Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

ছি!

ভূতের রাজা ভারতকে বর দিতে আসিলে প্রথম কাঙ্ক্ষিত বরটি কী হইত? ভারত নির্ঘাত চিন হইতে চাহিত। ভূতের রাজার আশীর্বাদই ভারতের পক্ষে চিন হইবার অদম্য আকাঙ্ক্ষাটি পুরাইবার একমাত্র পথ কিনা!

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০০:০৪
Share: Save:

ভূতের রাজা ভারতকে বর দিতে আসিলে প্রথম কাঙ্ক্ষিত বরটি কী হইত? ভারত নির্ঘাত চিন হইতে চাহিত। ভূতের রাজার আশীর্বাদই ভারতের পক্ষে চিন হইবার অদম্য আকাঙ্ক্ষাটি পুরাইবার একমাত্র পথ কিনা! বাস্তবে কেন যে এ দেশের পক্ষে কোনও কালে চিন হওয়া সম্ভব নহে, তাহা বর্তমান আফ্রিকান-সংক্রান্ত হামলায় এক ঝলক দৃষ্টিপাতেই বোঝা সম্ভব। কোনও সমস্যাকে সমস্যা বলিয়া বুঝিতে পারার ক্ষমতাই ভারতের, অর্থাৎ ভারত সরকারের নাই। এ দিকে সমস্যাকে সমস্যা বলিয়া না গ্রহণ করিলে সমস্যার সমাধানও নাগালে আসিবে না। গত কয়েক দিন ধরিয়া রাজধানী শহরে এবং নিকটবর্তী হরিয়ানা সীমানায় আফ্রিকান অভিবাসীদের উপর ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনাগুলিকে এখনও যথোচিত গুরুত্ব দিতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলিয়া বিষয়টির গুরুত্বকে লঘু করিবার চেষ্টা হইতেছিল। তাহার পর বিদেশমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা আসিলেও পাশাপাশি অন্যান্য নানা দায়-এড়ানো মন্তব্য খোলাখুলি প্রকাশিত হইল। অভিবাসীদের যে ভারতের মাটিতে বসবাসকালে ‘আরও সতর্ক’ হওয়া দরকার, এমন শোনা গেল। উপরমহলের নির্দেশ সত্ত্বেও যে আলগা পদ্ধতিতে তদন্ত হইতেছে, তাহা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দেশি জনতা যখন কতিপয় বিদেশি বাসিন্দার উপর হামলা চালায় তখন পরিস্থিতি কত ভয়ানক হইতে পারে, সহজেই অনুমান সম্ভব। মোদী সরকার সেই সংবেদনশীল পরিস্থিতিকে পর্যাপ্ত সমস্যা বলিয়া মনেই করিল না, সমাধান তো পরের ধাপ।

ভারত সরকার ইহার পরও আশা করিবে, আফ্রিকা মহাদেশে তাহার জন্য লাল কার্পেট বিছানো থাকিবে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মেলবন্ধনের জন্য সেই মহাদেশের নানা কোণ উন্মুখ হইয়া থাকিবে। রাষ্ট্রপতির আসন্ন আফ্রিকা সফরে আগ্রহ ঝরিয়া পড়িবে। যদি না পড়ে, তবে সেই অনাগ্রহ ও অনীহার পিছনে যে চিন নামক প্রতিদ্বন্দ্বীরই অপার দাপট, তাহাতেও সন্দেহ থাকিবে না। কিন্তু চিন যে ভাবে আফ্রিকায় নিজের স্বীকৃতি তৈরি করিয়াছে, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়াইয়া দিয়াছে, তাহার সারাৎসারটি বিবেচিত হইবে না। ঐতিহ্যগত ভাবে অন্তর্মুখী সভ্যতা হওয়া সত্ত্বেও চিনারা ইহা কেন করিতে পারিয়াছে, বোঝার চেষ্টা হইবে না। ভিন্ দেশের জন্য নিজের দ্বার না খুলিলে ভিন্ দেশের দ্বারও তাহার জন্য খুলিবে না, এই প্রয়োজনবোধের দ্বারা চালিত হইয়াই চিন এখন আফ্রিকা বিষয়ে অনেক সতর্ক, যত্নশীল। অর্থাৎ নিজের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কেবল রাজধর্ম নয়, একটি কূটধর্মও বটে। অন্যান্য দেশকে এই বার্তা দেওয়া জরুরি যে আইনশৃঙ্খলা একটি বিশেষ ‘প্রায়রিটি’। তাই দিল্লির আফ্রিকান-নিগ্রহের মানবিক দিকটি বাদ দিলেও কূটনৈতিক গুরুত্ব এত বেশি যে মোদী সরকারের নিষ্ক্রিয়তা স্তম্ভিত করে।

আফ্রিকান অভিবাসীদের উপর অত্যাচারের মধ্যে জাতিবিদ্বেষের চিহ্ন স্পষ্ট। সম্ভবত দুষ্কৃতীরাও একবাক্যে ঘোষণা করিতে দ্বিধা করিবে না যে তাহারা বর্ণবিদ্বেষী এবং জাতিবিদ্বেষী বলিয়াই এ কাজ করিয়াছে। জাতিবিদ্বেষ যে সভ্য সমাজের পরিপন্থী, নিকৃষ্ট অপরাধ, এই সব আলোচনা বৃহত্তর সমাজে নূতন ভাবে ফিরিয়া আসা দরকার। তাহা আসুক। কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে অত কথা কিংবা অত গভীর দার্শনিক আলোচনার প্রয়োজন নাই। কেবল সাধারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমেই এই ধরনের অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ লওয়া সম্ভব। সাধারণ আইন মানিয়া চলিলেই দুষ্কৃতীদের কঠোর শাস্তিদান এবং বৈষম্যমূলক আচরণের মূলোৎপাটন সম্ভব। সেইটুকু কাজও যে সরকার করিতে পারে না, তাহার আমলে দেশের আন্তর্জাতিক বেইজ্জতি এবং জাতীয় অধোগতি ঠেকাইবে কে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE