেক্ষিতে দেখাই বিধেয়। গত নয়টি ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ দুই বৎসরাধিক সময়ে, ইহাই ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার।

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৬
Share: Save:

সকাল দেখিয়া দিনের আঁচ পাইবার চেষ্টা খানিক বিপজ্জনক, সন্দেহ নাই। কিন্তু, তাহাতে সকালের মাহাত্ম্য কমে না। কেন্দ্রে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট সরকারের প্রত্যুষেই প্রকাশ পাইল, ভারতীয় অর্থনীতি এই অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৫.৭ শতাংশ হারে বাড়িয়াছে। সংবাদটিকে তাহার প্রেক্ষিতে দেখাই বিধেয়। গত নয়টি ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ দুই বৎসরাধিক সময়ে, ইহাই ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার। পূর্ববর্তী ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি ৪.৬ শতাংশ হারে বাড়িয়াছিল, আর গত বৎসরের প্রথম ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৭ শতাংশ। ইহা ভারতীয় অর্থনীতির ঘুরিয়া দাঁড়াইবার ইঙ্গিত কি না, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত হওয়া অনেকগুলি কারণে মুশকিল। আয়বৃদ্ধির হারে এই আচমকা গতির ছোঁয়া নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কৃতিত্ব কি না, তাহাও তর্কসাপেক্ষ। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, এই ত্রৈমাসিকের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সময় নূতন সরকারের অধীনে কাটিয়াছে। কিন্তু, গতির ছোঁয়াটি বাস্তব। তাহাকে সেই বাস্তবের প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়াই বিধেয়।

আয়বৃদ্ধির হারের এই ঊর্ধ্বগতির প্রধান কৃতিত্ব শিল্পক্ষেত্রের প্রাপ্য। বর্তমান ত্রৈমাসিকে শিল্প-উৎপাদন ৪.২ শতাংশ বাড়িয়াছে। গত ত্রৈমাসিকে ক্ষেত্রটি সামান্য সঙ্কুচিত হইয়াছিল। এক বৎসর পূর্বেও বৃদ্ধির হার ছিল নগণ্য, মাত্র ০.৪ শতাংশ। পর পর চারটি ত্রৈমাসিকে সঙ্কুচিত হইবার পর এই ত্রৈমাসিকে নির্মাণ শিল্প সাড়ে তিন শতাংশ হারে বাড়িয়াছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার দশ শতাংশের ঊর্ধ্বে। পরিষেবা ক্ষেত্রের বৃদ্ধির হার আশানুরূপ নহে, সত্য, কিন্তু তাহার ২.৮ শতাংশ বৃদ্ধির হারটিকে গত বৎসরের ১.৬ শতাংশের প্রেক্ষিতে দেখিলে ছবিটি উজ্জ্বলতর হইবে। প্রশ্ন উঠিতেই পারে, তবে কি সাড়ে চার শতাংশের তলানি স্পর্শ করিয়া ভারতীয় অর্থনীতি ফের ঊর্ধ্বমুখী হইল? সেই উড়ান কত দূর বিস্তৃত হইতে পারে? তাহা কি ২০০৩-২০০৮ সালের গৌরবে ফিরিতে পারিবে? এই প্রশ্নগুলি সকলই উন্মুক্ত, তাহাদের উত্তর অর্থনীতির যাত্রাপথেই নির্ধারিত হইবে। এই মুহূর্তে যাহা লক্ষণীয়, তাহার নাম বিশ্বাসের সুপবন। ভারতে বিনিয়োগের ধারাটি যে ক্রমে ক্ষীণতর হইয়া আসিতেছিল, তাহা ফের বেগবান হইয়াছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আর্থিক নীতিসমূহ বিশ্লেষণ করিয়া তবে বিনিয়োগকারীরা ফের আগ্রহী হইয়াছেন, তাহা নহে। ইহা একটি বিশ্বাস— নূতন সরকার পূর্বসূরিদের প্রশাসনিক পঙ্গুত্বের অবসান ঘটাইবে। এই বিশ্বাস বিনিয়োগ আনিয়াছে। তাহার মর্যাদা রক্ষার দায়, অতঃপর, নূতন সরকারের উপরই বর্তায়।

ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার সত্যই ২০০৪-০৮ সালের স্তরে পৌঁছাইতে পারিবে কি না, তাহা বহুলাংশে সরকারের উপর নির্ভর করিতেছে। মূল্যস্ফীতির হার, বিশেষত খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে, এখনও সহনসীমার বহু ঊর্ধ্বে। এই চাপ না কমিলে ভোগব্যয়ের পরিমাণ কমিতে বাধ্য। উৎপাদন ক্ষেত্রে ও পরিষেবায় তাহার প্রভাব পড়িবে। এই বৎসর বৃষ্টি স্বাভাবিক অপেক্ষা অনেকখানি কম। ফলে, কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হারে তাহার নেতিবাচক প্রভাব পড়া এক রকম নিশ্চিত। ফলে গ্রামীণ ভোগব্যয় আরও খানিক কমিবে। দ্বিতীয়ত, ৫.৭ শতাংশ বৃদ্ধির হারের বাজারেও কিন্তু পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের হার বেশ হ্রাস পাইয়াছে। এই দিকেও নজর রাখিতে হইবে। মূল কথা হইল, গত শুক্রবার যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাকে নিজেদের কৃতিত্ব ভাবিলে চলিবে না। সৌভাগ্য ভাবাও অনর্থক। তাহা সম্ভাবনামাত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE