Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

জীবনমুখী

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যে প্রয়োজনে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ করিতে পারে, তাহার আর একটি দৃষ্টান্ত মিলিল। কুড়ি সপ্তাহের বিধি বদল করিয়া চোদ্দো বৎসরের কিশোরীর গর্ভপাত করাইবার অনুমতি দিয়া সর্বোচ্চ আদালত বুঝাইয়া দিল, সংবেদনশীলতা ছাড়া বিচার সুবিচার হইতে পারে না।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০০:০২
Share: Save:

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যে প্রয়োজনে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ করিতে পারে, তাহার আর একটি দৃষ্টান্ত মিলিল। কুড়ি সপ্তাহের বিধি বদল করিয়া চোদ্দো বৎসরের কিশোরীর গর্ভপাত করাইবার অনুমতি দিয়া সর্বোচ্চ আদালত বুঝাইয়া দিল, সংবেদনশীলতা ছাড়া বিচার সুবিচার হইতে পারে না। এই একই বিধি লইয়া এই মুহূর্তে মার্কিন দেশেও হুলস্থুল চলিতেছে। এক কালে বারাক ওবামার প্রতিদ্বন্দ্বী সারা প্যালিন বলিতেন, তাঁহার নিজের মেয়েও যদি ধর্ষিতা হয়, তিনি তাহাকে গর্ভপাত করাইতে নিষেধ করিবেন। অর্থাৎ প্রয়োজনে বিবাহবহির্ভূত মাতৃত্বও মানিয়া লওয়া হইবে, কিন্তু ভ্রূণহত্যা চলিবে না। গর্ভপাতের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের কণ্ঠ দীর্ঘদিন যাবত্ এমনই চড়া সুরে বাঁধা ছিল। ডেমোক্র্যাটরা বিপরীত দিক হইতে বলিতেন, ইহা নারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ব্যতীত আর কিছুই নহে, গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত লইবার অধিকার নারীরই থাকা উচিত। ইতিহাস প্রমাণ করিয়াছে, সারা প্যালিন ‘জয় মা’ বলিয়া নির্বাচনে সুবিধা করিতে পারেন নাই। তাঁহার উত্তরসূরি মিট রমনি তুলনায় উদারপন্থী হইলেও তাঁহার ভাগ্যেও শিকে ছেঁড়ে নাই। এক্ষণে আর এক নির্বাচনী যুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে রিপাবলিকানরা কৌশল বদলাইতেছেন। তাঁহারা এই বার জঠরস্থ শিশুর ছবি দেখাইয়া, তাহার জীবনের অধিকার চাহিয়া প্রচারে নামিয়াছেন। সরাসরি আবেগ এবং বাত্সল্যের দরজায় কড়া নাড়িয়াছেন।

মার্কিন নির্বাচনে সামাজিক অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়গুলি গুরুত্ব পাইয়া থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অধিকার, বর্ণ-লিঙ্গ-যৌনাচরণভিত্তিক বৈষম্যের বিরোধিতা, সকলই ডেমোক্র্যাটদের জনপ্রিয়তায় নির্ণায়ক ভূমিকা লইয়াছে। রিপাবলিকানরা তাহা বুঝিয়াছেন। সুপ্রিম কোর্ট সমকামী বিবাহ মঞ্জুর করিবার পরে আরও বেশি করিয়া বুঝিয়াছেন। সমকামিতা সম্পর্কেও তাঁহাদের অবস্থান বদলাইয়াছে। তাঁহারা উপলব্ধি করিয়াছেন, গর্ভপাতের প্রশ্নে নিজেদের নারীবিদ্বেষী তকমা মুছিতে হইবে। ষাটের দশকে ডেমোক্র্যাটরা যে কায়দায় কৃষ্ণাঙ্গদের উপরে পুলিশি নির্যাতনের ছবি দেখাইয়া বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচার চালাইতেন, সেই ভাবেই এই বার রিপাবলিকানরা ভিডিয়ো ক্লিপ ব্যবহার করিতেছেন। কেহ আলট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির সাহায্যে সন্তানের ভ্রূণাবস্থার ছবি দেখিয়া কী রকম আপ্লুত হইয়াছিলেন, তাহা বিবৃত করিতেছেন। কোনও ভিডিয়োতে চিকিত্সকরা কী ভাবে নষ্ট ভ্রূণের কলাকোষ সংগ্রহ করেন, সেই বর্ণনা শুনিয়া মানুষ শিহরিত হইতেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কুড়ি সপ্তাহ গর্ভাবস্থার পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ হইবে কি না, সেই বিলটি সেনেটে উঠিবার কথা আছে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্টও তাহার মতামত জানাইবে। ইত্যবসরে রিপাবলিকানরা যে তাঁহাদের নূতন প্রচারশৈলীর সৌজন্যে ডেমোক্র্যাটদের যথেষ্ট চাপে ফেলিয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। লক্ষণীয় ইহাই যে, পশ্চিমবঙ্গের পক্বকেশ রাজনীতিকরা প্রায়শই ‘আমাদিগের অনেক ভুল হইয়াছে’ বলিয়া হা-হুতাশ করিলেও ভুল শুধরাইয়া তাঁহারা কী করিতে চাহেন, সে বিষয়ে তাঁহাদের বলিবার বিশেষ কিছু আছে বলিয়া লক্ষিত হয় না। রিপাবলিকানরা কিন্তু নিঃশব্দে নিজ ভুল চিহ্নিত করিলেন এবং মূলগত অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখিয়াও কী ভাবে আপন গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা যায়, তাহা চিন্তা করিলেন। বঙ্গ রাজনীতি সাম্রাজ্যবাদের নিপাত চাহিয়াই খুশি, সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল রাখিয়া নিজেকে বদলাইবার শিক্ষাটি তাই অধরা রহিয়া গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE