Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

খাদ্যাখাদ্য অনিশ্চয়

নু ডলস-বিভীষিকা না কাটিতেই পাউরুটি-আতঙ্ক। দিল্লিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পোটাশিয়াম ব্রোমেট নামক ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পাউরুটির নমুনায় অতিমাত্রায় পাইয়াছে। তাহা প্রকাশ হইতেই রাসায়নিকটি অবৈধ ঘোষণা করিল সরকার।

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

নু ডলস-বিভীষিকা না কাটিতেই পাউরুটি-আতঙ্ক। দিল্লিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পোটাশিয়াম ব্রোমেট নামক ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পাউরুটির নমুনায় অতিমাত্রায় পাইয়াছে। তাহা প্রকাশ হইতেই রাসায়নিকটি অবৈধ ঘোষণা করিল সরকার। ইহার পূর্বে একটি বহুজাতিক সংস্থার তৈরি নুডলসে অতিমাত্রায় সিসা মিলিবার খবর ফাঁস হইতেও এমনই শোরগোল উঠিয়াছিল, বহু রাজ্যে পণ্যটি নিষিদ্ধ করা হইয়াছিল। ইহা ভারতের খাদ্যের মানের নিরাপত্তা যাচাই করিবার প্রক্রিয়াটি লইয়া প্রশ্ন তুলিয়া দেয়। প্রতি ক্ষেত্রেই সরকার শোরগোল চাপা দিতে তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা জারি করিতেছে। খাদ্যের মান নিশ্চিত করিবার জন্য নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা ও রিপোর্ট দিবার প্রক্রিয়া রহিয়াছে। তাহার ভিত্তিতে সরকার পদক্ষেপ করে, এমন ইঙ্গিত মিলিতেছে না। ইহার ফলে এক দিকে সরকারি নজরদারির ফাঁক গলিয়া বহু ক্ষতিকর খাদ্য বাজারে আসিবার সম্ভাবনা প্রবল। অন্য দিকে খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির অকারণে বিপাকে পড়িবার সম্ভাবনা থাকিতেছে।

কোন রাসায়নিক কত মাত্রায় ব্যবহৃত হইলে বিপজ্জনক, বিপদ কী প্রকার, তাহা বুঝিবার ক্ষমতা বা ধৈর্য সাধারণ মানুষের নাই। বহু রাসায়নিক এক দেশে নিষিদ্ধ, অন্যত্র নহে। কোনটি ক্ষতিকর, তাহার কোনও সহজ নির্দেশিকা নাই। ফলে ক্ষতির আভাস পাইবামাত্র আতঙ্কিত হইয়া খাদ্যদ্রব্যটি বর্জন করা, নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি তোলা তাৎক্ষণিক গণ-প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হইয়াছে। সরকারও চাপের মুখে তাহাই করিতেছে। যদি পোটাশিয়াম ব্রোমেট বাস্তবিক ক্ষতিকর হয়, তবে এত দিন তাহা নিষিদ্ধ করা হয় নাই কেন? তাহার জন্য কে দায়ী, নির্ধারণ করিবে কে? শাস্তির কী ব্যবস্থা হইবে? এই প্রশ্নগুলি সংবাদমাধ্যমেও সে ভাবে ওঠে নাই। সরকারের তরফ হইতে কত খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা হইয়াছে, তাহার কী ফল মিলিয়াছে, তাহার ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ করা হইয়াছে, তাহা জনস্বার্থে প্রচারিত হইবার কথা ছিল। কিন্তু তাহার কতটুকু হইয়াছে?

কী খাদ্য, কী অখাদ্য, তাহা লইয়া ভারতের সমাজ বড়ই সংবেদনশীল। নৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে নানা ধরনের খাদ্য-পানীয় বন্ধ করিবার হিড়িক পড়িয়াছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের দৃষ্টিতে কী অখাদ্য, তাহা নির্ণয় করিবার কাজে কাহারও আগ্রহ নাই। ২০০৬ সালে খাদ্যের নিরাপত্তা ও মান সম্পর্কিত আইন পাশ হইবার পর ২০১১ সালে ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সর্ষের মধ্যেই ভূত। খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার যে সব ল্যাবরেটরি রহিয়াছে, এবং সেখানে যে গবেষকরা কর্মরত, তাঁহাদের মানেই ঘাটতি রহিয়াছে। এই অভিযোগ সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিরাই করিয়াছেন। তৎসহ, কোন খাদ্যের নিরাপত্তা কী কী পরীক্ষার দ্বারা যাচাই করা হইবে, তাহা নির্ণয়ের অতি সামান্যই হইয়াছে। বহু ধরনের খাবারের মান নিশ্চয়ের পদ্ধতি এখনও চূড়ান্ত হয় নাই। প্যাকেটের গায়ে যাহা মুদ্রিত হয়, তাহা হইতেও খাদ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসা সাধারণ ক্রেতার পক্ষে দুঃসাধ্য। ইহাও সমস্যার অতি সামান্য অংশ। ফল-সব্জি উৎপাদনে যে রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, তাহা ক্ষতিকর কি না কে নির্ধারণ করিতেছে? দুধে পাম তেল, মিষ্টান্নে অ-খাদ্য রঙ, মাছে ফর্মালিন, এমন নানা ভয়ানক কাহিনি ছড়ায়, আবার মিলাইয়া যায়। খাদ্যের মান যে জনস্বাস্থ্যের অন্যতম বিষয়, তাহার স্বীকৃতি আজ অবধি মিলে নাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE