Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয়

তবু ভয় হয়

ফ্যাশনশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় দৈনন্দিনতার প্রকরণকে ফের শিল্পিত সুষমায় মণ্ডিত করিয়া বিশ্ববাসীকে তাক লাগাইয়া দিলেন। তাঁহার জীবনপঞ্জিতে ইহা নূতন ঘটনা নহে। দৈনন্দিন শাড়ি, লেহঙ্গার মতো পোশাকে নান্দনিক কারুকাজ ঘটাইয়া তিনি ইতিমধ্যেই লন্ডন, প্যারিস হইতে নিউ ইয়র্ক, আমস্টারডাম অবধি সারা বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০০:৩৪
Share: Save:

ফ্যাশনশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় দৈনন্দিনতার প্রকরণকে ফের শিল্পিত সুষমায় মণ্ডিত করিয়া বিশ্ববাসীকে তাক লাগাইয়া দিলেন। তাঁহার জীবনপঞ্জিতে ইহা নূতন ঘটনা নহে। দৈনন্দিন শাড়ি, লেহঙ্গার মতো পোশাকে নান্দনিক কারুকাজ ঘটাইয়া তিনি ইতিমধ্যেই লন্ডন, প্যারিস হইতে নিউ ইয়র্ক, আমস্টারডাম অবধি সারা বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করিয়াছেন। এই মুমূর্ষু মহানগরে বসিয়াই এথনিক ঘরানার পোশাকি ঐতিহ্য সৃষ্টিতে সমসাময়িক আবু জানি, সন্দীপ খোসলা, ওয়েন্ডেল রডরিগ্‌সদের তিনি বহু পিছনে ফেলিয়া দিয়াছেন, ইহাও নূতন নহে। কিন্তু কলকাতার রাস্তায় যে ত্রিচক্রযানটি নিত্য যানজটের অন্যতম কারণ, যাহার উদ্ধত দাদাগিরিতে বেচারি যাত্রীদের প্রায়শ ঠুঁটো জগন্নাথ হইয়া থাকিতে হয়, যাহার পরিত্যক্ত ধোঁয়া ও সশব্দ গর্জনে নগরীর চরাচর দূষণে পরিব্যাপ্ত হয়, সেই অটো রিকশাকে বহুবিধ অলঙ্করণে সাজাইয়া তিনি বাকিংহাম প্রাসাদ হইতে স্কটল্যান্ডের ধনকুবের সকলকে মুগ্ধ করিয়া দিলেন। তাঁহার সৃষ্টিশীলতায় অলঙ্কৃত কলিকাতার অটো লন্ডনের রাস্তায় এক মাস ঘুরিয়া বেড়াইল, যুবরাজ চার্লসের পত্নী ক্যামিলা পার্কার বোল্স সেই ত্রিচক্রযানে সযত্নে হাত বুলাইয়া দিলেন, স্কটিশ ধনকুবের গ্যারেথ উড ৫৫ হাজার পাউন্ডে তাহা খরিদ করিয়া লইলেন। ইহাই প্রতিভার জয়। বাঙালি তারুণ্যের বিশ্বজয়!

এই বিশ্বজয়ে আনন্দের পাশাপাশি বাঙালির কিঞ্চিৎ ভয়ও মিশিয়া থাকিল। সব্যসাচীকে লইয়া ভয় নহে, কিন্তু দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি হইতে তিনি যে পথে উড়ান ধরিতে যান, সেই বিশ্ববঙ্গ সরণির (ইএম বাইপাসের নূতন নাম) সর্বাধিনায়িকাকে লইয়া ভয়। শুধু রাস্তা নহে। দিনাজপুরের চাল, দার্জিলিঙের চা, ধনেখালির শাড়ি সমন্বিত সরকারি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর্সও একই নামে খ্যাত। সব্যসাচীর ঘটনায় উদ্বুদ্ধ হইয়া মুখ্যমন্ত্রী এখন সেই সকল বিপণিতে অক্লেশে অটো রিকশা কেনাবেচার বন্দোবস্ত করিতে পারেন। সরণি, বিপণি, বিশ্ব, সবই অটোর মহাসমুদ্রে লীন হইবে। মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনে অটোর গায়ে বহুবিধ চিত্রাঞ্জলি ও কথাঞ্জলি রঙিন আখরে ছিটাইয়া দিবেন। যিনি সর্বাপেক্ষা সুন্দর অঞ্জলি অর্পণ করিবেন, প্রয়োজনে তাঁহাকে রাজকোষ হইতে অটোভূষণ, অটোবিভূষণ পুরস্কার দেওয়া যাইতে পারে। খয়রাতির মহাসমুদ্রে এক গন্ডূষ জল বাড়িলে দুর্জনেরা কত আর কুৎসা করিবে? কিন্তু তেলেভাজা শিল্পের পাশাপাশি অটোশিল্পও যথাযোগ্য সম্মান পাইবে। অটো রিকশা চালকদের বেশির ভাগ ইউনিয়নই লাল পতাকা ছাড়িয়া ঘাসফুলের শ্যামলিমাকে বরণ করিয়াছে, তাহাদের সমঝদারিত্ব কম নহে! খুচরো না থাকিলে নিরীহ যাত্রীকে কী ভাবে গালি দিতে ও মারধোর করিতে হয়, তাহা বহু আগেই তাঁহারা শহরের তৃণমূল স্তরে ব্যাপ্ত করিয়া দিয়াছেন। বেকার যুবকরা কেবল জলের গ্লাস ও ফাইল বহনের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মী হইবেন কেন? মুখ্যমন্ত্রী তাঁহাদের সবুজ পতাকা বহিবার পাশাপাশি অটোচালনার শক্তি দিতে পারেন।

অটো রিকশা নামক ত্রিচক্রযানটি কলকাতার নিজস্ব সম্পত্তি নহে। ঢাকায় বেবি ট্যাক্সি, ব্যাঙ্ককে টুকটুক ইত্যাদি বহুবিধ নামে সে আমজনতার প্রধান বাহন। সব্যসাচী তাঁহার অটোয় লাগাইয়া দেন রিকশার সাধারণ ভেঁপু। বসিবার আসনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও নীল বিদ্রোহের চিত্রণ। সঙ্গে পাকিস্তানি ট্রাকের আদলে বিচিত্র অলঙ্করণ। পপ আর্ট, ভারতীয় এথনিসিটি সব মিলিয়াই তৈরি হয় উত্তর-আধুনিক শিল্পকলার চমৎকৃতি। এইখানেই বিশ্বজয়। অটো রিকশার দুর্মুখ প্রতাপে, পাল্টি-খাওয়া ইউনিয়নবাজিতে বা বিশ্ববঙ্গ নামের বিপণিতে নহে। কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁহার ‘অটো-ক্র্যাটিক’ বুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়া প্রকৃত শিল্পবুদ্ধির আরাধনা করিবেন, এমন ভরসা কম।

য ৎ কি ঞ্চি ৎ

প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকার গোটা সম্পত্তিটাই দান করে দেবেন সৌদি আরবের এক ভদ্রলোক। গত বছর চিনের এক কোটিপতিও ঠিক এই কাজ করেছিলেন। এক মার্কিন ধনকুবের গত বছর জানিয়েছিলেন, তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য হল টাকা বিলিয়ে আস্তে আস্তে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া। এঁদের আত্মীয়স্বজন, বিশেষত ছেলেপুলে কী তেলেবেগুনেই না জ্বলছে, এই এক প্রশ্ন। তা ছাড়া, টাকাগুলো গ্রিসকে দিলে তো পারেন! আরও চিন্তার: ফতুর হয়ে যখন বেড়াবেন পথে, প্রতিবেশীরা ভিক্ষে দেবে তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE