একটি সমীক্ষা জানাইল, আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথম, ইউরোপের ১৮-৩৪ বৎসরের যুবকযুবতীদের বেশির ভাগই থাকিতেছেন অভিভাবকগণের সঙ্গে, প্রেমসঙ্গী বা বিবাহসঙ্গীর সহিত নহে। সমীক্ষকরা বলিতেছেন, ইহার কারণ, এখন তরুণ প্রজন্ম বিবাহের প্রতি খুব উৎসাহী নহে। কেহ বিবাহে আবদ্ধ হইতেই চাহে না, কেহ বিবাহ করিতে চাহে অধিক বয়স হইলে। এই প্রবণতা ইউরোপের পরিচিত প্রবণতার বিপরীত। ১৯৬০ সালে ইউরোপীয় পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স ছিল ২২, মহিলাদের ২০, এবং ২৫ বৎসরের উপর অবিবাহিত থাকিতেন দশ জনে এক জন। এখন, পুরুষদের বিবাহের গড় বয়স ২৯, নারীদের ২৭, এবং ২৫ বৎসরের উপর পাঁচ জনে এক জন অবিবাহিত। তবে কি একগামিতার দায়, সংসার করিবার একঘেয়েমি এবং তাহার বেরঙিন দায়িত্ব পালন, সন্তান আসিয়া পড়িলে তাহার যত্ন করিতে গিয়া নিজের স্বপ্নপূরণের পথে প্রস্তর স্থাপন— যে ভাবনাগুলি এত দিন অনেককে একটি ধরাবাঁধা সম্পর্কে জড়াইয়া পড়ি়বার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করিত, সেইগুলি দাঁড়িপাল্লায় অধিক ওজনদার বলিয়া বিবেচিত হইতেছে? বিবাহকে চিরকালই বলা হইয়া থাকে ‘দিল্লি কা লাড্ডু’, ইউরোপে হয়তো ‘ব্রাসেলসের বার্গার’, বা ‘প্যারিসের পিৎজা’, মোদ্দা কথা, যাহা খাইলেও পস্তাইবে, না-খাইলেও। কিন্তু এই কথাটি সরস ভাবে উচ্চারণ করিবার নেপথ্যে এই ব্যঞ্জনা থাকিত: বিবাহ করিয়াই সেই অম্লমধুর উপলব্ধিটির স্বাদ লওয়া ভাল, একেবারে সেই রসে বঞ্চিত হইয়া নিরাপদ থাকিবার তুলনায়। হয়তো ইউরোপীয় আধুনিক যুবসমাজ, সুখের তুলনায় স্বস্তিকে, আবেগের তুলনায় যুক্তিকে, এবং নক্রপূর্ণ সমুদ্রে সন্তরণের তুলনায় তীরে বসিয়া বাদামভাজা খাইতে খাইতে মজা দেখাকে অধিক মূল্য দিতেছে।
তবে কি প্রাচ্যের জয় হইল? অবশ্য বিবাহে প্রাচ্যের অরুচি নাই, কিন্তু বয়স্ক গুরুজনদের সহিত সন্তানদের থাকিবার প্রতি এই অঞ্চলে প্রবল গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সন্তানের ব্যক্তিস্বাধীনতা অপেক্ষা তাহার গোষ্ঠীচেতনাকে সতত অধিক মূল্য দান করা হয়। পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা হয়তো প্রাচ্যের দেখিয়া উহারা শিখিতেছে! কার্ল মার্ক্স হইলে, হাসি লুকাইয়া প্রথমেই বলিতেন, সিদ্ধান্তটির অর্থনৈতিক দিকটি খেয়াল করো, ইহাতে যুবক বা যুবতীটির বাড়িভাড়া বাঁচিয়া যাইতেছে, খাদ্যের খরচও অনেকাংশে বাঁচিতেছে, চাকুরি হইতে সে অধিক টাকা সঞ্চয় করিতে পারিতেছে। ফলে ফুর্তির রসদ বাড়িতেছে। তাই ইহা ধুরন্ধর অর্থ-ব্যবস্থাপনা মাত্র। আবার এমনও হইতে পারে, পাশ্চাত্যে এখন প্রাচ্যের ন্যায় আলস্য ও ভীতির অভ্যাস ঢুকিয়া পড়িতেছে। প্রাপ্তবয়স্ক জীবনটি শুরু করিয়া দিবার অর্থ নিজের দায় নিজে গ্রহণ করিবার সাহস রাখা, সমস্যার সম্মুখীন হইতে প্রস্তুত থাকা, পরিশ্রম করিতে বিমুখ না হওয়া। ইহা মহা আপদ। বরং মা-বাবার নিকট ঘ্যানঘ্যান করিয়া চিরকালীন কোলের ছেলেটি বা কোলের মেয়েটি হইয়া থাকিয়া গেলে, দায়িত্ব ভাগ হইয়া যায়, সিদ্ধান্তের দায়ও সম্পূর্ণ নিজ স্কন্ধে আসিয়া পড়ে না, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মহাবিশ্বে একেলা দাঁড়াইবার প্রশ্ন উঠে না। বয়স বাড়িলেই ভয় কমিবে, নিরাপত্তা আঁকড়াইয়া থাকিবার ইচ্ছা কমিবে, কে বলিল? নিজেকে কিছুতেই উৎক্ষিপ্ত করিতে পারিল না, এমন রকেটে প্রাচ্য থিকথিক করিতেছে। নিন্দুকে বলিতে পারে, তাহাতে তাহার অস্তিত্বের উদ্দেশ্যটিই ব্যর্থ হইল, কিন্তু সে তো ধ্বংসের বিপদ হইতে বাঁচিল, ডানায় মুখ গুঁজিয়া নিরাপদ নভোস্বপ্ন দেখিয়া বড় বড় কথা বলিয়া কাটাইয়া দিল! এই আমোদগেঁড়ে, আত্মবিশ্বাসহীন, দায়িত্ববিমুখ, নিজেরটি নিজে বুঝিয়া লইতে অনিচ্ছুকে হয়তো ইউরোপ ভরিয়া উঠিতেছে। উহাদের কোনও মহাকবি এই বার সপাটে লিখিবেন, ‘রেখেছ সাহেব করে, মানুষ করোনি’!
য ত্ কি ঞ্চি ত্
ভোট হয়ে গেল, আইপিএল-ও শেষ হয়ে যাচ্ছে, এ বার কী হবে? পরোয়া নেই, আসছে অলিম্পিক। ও আসরের খেলাগুলো আমরা আদ্ধেকই বুঝি না, ফেন্সিং বা ডাইভিং-এ কেন পয়েন্ট হল আর কেন হল না, ভাবতে অঙ্ক পরীক্ষার মতো ঘাম হয়। তাতে কী? চিন কেন সোনা পায় আমরা কেন পাই না, তা নিয়ে ঝগড়া আছে। কোনও ভারতীয় কোনও ইভেন্টে জিতলে বোম ফাটিয়ে উৎসব অাছে।
সভ্যতার ইতিহাস মানুষের অবসর ভরে তোলার ইতিহাস!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy