Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

কঠোর বাস্তব

সৌদি আরবের নবতিপর রাজা আবদুল্লা বিন আবদুল আজিজ-এর মৃত্যুতে পশ্চিম এশিয়ার শক্তির ভারসাম্যে কোনও গুরুতর হেরফের হইবে না। উত্তরাধিকার মসৃণ ভাবে নিষ্পন্ন হইয়াছে। পরিবারতন্ত্রের দেশে আবদুল্লার ভ্রাতা যুবরাজ সলমন রাজা নিযুক্ত হইয়া গিয়াছেন। মুসলিম বিশ্বের দুই পবিত্রতম তীর্থ মক্কা ও মদিনার রক্ষণাবেক্ষণের ভারপ্রাপ্ত এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ তৈল-বিক্রেতা দেশ হিসাবে সৌদি আরবের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের সহিত তাহার সখ্যের কারণে এবং ইসলামি দুনিয়ার অন্তত দুইটি সঙ্কট মোকাবিলায় তুলনামূলক সাফল্যের ক্ষেত্রে।

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

সৌদি আরবের নবতিপর রাজা আবদুল্লা বিন আবদুল আজিজ-এর মৃত্যুতে পশ্চিম এশিয়ার শক্তির ভারসাম্যে কোনও গুরুতর হেরফের হইবে না। উত্তরাধিকার মসৃণ ভাবে নিষ্পন্ন হইয়াছে। পরিবারতন্ত্রের দেশে আবদুল্লার ভ্রাতা যুবরাজ সলমন রাজা নিযুক্ত হইয়া গিয়াছেন। মুসলিম বিশ্বের দুই পবিত্রতম তীর্থ মক্কা ও মদিনার রক্ষণাবেক্ষণের ভারপ্রাপ্ত এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ তৈল-বিক্রেতা দেশ হিসাবে সৌদি আরবের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের সহিত তাহার সখ্যের কারণে এবং ইসলামি দুনিয়ার অন্তত দুইটি সঙ্কট মোকাবিলায় তুলনামূলক সাফল্যের ক্ষেত্রে। প্রথম সঙ্কটটি ৯/১১-র বিধ্বংসী হামলা। দ্বিতীয়টি আরব বসন্তের দক্ষিণা বাতাস প্রতিরোধের অনিশ্চয়তা লইয়া, যাহা টিউনিসিয়া হইতে মিশর, জর্ডন হইতে বাহরিন ব্যাপ্ত হইয়াছিল।

সৌদি রাজতন্ত্র এই উভয় সমস্যাতেই অবিচলিত থাকিয়াছে। নিজেরা গোঁড়া ওয়াহাবি ও সালাফি জেহাদের গুণমুগ্ধ হইলেও ওয়াহাবি ইসলামের সর্বাধিক কট্টরপন্থী গোষ্ঠী ইসলামি রাষ্ট্রবাদীদের তাঁহারা আশ্রয় দেন নাই। বরং দেশের গ্র্যান্ড মুফ্তি সহ অন্য তাবড় ইমামরা ইসলামি রাষ্ট্রবাদীদের যথেষ্ট কড়া ভাষায় সমালোচনা না করায় তাঁহাদের ধমক দিয়াছেন। এই সব কারণে এবং মেয়েদের প্রতি বৈষম্য সামান্য হ্রাস করায় অনেক পাশ্চাত্য পর্যবেক্ষক রাজা আবদুল্লাকে উদারমনস্ক, এমনকী প্রগতিশীল বলিয়াও উল্লেখ করিয়া থাকেন। তবে পশ্চিমের এই শংসাপত্রে কিঞ্চিৎ ভেজালও মিশিয়া আছে। এই সব তথাকথিত সংস্কার নিতান্তই লঘু এবং প্রসাধনী। মহিলাদের প্রতি বৈষম্য, ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে প্রকাশ্যে কোতল করা, চুরির সাজা হিসাবে হাত কাটিয়া লওয়া, পুরুষ-মহিলার একত্র বসিয়া কাজ করায় নিষেধাজ্ঞা কায়েম থাকিয়াছে। শরিয়তি আদালতের রায়ে শত-শত বিক্ষোভকারীর প্রকাশ্যে মুণ্ডচ্ছেদ সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নৈমিত্তিক ঘটনা। ‘আপত্তিকর’ ব্লগ লিখিবার দায়ে হাজার বার চাবুক মারিবার আদেশ অতি সাম্প্রতিক নজির। দেশে দেশে সৌদি পেট্রোডলারেই নির্মিত হইতেছে শত শত খারিজি মাদ্রাসা, যেখানে জেহাদি ইসলামের পাঠ দেওয়া হইতেছে।

কিন্তু বাস্তব রাজনীতির স্বার্থ ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের আদর্শ অপেক্ষা অনেক বেশি শক্তিশালী। অতএব পশ্চিমী গণতন্ত্র সচরাচর এই সব অনাচারের দিকে চোখ বুজিয়াই থাকিতে অভ্যস্ত। ইহাকে অন্যায় ও অনৈতিক বলিয়া গালি দিলে পবিত্র আদর্শবোধ তৃপ্ত হইতে পারে, কিন্তু কূটনীতির অঙ্ক মিলিবে না। সেই অঙ্ক ভারসাম্যের অঙ্ক, বিভিন্ন বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্বের মধ্যে ভারসাম্য। পশ্চিম এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সেই ভারসাম্যের প্রয়োজন বহুগুণ বাড়াইয়াছে, তাহার পথও সমানুপাতে কঠিনতর করিয়াছে। সেই পথে চলিতে হইলে বিশুদ্ধ আদর্শবাদ আঁকড়াইয়া থাকার উপায় নাই। সুতরাং সৌদি রাজার অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উন্নত এবং মুক্ত বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা তৎপর হইয়া ওঠেন। আবদুল্লার মৃত্যুসংবাদ শুনিয়াই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে যাইবার কথা ঘোষণা করেন, বাকিংহাম প্যালেসে ইউনিয়ন জ্যাক অর্ধনমিত রাখা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট স-মিশেল তাজমহল দর্শনের কর্মসূচি ফেলিয়া রিয়াধ ছুটিতে প্রস্তুত হন। ইহাই বাস্তব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE